সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২

সুধাংশুরঞ্জন সাহা-র অনুবাদ কবিতা

 

সিমাস হিনি


মধ্যকালীন বিরাম

সারা সকাল আমি বসেছিলাম কলেজের

পীড়িত উপসাগরতীরে।

অপেক্ষায় ছিলাম ক্লাসশেষের মৃত্যুঘন্টার।

অবশেষে এক প্রতিবেশী আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।

 

বাড়ির গাড়ি-বারান্দায় ক্রন্দনরত বাবাকে পেলাম !

অন্তেষ্টির ব্যাপারে যে সবসময়েই এক পায়ে খাড়া।

বিগ জিম ইভান্স বলেন, এটাই মারাত্মক আঘাত।

 

বাচ্চারা কূজন করছিল, হাসছিল এবং 

এপাশ ওপাশ করছিল।

আমি ভেতরে ঢুকে খুব বিব্রতবোধ করি,

বয়স্ক লোকেরা দাঁড়িয়েছিলেন

আমার সঙ্গে হস্তমর্দন করার অপেক্ষায়।

 

ওঁরা বলেছিলেন, তোমার এই দুঃসময়ে আমরা পাশে আছি।

অপরিচিতদের ফিসফিসানিতে বুঝলাম

ক্লাসে আমি ছিলাম বয়োজ্যেষ্ঠ।

স্কুলের বাইরে আমার হাত থাকত মা- হাতে বন্দি।

 

কান্নাশূন্য রাগী চোখে আমি ফোঁপাচ্ছিলাম।

 

সকাল দশটায় বায়ুরোধী অ্যাম্বুলেন্স এলো,

সেবিকা দ্বারা ব্যাণ্ডেজ করা মা- মৃতদেহ নিয়ে।

পরের দিন সকালে আমি উপরের ঘরে গিয়ে দেখলাম,

তুষারবৃষ্টি আর মোমের আলোয় প্রশমিত শয্যাধার।

গত 'সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবার আমি তাকে দেখলাম।

খুবই বিবর্ণ !

 

তার খাটের মতো চার ফুট বাক্সের মধ্যে তার দেহ শায়িত।

তার বাঁদিকের অংশ যেন থেঁতলানো আফিম!

ক্ষতযুক্ত রুচিহীন জমকালো গাড়ির বাম্পারের ঝাঁকুনিতে যা স্পষ্ট।

 

নিথর একটা চার ফুট বাক্স, প্রতি বছরের জন্য নির্ধারিত!


​[​কবি সিমাস হিনি (Seamus Heaney)- জন্ম উত্তর আয়ারল্যান্ডে ১৯৩৯ সালে। তিনি একজন আইরিশ কবি। প্রথম জীবনে ফ্রীলান্স লেখালেখি প্রচারের কাজে যুক্ত ছিলেন, পরে অধ্যাপনা বহু পুরস্কারে সম্মানিত কবিতার জন্য পেয়েছেন Whit bread book of the year award ১৯৮৭ এবং ১৯৯৬ সালে এবং সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার  ১৯৯৫ সালে। তাঁর লেখায় বিশেষভাবে উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং ন্যায়বিচার তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-- Death of a Naturalist(1966), Wintering out(1972), The Haw Lantern (1987) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নোবেলজয়ী এই কবি ২০১৩ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন​।]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন