শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

সমরেন্দ্র বিশ্বাস-এর ঝুরোগল্প

হীরাকুঁদউৎপল সেন ও আমাদের অগ্রজেরা

জহর টাওয়ারের উপরেউঁচু থেকে দেখছিলামথই থই করছে বিস্ময়কর জলাধার ড্যামটার এ প্রান্ত থেকে চলে যাওয়া সুদীর্ঘ রাস্তাটা অদৃশ্য হয়ে গেছে ওপ্রান্তে পৌঁছানোর আগেইহীরাকুঁদ ড্যামটা সত্যিই বিস্ময়করস্বাধীনতার পরবর্তী ভারতবর্ষের একটা বিশাল নির্মাণএই নির্মাণে সামিল হয়েছিলো আমাদের অগ্রজ ও পূর্ব-পুরুষেরা

হঠাৎ যেন দেখলামবাঁধের উপর সরু রাস্তাটা দিয়ে হেঁটে আসছেন উৎপল সেন ও আরো কয়েকজন পূর্ব-পুরুষপাশে হাঁটছিলেন বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদ বিশ্বেসরাইয়া হীরাকুঁদ বাঁধটির নির্মাতা এনারাইশুধু ড্যাম নয়ওনারা এ দেশেটাকে একটু একটু করে নির্মান করছিলেন

পরে খেয়াল হলোওনারা তো কতদিন আগেই পরলোকগত হয়েছেন আসলে আমি ভুল দেখেছিলাম আরো কাছে আসতেই স্পষ্ট হলো ড্যামের উপর দিয়ে যারা হেঁটে আসছিলতারা ওনারা নন ওরা কতগুলো কর্মহীন পরিযায়ী শ্রমিক হয়তো রুজির সন্ধানে বেরিয়েছে রোজ ওদের খাবার জোটে নাওরা আমাদের এই দেশেরই মানুষ!

কিছুক্ষণ পরে জহর মিনারের উচ্চতা থেকে নেমে এলাম বসে আছি ড্যামের পাশে একটা পাথরের চাঁই এর উপর চওড়া নদীখাতে ছিটকে পড়া জলের শব্দ বিস্ময়ে দেখছিলাম হীরাকুদ ড্যাম!

বিকেল ফুরিয়ে আসছিলো কিছুক্ষণেই জায়গাটা জনশূন্য ড্যামের কিনারে খাড়া বিশাল দেয়াল তাতে চৌকো চৌকো খোপ দেখলামসন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে দেয়ালের সেই চৌকো চৌকো খোপগুলো থেকে বেরিয়ে এসেছে এক একটা মাথা এই বারে ভুল হয় নিঠিক চিনেছি মাথাগুলো আমাদের অগ্রজ প্রজন্ম উৎপল সেন আছেনপ্রযুক্তিবিদ এম বিশ্বেসরাইয়াও সেই মাথাগুলো হাত নেড়ে আমাকে বললোঅনেক ভালোবাসা আর পরিশ্রমে আমরা এই স্বাধীন দেশটাকে নির্মাণ করতে চেয়েছি কারণ তোমরা ভালো থাকবে আমাদের দেশটাও ভালো থাকবে

তক্ষুনি একটা বেখাপ্পা অন্ধকার আমার মাথায় চাটি মেরে প্রশ্ন করলো – বলো দেখিএ দেশে তোমরা কি সত্যি সত্যিই ভালো আছো?


 

২টি মন্তব্য:

  1. সমরেন্দ্র আমার প্রিয় কবি ! আর কবি যখন গল্প লেখেন, তখন সেটা হয়ে ওঠে অন্য অনুভবের গল্প - কবিতা !
    আর এই গল্পের উৎপল সেন, আমার পিতৃদেব ! সুতরাং অনন্য এই অনুভূতি !

    উত্তরমুছুন
  2. আপনার উপরের মন্তব্যটুকু পেয়ে খুব ভালো লাগলো।
    অনেক ধন্যবাদ, স্বপন সেনগুপ্ত দা।

    উত্তরমুছুন