দুপুর একটা চল্লিশের ঘণ্টা পড়তেই ক্লাসরুম জুড়ে হইহই। টিফিনটাইম। একটু পরেই স্কুলমাঠে শুরু হয়ে যাবে
ছোটাছুটি। দুটো দশের ঘন্টা পড়ার মুহূর্ত অবধি সবাই মেতে থাকবে খেলায়, টিফিন খাওয়ায়। অথচ বাবলু
নিঃস্পৃহভাবে দাঁড়িয়ে আছে ক্লাসের এককোণে। অন্যান্য দিন সে-ও এইসময় ছুটে বেরিয়ে যায় সহপাঠীদের সঙ্গে
– স্কুলের মাঠে দৌড়োদৌড়ি কিংবা নিছক গল্পগুজব করে মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে। ফোর্থ পিরিয়ডে
হেডমাস্টারমশাই প্রবোধবাবু ক্লাসে এসেছিলেন। বলেছেন – আগামী আঠাশ তারিখ স্কুলের পুরষ্কারপ্রদান
অনুষ্ঠানে সকলকে উপস্থিত থাকতে হবে। প্রতিটি ক্লাসের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানাধিকারি এবং বার্ষিক
ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জয়ী ছাত্রদের পুরস্কৃত করা হবে।
এছাড়া আছে আরও একটি বিশেষ পুরষ্কার। গত দুবছর ধরে এই পুরস্কারটি দেওয়া শুরু হয়েছে
প্রবোধবাবুর উদ্যোগে। যে ছাত্র স্কুলে সারা বছর উপস্থিত থাকবে সে – ও পাবে একটি পুরষ্কার।
বাবলু স্কুল অন্ত প্রাণ। একটা দিনও সে কামাই করার কথা ভাবতে পারে না। কিন্তু দুবছর আগে প্রবল
জ্বরে পড়ায় বেশ কিছুদিন ছুটি নিতে বাধ্য হয়েছিল সে। হাতছাড়া হয়েছিল মেডেল। কিন্তু গত বছর শরীর একদম
ঠিকঠাক থাকায় বাবলু একপ্রকার নিশ্চিত ছিল ক্লাসে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় না হতে পারলেও অন্তত সারা বছর
স্কুলে উপস্থিত থাকার পুরষ্কার সে পাবেই পাবে। স্কুলের নাম খোদাই করা ঐ গোল, সোনালি রঙের মেডেলটা
বাবলুকে খুব আকর্ষণ করে।
অক্টোবর মাস পর্যন্ত সবই ঠিকমতো চলেছিল। কিন্তু নভেম্বর মাসে বাবলুকে লম্বা ছুটি নিতেই হল।
নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পিতৃহারা হল বাবলু। আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ভোররাতে ঘুমের
মধ্যেই বাবার সেরিব্রাল অ্যাটাক।
স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাতেও প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থান পায়নি বাবলু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন