সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১

ঋতম্ মুখোপাধ্যায়-এর অনুবাদ কবিতা

এলিজাবেথ বিশপ


ক্যাসাবিয়াঙ্কা

(অনুবাদ  টীকা : ঋতম্‌ মুখোপাধ্যায়)

জ্বলন্ত জাহাজের ডেকে দাঁড়ানো ছেলেটিই প্রেম,

চেষ্টা করে আবৃত্তি করতে : “ যে ছেলেটি দাঁড়িয়ে

জ্বলন্ত ডেকেরপরে  ভালোবাসাই সন্তান

অথচ তোতলামি গ্রাস করে তার সে বাগ্মিতা

যখন দুর্ভাগা জাহাজের ঘটে যায় আগ্নেয়-সমাধি।

 

ভালোবাসা হলো সেই একগুঁয়ে ছেলে, ওই যে জাহাজ,

এমনকি সন্তরণরত নাবিকেরাও, যারা

বেছে নেয় বিদ্যালয়কক্ষের ভূমি ;  

অথবা জাহাজের ডেকে থাকার জন্য

দেওয়া কোনো অজুহাত। আর ভালোবাসা সেই বহ্নিত বালক।  




[এলিজাবেথ বিশপ (১৯১১-১৯৭৯) আমেরিকার একজন উল্লেখযোগ্য আধুনিক কবি, গল্পকার অনুবাদক। নারীচেতনা তাঁর কবিতার অন্যতম প্রধান সুর। বিশেষভাবে আঙ্গিক-সচেতন বস্তুনিষ্ঠ তাঁর কবিতা। পেশা ছিল বিভিন্ন উচ্চশিক্ষালয়ে কবিতার অধ্যাপনা, আটষট্টি বছরের জীবৎকালে পুলিৎজার সহ আমেরিকার সব প্রধান সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেছিলেন তিনি। প্রণয়জীবন সুখের ছিল না, কেউ কেউ তাঁকে সমকামীও বলেছেন।  ‘Casabiancaনামক আদি কবিতাটি ফেলিসিয়া হিম্যান্সের লেখা, যা ১৮২৬ সালে মাসিকপত্রে প্রকাশ পায়। ইংলণ্ডে সেকালে খুব জনপ্রিয় একটি কবিতা এটি, যা সে সময় স্কুলে স্কুলে পাঠ্য ছিল আবৃত্তি করানো হতো। এর পিছনে ১৭৯৮ সালের একটি সত্য ঘটনা ছিল, সেখানে একটি তেরো বছরের ছেলে যুদ্ধজাহাজে আগুন লেগে মারা যায়। এই বীরত্ব পিতৃ-আনুগত্যের কবিতাটি ১২০ বছর পর ১৯৪৬- বিশপের হাতে পুনর্লিখিত হয়, যা এলিজাবেথ বিশপেরকমপ্লিট পোয়েমস্‌ (১৯৭৯)- পাওয়া যায় এবং ইন্টারনেটেও সহজলভ্য। নতুন কবিতাটিতে সেই স্কুলে আবৃত্তির রেফারেন্স স্পষ্টভাবে এসেছে। এইস্কুলরুম প্ল্যাটফর্ম’- যেন একালের ক্যাসাবিয়াঙ্কারবার্নিং ডেক সেইসঙ্গে প্রেম শব্দটিকে বারংবার ব্যবহার করে কবি কোনো প্রেমের কবিতা রচনা করেননি, বরং বীররসাত্মক কবিতার রোম্যান্টিক মেজাজকে ছুঁতে চেয়েছেন। হিম্যান্সের কবিতা যখন বাবা-ছেলের ভালোবাসা এবং যুদ্ধে এক নিরপরাধের মৃত্যুকে বড় করে তোলে, সেখানে বিশপের কবিতায় বেদনাময় প্রেমের ভাবটিই সামগ্রিকভাবে মুখ্য হয়ে উঠেছে। বিষয় প্রেক্ষিত এক হলেও দুটি কবিতা দৃষ্টিকোণের ভিন্নতায় স্বতন্ত্র, যদিও তারা পরিপূরক। একে থীম-পরম্পরার চমৎকার উদাহরণ বলা চলে।]



 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন