বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১

তরুণ মুখোপাধ‍্যায়-এর ঝুরোগল্প

ভীমরতি কিংবা ছলনা

আপনমনে হাসছিল পিয়ালি।

কুন্তক বলে, হঠাৎ কী হলো ? চোখ মটকে পিয়ালি বলে, জানো তো ট্রাক - অটোর পিছনে লেখা থাকে 'দেখবি আর জ্বলবি / লুচির মতো ফুলবি।' সেটাই হবে এবার।

------ মানে ?

------ ফেসবুকে তোমার আমার হনিমুনের ছবি পোস্ট করছি।

------ ভালো তো।

------ কিন্তু একজন দেখেই জ্বলবে রাগে, দুঃখে।

------ কে সে ? প্রেমিক নাকি ?

------ আছে, আছে। চোখ নাচিয়ে মুচকি হাসে পিয়ালি।

ঠিক তখনই তার মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। স্ক্রিনে চোখ রেখে , ঠোঁটে আঙুল দিয়ে পিয়ালি বলে, এ্যাই চুপ। আমার গানের স‍্যার ফোন করেছেন।

------ হ‍্যালো স‍্যার। কেমন আছেন ?

------ তোমার কী খবর বলো ? বিয়ের পরে সাড়াশব্দ পাই না। মনে হচ্ছে কপোত - কপোতী সুখেই আছো।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, আর সুখ ? কী যে বলেন স‍্যার।

------ সে কি ? এই তো দু' তিন মাস বিয়ে হলো। কিছু কি ঘটেছে ?

------ নাঃ, তেমন কিছু না। বাদ দিন। আমি আমিই।

------ এভাবে কেন বলছো। জানো, তোমার সঙ্গে কতদিন দেখা হয় না, কথা হয় না, ভালো লাগে না।

------ সে কি ! গান করেন না ? শেখান না ?

------ না, আর শেখাই না। গানেও অরুচি এসেছে।

------ স‍্যার, এমন করবেন না। গান তো আপনার প্রাণ

------ তা- নাকি ? আমি জানতাম তুমিই আমার প্রাণ।

পিয়ালি হিঃ হিঃ হাসে।

------ হাসি নয় পিউ। সত্যি তোমার জন্য বড্ড ভাবি।

------ জানি তো। আমি যে কী দমবন্ধ অবস্থায় আছি বোঝাতে পারব না স‍্যার।

------ সত‍্যিই ? পুজো কেমন কাটালে ?

------ আর পুজো। সেইসব দিন ভুলে যান।

এবার স‍্যারের গলা আবেগে, দুঃখে কেঁপে যায়।বলেন পিউ, তোমার এমন পরিণতি ভাবিনি। কীভাবে যে তোমার মুখে হাসি আনি ভাবছি। যাবো তোমার বাড়ি ? কত কথা জমে আছে। যাবো ?

------ না - না। পাগলামি করবেন না। পরে সব বলব। আজ ফোন রাখি। বা-ই।

কুন্তকের দিকে তাকিয়ে হেসে পিয়ালি বলে, কেমন দুঃখী মেয়ের ভাব দেখালাম, বলো ? উনি এটাই চান। ভাবেন, ওঁর সঙ্গে থাকলেই বুঝি আমি ভালো থাকতাম। বুড়ো হলে মানুষের কত যে কাণ্ড হয়।

স্বামী - স্ত্রী দুজনেই হাসতে হাসতে বলে ওঠে, ভীমরতি !


 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন