বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১

সফিউন্নিসা-র ঝুরোগল্প

ছোবল

উত্তরের মাঠে এখনও সাঁঝ নামেনি। শনশনে হাওয়ায় শীতের ছোঁয়া। হেমন্তের শেষ বেলায় ধান কাটা তোলা শেষ। পায়ে বড্ড লাগে গোড়াগুলো। তাতে কী। আট বছরের টিকরি বেপরোয়া। কতটা দখল নিতে পারে তার জন‍্য মাঠময় ছুটে বেড়াচ্ছে  সে।

টিকরির ভাগ‍্যটা ভালো আজ। এক একটা গর্তে হাত ঢোকাচ্ছে আর এত এত ধান। ওর প্ল‍্যাস্টিকের গামলা প্রায় ভরে উঠেছে। দুটো দিন রোদ্দুরে রেখে যাঁতায় ডলে নিলেই চাল--সেই ভাত। আহ্ কী ঘেরাণ। বাতাসে ভাতের বাস পায় টিকরি।

ওর বাবা গেছে  খয়রাশোলের বিলে মাছ ধরতে। মাও ওই বাড়ে তিনকড়ির মাঠে। ওখানে ধেড়ে ইঁদুর অনেক। তাই আরও কজনের সঙ্গে ধরতে গেছে। মা ঠিক কায়দা করে ধরে নেবে দু একটা। ভাত আর মাংসআহ। আবার শ্বাস টানে টিকরি। 

ধান কাটার পর ক্ষেতের বড় বড় চালা (গর্ত)গুলো টিকরিদের জীবনে আশীর্বাদ। ধামসা ইঁদুরেরা তাদের রসদ জমা করে রাখে। সেখানে ভাগ বসায় এরা। মাঝে মাঝে বিপদ ঘটে না এমন নয়। ইঁদুর কিংবা লতার কামড়। ক্ষিদের কাছে অবশ‍্য তা কিছুই নয়। 

আলের ওপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছে টিকরি। সন্ধে নেমে এসেছে অনেকক্ষণ। পাশে রাখা গামলাভর্তি পাকা ধানগুলি আকাশের আলোয় ওর দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছে।

কিছুক্ষণ আগে বড় গর্তটায় হাত ঢোকাতেই তীব্র জ্বালা কব্জির ঠিক ওপরে। তারপর ওর আর কিছু মনে নেই। অনন্ত ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে সে শুধু ধোঁয়া ওঠা ভাত আর মাংসের ঘ্রাণ পেতে থাকে। 

রাত নামছে। একফালি চাঁদ অপলকে তাকিয়ে রয়েছে ওর স্বপ্নমাখা মুখের দিকে।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন