তরুণ মুখোপাধ্যায় (জন্ম. ১৯৫৬) কবি ও প্রাবন্ধিক। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন ষোলো বছর, পড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গেরএকাধিক সরকারি কলেজেও। তিনি কাব্য-কবিতা, নাটক, তুলনামূলক সাহিত্য ও নন্দনতত্ত্ব চর্চায় বিশেষ আগ্রহী। এ-যাবৎ প্রকাশিত মৌলিক ও সম্পাদিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ২০০। ‘বাংলা কাব্যনাট্য : রূপ ও রীতি’ নিয়ে অধ্যাপক অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি পান ১৯৯১ সালে। তাঁর নিরলস সাহিত্যচর্চার জন্য পেয়েছেন আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন স্মারক সুবর্ণপদক, বাসভূমি পত্রিকা জীবনকৃতি ইত্যাদি একাধিক বেসরকারি পুরস্কার। এছাড়াও ‘মহাদিগন্ত’, ‘সৃজন’, ‘বাসভূমি’ ইত্যাদি পত্রিকা তাঁকে সেরা প্রাবন্ধিকের সম্মানে সম্মানিত করেছে। হুগ্লি জেলার চন্দননগরে স্বগৃহে থাকেন; অবসরযাপন : রবীন্দ্রসংগীত শোনা ও কবিতা পড়া।
প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবে সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করলেও তরুণ মুখোপাধ্যায় আজও মনেপ্রাণে কবি। শৈশবে কবিতা লেখার শুরু। সত্তরের উত্তাল সময়ে তাঁর প্রথম কাব্য ‘যে নিঃসঙ্গতায় আমি আত্মঘাতী’(১৯৭৭) প্রকাশিত হয়। বহরমপুরের রৌরব পত্রিকা গোষ্ঠীর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। প্রকাশিত কাব্যের সংখ্যা পঞ্চাশের কাছাকাছি। প্রেম ও প্রতিবাদ তাঁর কবিতার মূল সুর; বিষাদ আর বিদ্রুপের তিক্ত মেজাজও তাঁর কবিতায় সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্য : নিজস্ব দর্পণে দু’জন; ও আমার সর্বনাশ, ও আমার সর্বস্ব; বালিশে স্বপ্নের দাগ; আত্মপুরাণ ও অন্যান্য কবিতা; যে জীবন শালিখের, দোয়েলের; খ্যাপা খুঁজে ফেরে; ভুল প্রেমের কবিতা এবং অর্ফিয়ুস; মিঃ কাম্যু, আপনি বলুন ইত্যাদি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে করা অনুবাদ-কবিতার সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে : রডোডেনড্রনগুচ্ছ, বুলগেরিয়ার গোলাপ ও অন্যান্য, এমিলি ডিকিনসন : কবি ও কবিতা ইত্যাদি।
নোনা ভালোবাসা
আমার জন্যে ওমলেট বানাবে –––
তাই
লাল মেঝের উপর উবু হয়ে বসে আছো
ধারালো বঁটির সামনে,
সন্তর্পণে পেঁয়াজ কাটছো
তীব্র ঝাঁজে দুই চোখে জল;
হেসে বললে, দ্যাখো দ্যাখো
আমার দু’চোখ ভরা জল
যা কোনদিন তুমি দ্যাখোনি;
ভেবেছ আমাকে নিঠুরা, উদাসীনা......
আমি শান্ত পায়ে তোমার সামনে দাঁড়াই
আমার চোখে ঝলসে ওঠে
ধারালো বঁটি আর বুকের বিভাজিকা;
নিচু হই, আরো নিচু; তারপর
দু’আঙ্গুলে মুছে দিই নোনা জলরেখা,
ঠোঁট ছুঁয়ে দেখি –––
অচেনা আকাশ
একদিন তুমি বলেছিলে, পাশে আছি; ভয় কি?
জানো, ‘রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে’ –––
পরম বিশ্বাসে কেটে গেছে কত বর্ষা, কত বসন্ত;
হঠাৎ আজ আকাশে তাকিয়ে দেখি
সব তারা সেখানে নেই।
যে-উজ্জ্বল তারার গায়ে আমি লিখেছিলাম
তোমার নাম : রাত্রিকা
––– কোন কৃষ্ণগহ্বরে কে হারালো?
আকাশের বুক থেকে কে ছিনিয়ে নিলো তাকে?
আমার হাহাকার আজ তুমি
শুধু নিরুত্তর হাসিমুখে
আলতো নরম পায়ে হেঁটে যাও আরেক আকাশে!
কালবেলা
১
শহর, হে ধূসর শহর শুনতে কি পাও
কালের যাত্রার ধ্বনি আর
তালিবান পায়ের শব্দ?
বিষণ্ণ নাবিকের গান শুনি মধুগন্ধবায়ে –––
নারী আর শিশু কাঁদে জল্লাদের পায়ে!
২
আর ক’দশক পরেই শেষ হবে একুশ শতক –––
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তরতর করে মহাবিশ্বে
এগিয়ে যাবে বহুদূর;
শুধু মানুষের পৃথিবী বদলাবে না কখনো
বদলাবে না মানুষের মতিগতি;
ভোরের কাগজ খুললেই
খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, লুঠ, দুর্নীতি
শব্দগুলো রক্তবীজের মতো হাসবে;
আর কিছু নেপো নিয়মিত খেয়ে যাবে
অন্যের বরাদ্দ দই।
দাবি অন্তহীন
উদাসী হাওয়ায় কলকাতার পথে পথে
কত প্রাণ ঝরে পড়ে
অনশনে, ক্ষোভে, বেদনায় –––
আষাঢ়ের কালো মেঘে ঝলসায়
যন্ত্রণার বিদ্যুৎ
––– কেউ দ্যাখে, কেউ তা দ্যাখে না।
#à
ওদিকে সতর্ক রাজপ্রহরীরা আসে অস্ত্রহাতে
চিৎকৃত গলা চেপে ধরে
মুঠোবন্দী হাত ভেঙে দেয়;
বুকের উপরে হেঁটে যায় কালো কালো বুট।
#à
বৃষ্টি ও রক্তপাত অবিশ্রাম, তবু
ঝড়ের গর্জন
বজ্ররব
প্রতিবাদ
প্রতিরোধ
অন্তহীন
: আমাদের দাবি মানতেই হবে!
শুধু সর্বরিক্ত প্রেমিকের হাহাকার নয়,একই সঙ্গে অনুভব করলাম বিদ্রুপের কশাঘাত,
উত্তরমুছুনDarun lekhagulo.. Arr uni amr khub khub priyo 1jon manush
উত্তরমুছুন