রসগোল্লা+বৃষ্টি+শহর
রসগোল্লাটা মুখে পুরে দিতেই বৃষ্টি শুরু হয় অথবা বৃষ্টি শুরু হতেই রসগোল্লাটা খেতে শুরু করি।
ভালো লাগার একটা কাঠিদৌড় শুরু হয়। বৃষ্টির লাবণ্য নিয়ে আমাদের বাড়তি একটা থৈ থৈ পক্ষপাতিত্ব মাত্রারিক্ত।
এই যেমন যে মেয়েটা পরিপাটি করে মাথা আঁচড়িয়েছে, তার যত্ন করা চুল যাবে ভিজে। যে মেয়েটা টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে ছুটছে কারখানায়, তার হেঁটে গেল চলত, এখন ছুটতে হবে মরণদশা ভিড়ের বাসের দিকে।
ঢাকা শহরে মেয়েদের বাস চড়া মানেই হলো কেউ না কেউ গায়ে হাত দেয়া। ঘামের গন্ধ এখন আর গায়ে লাগে না। সুপারভাইজার কারণে অকারণে চাকরি খাবার ভয় দেখায়। খাবার দিয়ে অন্তত আপাতত রক্ষা।
বৃষ্টি যে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকার নোংরা বের করে দিবে অথবা শুরু হবে অ+সহনীয় জলাবদ্ধতা; সেটা আর মাথায় থাকে না। সুস্বাদু খাবারের এই একটা নম্র প্রতাপ আছে।
এসএসসি পরীক্ষা সামনে তাতে কিছু আসে যায় না। সিটি কর্পোরেশনের নির্বচনী অফিসে গান বাজছে, বিবর্ণ চেহারার দুটো ছোট মেয়ে বেখাপ্পা নাচছে। লোকজন মজা নিচ্ছে। জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি ছবি তুলছে বা ভিডিও করছে। বৃষ্টির তিরে থেমে নেই কিছু।
কোন এক হুজুর কাজী নজরুলকে স্বপ্নে দেখেছেন তার ওয়াজ ভাইরাল হয়েছে। আরেক হুজুর ওয়াজ করছে করোনা টিকা দিলে নারীত্ব চলে যাবে। কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে মন বসছে না। কে যেন দরজায় খটখটাচ্ছে। কান ছুঁড়ে দিলাম বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে দরজার শব্দের দিকে।
দরজা খুলতে দেখি কমিশনার পদপ্রার্থী এক লোক ভোট চাইতে এসেছেন। যদি ঢাকা শহর থেকে ডেঙ্গু জ্বর, দুর্নীতি আর লুটপাট সরাতে চাই তাহলে যেন তাকে ভোট দিই। হবু কমিশনার দলেবলে চলে গেলেন। দরজা খুলে সেদিকে তাকিয়ে থাকি।
মানুষের আগমন আর প্রস্থানে পার্থক্য আছে। মুখে আর রসগোল্লাটা নেই, একবার মনে হলো আগমনের একটা সৌন্দর্য আছে, চলে যাবার মাঝে বিষণ্ণতা। আবার ভাবি সূর্যের মতোই এই আসা যাওয়া। আমার কাছ থেকে চলে যাওয়া মানে অন্য কারো কাছে আগমন।
তার মানে আসা যাওয়া নেই কোথাও। সবকিছু চলমান। বহতা।
টেবিলের উপর খবরের কাগজটা চোখে পড়ে। একবার মোটামুটি পড়েছি। কাগজটা তুলে খেলার পাতা উল্টাই।
একজন বয়াতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বয়াতির জায়গায় লালনকে বসিয়ে ভাবনা আসে রসগোল্লার স্বাদ, বৃষ্টি ঝাপটা সরিয়ে। আচ্ছা আগে কখনো কি কোন বাউল বয়াতি গ্রেফতার হয়েছে? মনে পড়ে না। খবরের কাগজে কার্টুনিস্ট কিশোরের কান্না মাখা মুখটা দেখে কষ্ট হচ্ছে।
বিস্কুট টেক্সট করেছে সে ক্যাম্পাস থেকে গা ঢাকা দিয়ে আছে। ওর নাম বেলাল। আমরা ওকে বিস্কুট বলে ডাকি। আমার বাসায় আসবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমে বড়ভাইদের টর্চার নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট করাতে বড় ভাইরা ওকে খুঁজছে। টেক্সট পড়ে একটা ভয়ের সুরলহরী ছড়িয়ে পড়ে আমাদের চারপাশে। ইলেকট্রিসিটি চলে গেল।
ছোট্ট করে একটা অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ল ঘরে।
পেপারটা আর পড়ছি না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন