উকুন
শালুর চৈতমাস কি আর ভাদরমাস,মাথায় বারমাস্যা উকুন। শালু কাঁদে, ‘লোকের দেখ? কালে কালে ছায়ার মতন উড়িশগুলান মরেবাঁচে। এমন আমার কেনে হয় নাই ভগমান?’ শালুর মাথায় খোঁপা বাঁধতে বড় সাধ। পারেনা। ঝাঁকড়াচুলে শ্মশান ভৈরবীর মতন দেখায়। অনবরত কুটকুট কুটকুট। রক্তমাংস রস বাসনা কামনা সব খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে গো। তার পতি গোউর উকুনের জ্বালা সইতে না পেরে বলে মাথায় ঘোল ঢালিয়ে ন্যাড়া করে গাধার পিঠে চেপে রাধে রাধে করে বিবাগী হল। অবিশ্যি উকুন বাদে অন্য কারণ ছিল। এখন একা। অসহ্য কুটকুটানি শালুর নিঃসঙ্গতা বাড়িয়ে দেয়। মাঝরাতে ঝাঁকড়া চুল দুলিয়ে উন্মাদের মত নাচে, ‘তুই কেনে নদের গৌর হলি রে কামান্যা। গেলি গেলি আমাকে ন্যাড়া করে সঙ্গে লিয়ে গেলিনাই কেনে’।
কিন্তু শালুর ন্যাড়া হবার উপায় নাই। একে মেয়েমানুষ, তায় ভৈরবীমা। দীপ্ত সুন্দর মুখচোখ এলোচুল। কেন যে মানুষেরা ওকে সত্যিই ভৈরবী জ্ঞানে পূজা করে। ফলমূল দেয়। চাল ডাল সব্জি সিধে দেয়। শালু ভেবে পায়না। তবু শত শত উকুনের চুলে অবাধ ওঠানামা আর চুলে চিটিয়ে থাকা লাইনবন্দী বেহেট নিকগুলো (উকুনের ডিম) থাকতেও পেট চালাতে শালুকে চুল রাখতেই হয়। শালু সমর্থ থাকতে কেন গোউর লোকের ঘরের পুড়া(ছোটো মরাই) থেকে চাল চুরি করতে গেল? শালুর বড় অভিমান। গোউর শালুকে বেদম ভালোবাসতো। কিন্তু ছুঁকছুঁকে চোরটা তবু কেন ওকে ছেড়ে চলে গেল?
একবার আধবার ভুবনকাকার পুড়া ছ্যাঁদা করে চাল বের করেছে বলে এতো বড় শাস্তি? ঝাড়ফুঁকওলা ডাকিয়ে কুলোতে চাল ভরে মন্তর ফুঁকা, চালে সিঁদুর রেখে জনে জনে তাতে হাত রাখতে বলা। হাত রাখলেই নাকি চোরের বড় সর্বনাশ। তার প্রিয়জনের প্রাণনাশ হবেই।
তুই নদের গৌর হবি, সংসার ছাড়া কুল ছাড়া হবি। তাতে আমার কি হবেক না হবেক তোর কি যায় আসে রে খালভরা? তাও তুই মাঙ্গছাড়া হলি? তুই কেনে সিঁদুর চালে হাত রাখলি নাই? বুকে এত পীরিত রাখ্যে কেউ আউল বাউল সংসারত্যাগী হয়? শালু এক একটা চুল নোখ দিয়ে টেনে নিকগুলোকে নামায় আর অন্য নোখ দিয়ে পটাস পটাস মারতে থাকে।
মর মর। তরা আমারই ক্ষেতে আবাদ করে ধান ভানিয়ে চাল ঘরের পুড়ায় ঢুকালি। আমাদের অংশটাও দিলিনা আর আমরা হলাম চোর? দুটি চাল উ লিয়েছে ত এমন শাস্তি? এখন পাছে কোনো দোষ লাগে তাই রোজ আমাকে ডবল সিধা থালায় ভরে পৌঁছাচ্ছিস? মর মর।
আর গোউর মড়া কোন কাজের? আটবছর বিহা হল্য এখনো পেট হল্য নাই। ওই হুতুম ফিরিঅলা? অই যে জানলার উপারে হুলুক ভূলুক করছ্যে? শয়তানের কথা ভাবি ত শয়তান হাজির। ‘এ এ এ উকুন মা আ রা, তিলচটা মা রা ইঁদুর মারা আ আ’। মর কামান্যা ! ঘুরে ঘুরে আমার কাছেই কেনে আসিস? চোখ দেখ? আমার সারা অঙ্গ চাটছে। বলেছে একদিনেই উড়িশগুলার নিকাশ করবেক। তবে? না না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন