হীরাকুঁদ, উৎপল সেন ও আমাদের অগ্রজেরা
জহর টাওয়ারের উপরে, উঁচু থেকে দেখছিলাম, থই থই করছে বিস্ময়কর জলাধার। ড্যামটার এ প্রান্ত থেকে চলে যাওয়া সুদীর্ঘ রাস্তাটা অদৃশ্য হয়ে গেছে। ওপ্রান্তে পৌঁছানোর আগেই! হীরাকুঁদ ড্যামটা সত্যিই বিস্ময়কর! স্বাধীনতার পরবর্তী ভারতবর্ষের একটা বিশাল নির্মাণ! এই নির্মাণে সামিল হয়েছিলো আমাদের অগ্রজ ও পূর্ব-পুরুষেরা।
হঠাৎ যেন দেখলাম, বাঁধের উপর সরু রাস্তাটা দিয়ে হেঁটে আসছেন উৎপল সেন ও আরো কয়েকজন পূর্ব-পুরুষ! পাশে হাঁটছিলেন বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদ বিশ্বেসরাইয়া। হীরাকুঁদ বাঁধটির নির্মাতা এনারাই! শুধু ড্যাম নয়, ওনারা এ দেশেটাকে একটু একটু করে নির্মান করছিলেন।
পরে খেয়াল হলো, ওনারা তো কতদিন আগেই পরলোকগত হয়েছেন। আসলে আমি ভুল দেখেছিলাম। আরো কাছে আসতেই স্পষ্ট হলো ড্যামের উপর দিয়ে যারা হেঁটে আসছিল, তারা ওনারা নন। ওরা কতগুলো কর্মহীন পরিযায়ী শ্রমিক। হয়তো রুজির সন্ধানে বেরিয়েছে। রোজ ওদের খাবার জোটে না! ওরা আমাদের এই দেশেরই মানুষ!
কিছুক্ষণ পরে জহর মিনারের উচ্চতা থেকে নেমে এলাম। বসে আছি ড্যামের পাশে। একটা পাথরের চাঁই এর উপর। চওড়া নদীখাতে ছিটকে পড়া জলের শব্দ। বিস্ময়ে দেখছিলাম হীরাকুদ ড্যাম!
বিকেল ফুরিয়ে আসছিলো। কিছুক্ষণেই জায়গাটা জনশূন্য। ড্যামের কিনারে খাড়া বিশাল দেয়াল। তাতে চৌকো চৌকো খোপ। দেখলাম, সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে দেয়ালের সেই চৌকো চৌকো খোপগুলো থেকে বেরিয়ে এসেছে এক একটা মাথা। এই বারে ভুল হয় নি; ঠিক চিনেছি। মাথাগুলো আমাদের অগ্রজ প্রজন্ম। উৎপল সেন আছেন! প্রযুক্তিবিদ এম বিশ্বেসরাইয়াও। সেই মাথাগুলো হাত নেড়ে আমাকে বললো, অনেক ভালোবাসা আর পরিশ্রমে আমরা এই স্বাধীন দেশটাকে নির্মাণ করতে চেয়েছি। কারণ তোমরা ভালো থাকবে। আমাদের দেশটাও ভালো থাকবে।
তক্ষুনি একটা বেখাপ্পা অন্ধকার আমার মাথায় চাটি মেরে প্রশ্ন করলো – বলো দেখি, এ দেশে তোমরা কি সত্যি সত্যিই ভালো আছো?
সমরেন্দ্র আমার প্রিয় কবি ! আর কবি যখন গল্প লেখেন, তখন সেটা হয়ে ওঠে অন্য অনুভবের গল্প - কবিতা !
উত্তরমুছুনআর এই গল্পের উৎপল সেন, আমার পিতৃদেব ! সুতরাং অনন্য এই অনুভূতি !
আপনার উপরের মন্তব্যটুকু পেয়ে খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ, স্বপন সেনগুপ্ত দা।