কবি শুভঙ্কর দাস
জন্ম। ৯ মে, ১৯৭৯
স্থান। বাসুদেবপুর,হলদিয়া,পূর্ব মেদিনীপুর
শিক্ষা। এম.এ ( বঙ্গভাষা ও সাহিত্য) , বি. এড.
পেশা।শিক্ষকতা, হলদিয়া গভঃ স্পনঃ বিবেকানন্দ বিদ্যাভবন
২০১৩ সালে আকাশবাণীতে কবিতা পাঠ।কবিতা-গল্প- সম্পাদিত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৭ টি।
সম্মান ও পুরস্কার
স্বপ্নখেয়া সৃজন সম্মান
শব্দসাঁকো সম্মান
কবিমন সৃজন সম্মান
হলদিয়া নজরুল আকাডেমির সম্মান
সুঋদ্ধি স্মারক সম্মান
ভারতীয় সাহিত্য অকাডেমির গ্রামালোক অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত।
স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক আবাস ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ( সিমলা) থেকে সম্মানিত।
কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচী রৌপ্য স্মারক সম্মান
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম ( খঞ্জনচক কৃষ্ণগঙ্গা আশ্রম) থেকে সম্মাননা।
শুধু দেখে ফেললেই
দেখা শেষ হয়ে যাবে বলে
চোখ দুটো ছুরিকাঘাতে অন্ধ করে ফেলে!
শুধু শরীরের অধিকারে
দিনরাত সমগ্রতার সাধ বাঁধলে
প্রতিটি অপরূপ অঙ্গ হয়ে ওঠে
কাঠের আসবাব!
অন্ধ হতে পারিনি,কাঠও দিইনি ছুঁড়ে
দিগন্ত,তোমার রূপ নয়,রঙ নয়,সচল তুলোর নগ্নতা নয়
শুধু হৃদয়-বেদনে পুড়ে পুড়ে
নিঃশেষে পড়ে থাকে,যেটুকু রক্ত-মাংস অথবা হলুদ-নুন!
তাতেই কবিজন্মযাত্রা আমার
দিগন্ত, তুমি আমার রাধা নও, শুদ্ধতম আগুন।
রঙরোদ
জীবনের যেকোনো সংজ্ঞায় শেষপর্যন্ত জীবনই এসে অপেক্ষা করে
অপর এক জীবনের কাছে
এর চেয়ে বড় রঙ হয় না।
সকলের হাতে থাকে না আয়না!
অন্যের মুখ দেখে নিজের মুখশ্রী বুঝে নিতে উষ্ণতায়,আনন্দে,আলোতে
কী আর চাইবে হাত পেতে?
নিজেকেই এমন রঙ করে তোলো আপন মনের ভেতরে,
যত আগুন আসুক,যত শোক আসুক অথবা শূন্য শ্মশান!
জেগে উঠুক প্রাণ,জেগে উঠুক প্রাণ!
শেষপর্যন্ত দুঃখের পাপড়ি,শোকের কু্ঁড়ি আর বিরহের বৃন্ত দিয়ে একটি ফুল
সুগন্ধি ও সাহস নিয়ে
মানুষের বুকের কাছে,চোখের কাছে ফুটে আছে
কাঁটাতার,হিন্দু-মুসলমান,এপার- ওপার
সব ভুল!
একটি নাম শিখর হিমাদ্রির,নজরুল।।
শরীরসংগীত
পোশাকের অভিধান খুলে দেখ
নগ্নতা কোনো নদী হয়ে আছে কি না!
আয়না কি সবকিছু জানে?
রক্ত-মাংসের শেষ কিনারা!
শুধু নিজেকে নিজের মধ্যে
রাতদিন ভাঙা আর গড়া!
নক্ষত্রের বিছানায় হোক বা নির্জনতার নাব্যতায়,
চুম্বনের চাঁদমালা হোক বা সুতোহীন স্বাদসমর্পণে, –––
হে শরীরসত্য,দিনরাত সব তো নিলে?
ছাই ওড়ার আগে জেনে নিও, সর্বনামে কতখানি 'আমি' হয়ে ছিলে?
খনন
কুরুক্ষেত্রের শেষ দৃশ্যে যে অস্ত্রটায় একটুও রক্তের দাগ লাগেনি,
তাই বুকের পাঁজর করে নেমে আসে সন্তান।
তাকে অবতার বলো না,তার জন্য কোনো লীলাকীর্তন রচনা করো না
অথবা কোনো অলৌকিক জীবনরচিত!
এমন এক চিতানো ইস্পাতবুক চাই
বুদ্ধআঁধারের মতো অন্যায়
হজরতঅসহ্য অত্যাচার
যীশুবিদ্ধ অসাম্য
যে অস্ত্রের রূপ করে আসুক না কেন, সংসারে,প্রেমে, গোপনে
অথবা প্রবৃত্তির আদিমতায়
মাটির মতো পেতে দেবে সন্তানের বুক
শতসহস্র অসুখেও কোনো পিতামাতা কুরুক্ষেত্র চায় না,খনন চায়
যাতে জল উঠুক,পিপাসার।
এক ভুবনের সন্ধানে
যে মূহুর্তে মাটি ছুঁয়েছিলে,মৃত্যু কোনো একটা ছেদ-যতির ভেতর
নিঃশব্দে ঢুকে পড়ে সেই সময়,
তুমি শিরোনামহীন,পরিচয়হীন, একা
এবং এতটাই পরনির্ভরশীল, যে হাতে নীরব রেখা,
পায়ে কয়েকটি সর্ষেফুল আর বুকের ভেতর জন্মঘড়ির ধুকপুকানি
কী করে জানবে কোথায় পথ শেষ,কোথায় আগুন অপেক্ষায়
আর কোথায় ছাই উড়ছে তোমারই অবয়বে!
কে জানে কবে জন্মের জয় হবে?
শুধু জন্মে গেছ,আর কি প্রাপ্তি আছে,শস্য,সাহস,
প্রেম বা ঈশ্বরের কাছে?
শেষ শ্বাসটুকু পৃথিবী,এই পৃথিবীর প্রাণ!
মরবে তো নিশ্চিত, তার আগে অনন্ত একজনের কাছে
যদি গোটা ভুবন হয়ে উঠতে পারো,
তবে তা সহস্র জন্মের সমান!
যেন ঘুম থেকে উঠে এলো,অ্যামিবা...
ইশারায় এগিয়ে গেলো ঘাসের ভেতর,ঘটে গেল পার্থিব পরিচয়
সহস্র সহস্র ঘুর্ণিজলে, থেমে গেল,হৃদয়
চোখের সামনে জলজ পর্দা,একটি গ্রহের মতো শ্বাসের আরতি ও আড়ম্বর
শুধু অলৌকিক স্পর্শে ডেকে উঠল, মা
সেই শুরু, তারপর বাহান্ন বর্ণের বর্ষ, বর্ষের ভেতর দিনকাল,কালের ভেতর মুহুর্ত
সবই সূর্যোদয়ের মতো স্বচ্ছ, সুন্দর
আমি তো বিশ্বজয় চাইনি,অমরত্ব চাইনি,চেয়েছি শুধু মায়ের আঁচল,তার ছায়া
জন্ম-জন্মান্তরে যা সোনার চেয়ে দামী,অনশ্বর মায়া!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন