যেন নীললোহিত
বেশ ছিলাম। মাথায় একরাশ কাশফুলের বন নিয়ে। মৃদু হাওয়ায় ফুরফুর করে নাচত। কী কুক্ষণে গ্যাস খেয়ে গেলাম, তাও শালির কাছে। চুম্নি একদিন বলল--জাঁইবাবু , আপনি এত ইয়াংলুকিং। মাথায় কলপ করেন না কেন? তা হলে তো কেউ আপনার বয়েস আন্দাজই করতে পারবে না। বয়েস আন্দাজ করতে পারলে কী ক্ষতি হয় তলিয়ে ভাবিনি। আমার শালি এতই বলশালী যে ওর কথায় নেচে সেলুনে গিয়ে অমন কাশের গুচ্ছকে দিলাম কালিমালিপ্ত করে। সাদার এক রকম সৌন্দর্য, কালোর আর এক রকম। অদলবদল হয় না। যারা এতদিন সমীহ করত তারা এখন চ্যাংড়ামো করে। যাই হোক দিন চলছে। যারা মুখ ফুটে জিগ্যেস করে তাদের তবু বা কিছু যুক্তি দেওয়া যায়। কিন্তু যারা শুধু তাকিয়ে থাকে, কিছুই জিগ্যেস করে না তাদের মনের হাসির নাগাল পাওয়া দায়।
একদিন বাসে উঠেছি। কলেজ স্ট্রিট মোড় থেকে টালিগঞ্জ। অনেকটা রাস্তা। বরিষ্ঠ নাগরিকদের সিটের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। অন্যদিন পটাপট অল্পবয়েসিরা ঊঠে দাঁড়ায়। আজ কেউ উঠল না। একজনকে মৃদুভাবে বললাম--ভাই সিটটা? সে বলল --এটা সিনিয়ার সিটিজেনদের জন্যে। আমি বলি-- আমি তো তাই। ছেলেটি আমার দিকে ঘুম ঘুম চোখে চেয়ে বলে--আপনি! কী করে বুঝবো? একজন পাকা মাথা সিনিয়ার সিটিজেন আগ বাড়িয়ে বলে ওঠেন--আজকাল আমাদের এই সিটগুলোর দিকে দেখি অনেকেরই নজর। আসলে নিশ্চিন্তে বসা যায় তো! আমি বলার চেষ্টা করি --না না আমি সত্যিই সিনিয়ার সিটিজেন। তিন বছর হল রিটায়ার করেছি। প্রথম ছেলেটা এবার বলে -- তা হলে তো আপনার আই কার্ডটা দেখতে হয়। আর এক বুড়ো বলে ওঠেন-- এভাবে অন্যের আই কার্ড তুমি দেখতে চাইতে পার না। সেটা কন্ডাকটার পারে , তাকে ডাক। কন্ডাকটার এলেন।-- দেখি আপনার আই কার্ড। আমি শশব্যস্ত। আই কার্ড তো সঙ্গে নেই। ছোকরাটা এবার বলে --তা হলে তো চিত্তির। থাকুন দাঁড়িয়ে। ইতিমধ্যে এক বৃদ্ধ অতি কষ্টে বাসে উঠে এলেন। তাঁর যে হাঁটুর ব্যথা না বলে দিলেও সেটা বোঝা যায়। তর্ককরা ছোকরাটি উঠে দাঁড়াল এবং একটু পরে নেমেও গেল।
আমি সারা রাস্তা দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে এক সময় টালিগঞ্জে নামলাম। হাঁটুতে যে একটু ব্যথা হচ্ছিল না তা নয় তবে গায়ে আমার পুলক লাগছিল । নীললোহিত মনে হল নিজেকে। আরে এই তো বেশ। সাতাশের বেশি বয়েস বাড়ে না। তেষট্টি পেরোনো মানুষকে সবাই অফিসের নিত্যযাত্রী ভাবছে এই বা মন্দ কী!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন