শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

বিপ্লব চক্রবর্তী-র ঝুরোগল্প

শুভানুধ্যায়ী

বদনদার ফোন সক্কাল বেলা,"অলোক, এখন কেমন আছে শ্রীলেখা?
---ভালো, জ্বরটা  একদম সেরে গেছে।কোন অসুবিধা নেই দাদা।সব ওক্কে।আমি এখন একটা কাজে বের হব।
-- না না অত হাল্কা ভাবে নিস না ভাই, বৌমাকে জিজ্ঞেস কর, পেঁয়াজ রসুনের গন্ধ পাচ্ছে  কি না!জিভে স্বাদ পাচ্ছে কি না।গলার ভিতর ভারি ভারি লাগছে কি না!
---ওসব কোন সমস্যা নেই দাদা,স্বাদ পাচ্ছে, গন্ধ পাচ্ছে!পুরো সুস্থ। রান্নাঘর সামলাচ্ছে।এখন মাংস কসাচ্ছে।
কথা বলতে বলতে অলোকের হঠাৎ মনে হল, বদনদার পাল্লায় পড়ে গেছে, নিস্তার নেই। মাথা খারাপ করে দেবে।বদনদা সব বিষয়ে সিরিয়াস। সূক্ষ্ম বিষয়কে ভাবাতে ভাবাতে একটা জটিল পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেওয়াটাই ওনার কৃতিত্ব। পারতপক্ষে বদন দাকে আমাদের বন্ধু বান্ধবেরা কখনো সমস্যার কথা বলেন না। সমাধানতো দূরস্ত,সমস্যার অনেকগুলো মুখ বের করে মাঝরাস্তায় দাঁড় করিয়ে দেবে। দাঁড় করিয়ে দিয়েও ক্ষান্ত থাকেন না,সময়ে অসমেয়ে ফোন করে শুধু উপদেশ আর উপদেশ দিয়ে যাবেন।গতকাল সকালে ঘন্টার চায়ের দোকানে আড্ডা মারার সময় বন্ধুদের সামনে বলে ফেলেছিল শ্রীলেখার জ্বরের ব্যাপারটা। বাজারের ব্যাগ নিয়ে উঠে আসতেই বদনদা দোকানে ঢুকেছিল, বেশ মনে পড়ছে। সম্ভবত তখনই বদনদাকে চন্দন,বিনয়, সুকুমারের মধ্যে কেউ না কেউ নিশ্চয় বলেছে শ্রীলেখার জ্বরের কথাটা।কথা বলতে বলতে ভাবছে কিভাবে এড়ানো যায়।বদন দার ক্রমাগত অনুসন্ধান সমানে ফোনের অন্যপ্রান্ত থেকে চলছে। বলছেন, " --অত হালকা ভাবে নিস না ভাই, লবঙ্গ দিয়ে লিকার চা  দিনে অন্তত  সাতবার দিবি শ্রীলেখাকে।জোর করে খাওয়াবি।"
-- প্রয়োজনে শ্রীলেখা নিজেই করে খায় দাদা!
--না ভাই অত সহজে নিস না,মেয়ে আর তুই বৌমার থেকে দূরে থাকবি, বেশি প্রেম দেখাতে যাসনা।অন্তত চোদ্দো দিন তুই আর মেয়ে শ্রীলেখার ছায়া মাড়াবি না।
----আচ্ছা ঠিক আছে দাদা।বলছিলাম একটু ব্যাস্ত আছি, পরে না হয় ফোন করছি।
-- আর শোন ভাই ,পারলে ব্লাড নয়তো সোয়াপ দুটোর একটা টেষ্ট করিয়ে নে।ব্লাডে চব্বিশ ঘন্টায় রেজাল্ট পেয়ে যাবি,সোয়াপে একটু বেশি সময় লাগবে।আজই করে ফেল।তারপর অন্যকাজে যাবি।
---বুঝতে পেরেছি বদন দা, আমার বউ এর করোনা না হওয়া পর্যন্ত তোমার শান্তি নেই।
বলে ফোনটা কেটে দিলেন অলোক।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন