মেশিন কাজ করছে। সকালের রোদ গায়ে মেখে মোবাইল-এ মেসেজ করছে শাপলা। ওলা ক্যাব্ বুকিং করল। দরজা লক্ করে বাইরে বেরিয়ে পড়ল সে। মেশিনের অসীম ক্ষমতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিফটে নিচে নামতে থাকল। তরঙ্গে তরঙ্গে শব্দ ভেসে আসছে। গলি সড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ি। অক্ষরধাম টেম্পল পেরিয়ে গেল। সামনে জ্যাম আছে, সুতরাং রুট বদল করতে হলো। মেশিন এত সমঝদার! উদাহরণ তৈরি করতে করতে এই দিনযাপন।
বেনারস ঘরানার গায়ক শৃঙ্গার রস পরিবেশন করছে। মারুবেহাগ, বেহাগ, রামকলি, নন্দ, শুদ্ধ কল্যাণ, রাগেশ্রী, বাগেশ্রী ইত্যাদি রাগ বেশি গাওয়া হয়ে থাকে। পন্ডিত রাজন মিশ্র এবং পন্ডিত সাজন মিশ্র পরিচালিত দেরাদুনের কাছে গুরুকুল ভিরাস। এখানে বেনারস গায়কির ট্রেনিং নিয়েছে শাপলা।
শাপলার মনে পড়ে যাচ্ছে বিশ্বখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয় শংকর কৃত শ্যাডো রামায়ণ। এক্ষেত্রে সমস্ত অভিনয় পর্দার পেছনে হতো। দর্শক শুধুমাত্র তাদের ছায়ানৃত্য অর্থাৎ শ্যাডোডান্স দেখত। যেন সারি সারি পুতুলনাচ, এই রকমই ক্লাসিক প্রোডাকসন।
মোবাইল রিং হচ্ছে। ‘হ্যালো, চন্দন...’ ফোন কেটে গেল।
যখনই কোনো উপন্যাস পড়া হয়, তার অ্যাকশন এবং ডায়ালগ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কোনো কোনো অংশ বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করে। কোথাও শব্দের সৌন্দর্যে বিহ্বলতা আবার কোথাও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ার উদ্যোগ কাজ করে। সময়ের তরী বেয়ে এখন প্রায় সমস্ত বই, জার্নাল নেটে পাওয়া যায়। সঙ্গে থাকে প্রিয় ল্যাপটপ-সঙ্গী। ই-বুক গোগ্রাসে পঠিত হয়। বর্তমান জেনারেশন পড়ে, এইভাবে মেশিনের সাহচর্যে উপভোগ্য হয়ে উঠছে এই সময়।
চিড়িয়াখানার পরিবেশে কত হাজার রকমের প্রজাতি জীবজন্তু পাখি বসবাস করছে। গাছপালা প্রকৃতির গভীর গহনে হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে। শাপলা আর চন্দন একের পর এক ছবি তুলছে।
আলোর বিস্তৃত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কিছু অংশই মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়। বাকি সব অধরা থেকে যায়। যেমন শব্দ তরঙ্গের কিছু অংশই মানুষের কর্ণে ধাক্কা দিতে সক্ষম। শাপলা ভাবছে।
মনের কাছাকাছি যে তরঙ্গ দোলে সেটা কতজন হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারে! মানুষই তো রকমারি মেশিন বানিয়েছে। মেশিন মানুষের থেকেও কর্মদক্ষতায় এগিয়ে। তবুও এখনও পর্যন্ত মেশিনের কাজকর্ম মানুষ চালনা করে। মেশিন এখনও মানুষের অধীনে। মেশিনের স্মার্ট কাজকর্মে জীবন আরও সাবলীল হয়ে উঠেছে। চন্দন আলোচনা করছে।
মোবাইল অন্ করতেই মেসেজের পর মেসেজ আসছে। টুইটারে পাখির কন্ঠস্বর টুইট্-টুইট্ স্বরে বাতাসে আলোড়ন তুলতে থাকে।
মেশিন ল্যাপটপ স্মার্টফোন সবকিছুকে করায়ত্ত করলেও বিশ্বভুবন আমাদের হাতের মুঠোয় ধরা দিলেও মানবমনের যে সৃজনশীলতা তা কখনো যন্ত্র ধরতে পারবে না বা মানব মনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারবেনা এই ভাবসত্যটাই ঝুরো গল্পটিতে প্রকাশ পেয়েছে । গল্পকারকে অসংখ্য শুভেচ্ছা ধন্যবাদ অভিনন্দন...
উত্তরমুছুনপুনশ্চ । গল্পটির আঙ্গিক শব্দ চয়ন উপস্থাপন শৈলী এক অপূর্ব রসোজ্জ্বলতা নিয়ে এসেছে যা গল্পকারের শক্তিশালী এবং পরিণত মনের ছাপ বহন করছে। তার এই পথ আরো আলোকিত হোক।
উত্তরমুছুন