ছুঁচিবাইএর রাত
ভোরের সূর্যও যেন অষ্টাঙ্গ এঁটো করে দেয়,এই ভয়ে রোদ ওঠার পর বিছানা ছাড়ে ময়না। জল বাদে দুনিয়ার সবকিছুই বাসী,সকড়ি। পায়ের কাছে একটা বড় থালাতে জল থাকে। বিছানা থেকে সেটাতেই পা ডুবিয়ে নামে। রাতে পেচ্ছাপ পেলে উলঙ্গ হয়ে কোমর থেকে জল ঢালে। নাঃ তবে জীবন দুর্বিষহ নয়। ভালো লাগে ময়নার। জলের স্পর্শ তাকে শান্তি দেয়,সুরক্ষা দেয়। স্বামীর স্বভাব ঠিক জলের মত। তরল বুঝদার। রাতে ইচ্ছা তৃপ্তির পর দিব্যি চুপচাপ একপাশে শুয়ে থাকে। ময়না বাথরুমে গিয়ে আধঘণ্টা ধরে ঘৃণা ধুতে থাকে। ডাক্তার বলেছে পনেরোবছর হলো এইকারণেই বাচ্চা হচ্ছে না। কিন্তু ময়না পারেনা। স্বামীও চুপ। অতিথি এলে কিন্তু পরিশ্রম বাড়ে। ঘরে ঝি রাঁধুনি বারণ। অতিথির প্রস্থানে চামড়ায় মোড়া সোফা টেবিল রান্নাঘরের বাসন মেঝে সবেতেই জল ঢালতে ঢালতে দম বেরোয়। তাই এক ওই স্বামী ছাড়া আর কাউকে বরদাস্ত করতে পারেনা। অসহায় বুড়ি শাশুড়ি অভিশাপ দিতে দিতে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পর আত্মীয়স্বজন আর সম্পর্ক রাখে না। ময়না এতে খুব খুশি। কারোর নজর সইতে পারে না এখন। কেমন করে তাকায় সব? ভিতরের হাড় মাংস কলেজা খেয়ে ফেলবে যেন। এমনকি ফটোর শ্বশুর এমন তাকাতো যে সেটাও দূর করে ফেলে দিয়েছে ময়না। কেউ কেউ বলে, তুই দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছিস যে বড়? আজকাল স্বামী মিনমিন করে বলছে, তোমার ভেজা হাড়গুলো বড় খটখট লাগে। বা, রোজ বিছানার চাদর বালিশ কাচো কেন? ভেজা বিছানায় শুয়ে নিউমোনিয়া হয়েছিল আমার, মনে নেই? শুধু বিছানা নয়। ওই দূরের যত জানালা দেখা যায়, জোড়া জোড়া চোখ যেন ঘরটাকে চটতে থাকে। তাই ময়না দেওয়ালগুলোও মগের জল ছুঁড়ে ধোয়। কদিন ধরে স্বামীর মুখে মদের গন্ধ। খাবোনা, বলে একপাশে শুয়ে পড়ে। আহা! তরল মদ বইতো নয়? শান্ত নির্বিকার পুরুষ। এরচাইতে আর কী ভালো? ময়না অবাধে অন্ধকার ও জলের সাথে স্বাধীন রাত কাটায়। তবে আজ নয়। আজ রাতে নোংরা বাসীকাপড়ে কোন একটা বারোভাতারি ঢুকেছে ঘরে। স্বামীকে জাপটে ধরে বিছানায় বসেছে। স্বামীর মুখ থেকে তুবড়ির মত গাল ছুটছে। আজ থেকে ওই মেয়েটা রোজ রাতে আসবে। মেয়েটা পান খায়। থুকদানীটা সঙ্গে রেখেছে। যে লাঠি দিয়ে বাথরুমের নালী পরিষ্কার হয়,সেটা দিয়ে এই প্রথম দুঘা খেল ময়না। এতদিনের সযত্নে লালিত শৌচ হুহু করে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মদের নেশায় স্বামী মা মা বলে হাপুস নয়নে কাঁদছে আর তার রাখেইল নোংরাকাপড়ে চোখ মুছছে। ময়না নিজের চোখ মুছতে পারছেনা। চোখের জল অশুচি লাগছে। ওই মেয়েটার আগুন চোখ সহ্য হচ্ছে না। স্বামীর টুকরো টুকরো কথায় বুঝল, আজ শাশুড়ির দাহ কাজ হল। শ্মশান থেকে সোজা ঘরে এসেছে রাখনি সঙ্গে করে? তাহলে এই পৃথিবীতে কি আমি একা? আর কি হবে বেঁচে? এই ভাবতে ভাবতে ময়না একটা মোটা দড়ি সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে লাগল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন