জেমস বলডুইন
শিরোনামহীন কবিতা
প্রভু
বৃষ্টি পাঠাও যখন
তখন এই ব্যাপারে ভেবো
একটু হলেও
ভুলে যেও না
জল ঝরার শব্দ শুনে
ঝরে পড়া জলের উপর
অপূর্ব আলোর বিচ্ছুরণে
আমি
সেই জলের তলায় আছি
সে প্রচন্ড বেগে ঝরে পড়ে
আর সেই আলো
আমাকে অন্ধ করে
দেখতে দেয় না আলোকে
যে দেয়
যদি দেবার আশা
যারা বেঁচে আছে তাদের ভালোবাসা হয়
তবে যে দেয় তার পাগল হবার ভয় আছে
দান করতে গিয়ে
এমন কিছু এক শিক্ষা আমার মনে হয়েছিল দেখেছিলাম
যে মুখগুলো আমাকে ঘিরে ছিল তাদের মধ্যে।
অভাবী, অন্ধ, নিরাশ, নিরুত্থিত,
কোন উপহার তাদের দিতে পারত দান নেবার যোগ্যতা?
যে দেয় সে তো কম লখছেঁড়া নয়
যারা দাও দাও বলে চেঁচায় তাদের চেয়ে।
তারা যদি তা দাবি করতে না পারে, যদি তা সেখানে নাই থাকে
যদি তাদের ফাঁকা আঙুল কেবল ফাঁকা বাতাসে আঘাত করে
আর যে দেয় সে হাঁটু মুড়ে প্রার্থনায় বসে
জানে যে ব্যর্থ তার সব দান
যে কোনো কিছুই কখনও সে যা ভেবেছিল তা ঠিক নয়
আর সে তার অপরাধী বিছানায় এপাশ ওপাশ করে
দাঁড়িয়ে থাকা উপোষী লক্ষ মানুষের দিকে তাকাতে
আর বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় স্বর্গকে অভিশাপ দিতে,
তবু তাকে বুঝতে হবে যে যাকে অনেক দেওয়া হয়েছে
তার কাছ থেকে অনেক নেওয়াও হবে, এবং সেটাই উচিতঃ
আমি বলতে পারব না কতখানি ঋণী আমি।
[আমার কোনো শৈশব ছিল না, ... আমার কোনো মানবিক পরিচয় ছিল না ... আমি ছিলাম মৃতজন্মা।
কথাগুলি বলেছিলেন জেমস বল্ডুইন (১৯২৪-৮৭)। অবিবাহিত মায়ের সন্তান জেমস কোনোদিন জানতে পারেননি তাঁর পিতৃপরিচয়। সৎ পিতা ডেভিড বল্ডুইনের সঙ্গে তাঁর চিরন্তন বিবাদ ছিল, মতানৈক্য ছিল। ডেভিডের বা-মা দুজনেই ক্রীতদাস জীবন থেকে এসেছিলেন, এবং তাঁদের সঙ্গে একই পরিবারে বড় হয়েছেন জেমস। তাই অন্য কৃষ্ণাঙ্গ লেখকের চেয়ে ক্রীতদাস জীবনের এবং আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ জীবনের বাস্তবতা সম্বন্ধে অনেক বেশি অবহিত ছিলেন জেমস।
লেখক হিসাবে জেমস বল্ডুইন খুবই সাফল্য অর্জন করেন, এবং উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক এবং কবিতা সব দিকেই তাঁর প্রতিভার ছাপ রাখেন। বিশেষ করে জাতিভেদ নিয়ে তাঁর চিন্তা মানুষের মনে অত্যন্ত বেশি ছাপ ফেলে। ছোটবেলা থেকেই তাঁর লেখার ক্ষমতা ও চিন্তাশক্তি স্কুলের শিক্ষকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে । স্কুল ম্যাগাজিনের সম্পাদক হিসেবেই তাঁর প্রথম সাহিত্যের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপিত হয়। কিন্তু হাইস্কুল ছেড়ে ১৯৪১ সালে বল্ডুইন পরিবারকে সাহায্য করবার জন্য কাজে যোগ দিতে বাধ্য হন।
১৯৪৮ সালে তিনি প্যারিস চলে যান, এবং আট বছর টানা সেখানে থাকেন। পরে কখনও আমেরিকা কখনও ফ্রান্সে তাঁর জীবন কেটেছে। ১৯৫৭ সালে দেশে ফিরে তখনকার সিভিল রাইটস আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন