শূন্যতার সুরে
কূল ছেড়ে এসে মাঝদরিয়ায় পিছনের পানে চাই----আমাদের কালের একটি বহুশ্রুত গান । কেউ বলে—এরকম চাইতে নেই, মনটা হু হু করে ওঠে । কেউ আবার বলে--- চাইতেই হয় নইলে কী করে বোঝা যাবে আমরা কোথায় ছিলাম আর কোথায় এলাম । কিন্তু এই চাওয়া সহজ নয় । চোখ ব্যথায় ফুলে ওঠে । মন কাঁদতে কাঁদতে নিস্তেজ হয়ে যায় । সবাই পাশে এসে দাঁড়ায় । বলে—সঙ্গে আছি । কিন্তু সঙ্গে কতদূর থাকা যায় ! আনন্দবিহার থেকে যখন চলে এলাম নিজের হাতে লাগানো কান্নাহাসির দোল দোলানো সেই মাথা ছাড়ানো ঝাউগাছটাকে তুলে আনতে পারিনি । তার কি কোনো রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার ছিল না ? তার সাথিটিকে বাঁচাতে পারিনি । মালী বলেছিল ---নিচে পাথর লেগেছে । হবেও বা । কিংবা এক তুমুল বর্ষার আন্দোলনের রাতে দীর্ঘকায় সন্তানবতী পেঁপেগাছটি পড়ো পড়ো । এক তরুণী কাজের মেয়েকে নিয়ে ভিজতে ভিজতে তার দেহে বাঁধন পরিয়ে সে-গাছটিকে বাঁচিয়ে রাখি । বর্ষার ধারাস্নানে সেই ময়নাপাড়ার মেয়েরও দেহের সমুদ্রে ওঠে বিপুল তরঙ্গ । ব্যক্তি চলে যায় । সেই বিপুল তরঙ্গও একদিন যায় থেমে । ব্যক্তির জীবনে স্তব্ধতা নামে । নানা গাছের তলা থেকে কুড়িয়ে আনা স্মৃতির ফলগুলি শুকিয়ে যায় । ব্যক্তির স্তব্ধতা জুড়ে জুড়ে তৈরি হয় জগতের কোলাহল । পুবের বারান্দায় আমার নীরবতাগুলো যাচাই করে দেখে নিতে আসে পাখির দল । তারা কোনো পরিচয়পত্র আনে না । যে আজ আসে সে-ই যে দু’বছর আগেও আসত আমার জানবার কোনো উপায় নেই । পাখি চলে যায়... ঘর চলে যায়...পথও । আমার আনন্দবিহার কোথাও এখনও আছে । আমার থেকে অনেক দূরে । ঘর তো কোথাও যেতে পারে না । মনের ভেতর থেকে চলে যায় ঘর । আমি নীল শূন্যতার সুরে স্তব্ধতার গান বাঁধি । লোকে তাকে অকর্মণ্যতা বলে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন