ছায়ামূর্তি
ছায়ামূর্তিটি সঙ্গে সঙ্গেই আসছিল । বেশ বুঝতে পারছিলাম । এখন হেমন্তকাল । তাড়াতাড়ি সন্ধে নেমে যায় । বাসস্ট্যান্ডে নেমেই ঘুরঘুট্টি অন্ধকার দেখতে পেয়েছিলাম । একে তো আসন্ন শীতের ছোটোদিনের বেলা , তার ওপর আবার এদিকটায় লোডশেডিং চলছে । লোডশেডিং এখন খুব কম হয় , অন্তত আশির দশকের থেকে অনেকগুণ কম । একেবারে অন্ধকারে রাস্তা চলার অনেক অসুবিধা । খানাখন্দে পা পড়তে পারে । গোরু কুকুর রাস্তায় শুয়ে থাকতে পারে । উলটো দিক থেকে আসা লোকের সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারে । বাসস্ট্যান্ডের দোকানগুলো খোলা ছিল । চা পানসিগ্রেট বিক্রি হচ্ছে । সেরকম একটা দোকান থেকে একটা দেশলাই-এর প্যাকেট কিনলাম । একটা করে কাঠি জ্বালি । যতক্ষণ আগুনটা জ্বলে পথ চলি । নিভে গেলে দাঁড়িয়ে পড়ি । আবার একটা কাঠি জ্বালি । এভাবে এগোতে থাকি । আর তখনই খেয়াল করি একটা ছায়ামূর্তি । পেছন পেছন আসছে । প্রথমে মনে হল আমার নিজেরই ছায়া । তারপর মনে হল অন্ধকারে কী ছায়া পড়ে ! আমাকে এখনো বেশ কিছুটা পথ হেঁটে যেতে হবে । যাচ্ছি পিসির বাড়ি । পিসির সংসারে খুব একটা কেউ নেই । থাকলেও তারা কেউ পিসির খবর – টবর নেয় না । পিসি আমায় আসতে বলেছিল । কাল কোন্ এক উকিল আসবে উইল বানানোর জন্য । পিসির নামে বাড়ি আছে একটা । আর যা যা আছে তার একটা বিলিব্যবস্থা করে যেতে চায় । আমাকে দিনে দিনেই আসতে বলেছিল । কিন্তু আমি অন্য কাজে আঁটকে পড়ায় সেই সন্ধেই নেমে গেল ।
ভূতের ভয় করি না , কিন্তু ছায়ামূর্তিটাকে সমানে আসতে দেখে একবার প্রাণটা যেন ছ্যাঁত করে উঠল । আমি সাহস করে তার দিকে এগিয়ে গেলাম । দেখলাম সে-ও দাঁড়িয়ে পড়ল । সাহস সঞ্চয় করে তাকে জিজ্ঞেস করে বসলাম – আপনি দয়া করে এগিয়ে যান । আমার পেছন পেছন আসবেন না । আমার অস্বস্তি হচ্ছে ।
লোকটি আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে আমাকেই পাল্টা প্রশ্ন করে বসল -- আপনি তো অনুরাধা ম্যাডামের বাড়ি যাবেন ? পিসি স্থানীয় স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন । তাই ম্যাডাম রায়কে সবাই চেনে । কিন্তু আমি যে ওখানেই যাচ্ছি সে কথা এ লোকটি জানল কী করে ? আমি তাই তাকে আবার জিজ্ঞেস করে বসলাম --- আপনি সে কথা কী করে জানলেন ? লোকটির অদ্ভুত স্বভাব । প্রশ্ন করলে উত্তর দেয় না । সে আবার আমার কাছে জানতে চাইল --আপনি কিছুদিন পিসির স্কুলে পড়েছিলেন । আপনার এক ক্লাসমেট ছিল দীপ্তা নামে । এবার আমার একটু উৎসাহ জাগল । মনে হল লোকটা স্থানীয় তাই অনেক খবর রাখে । বললাম—দীপ্তা এখন কোথায় আছে জানেন ? সে এবারও আমার কথার জবাব না দিয়ে বলল -- দীপ্তা তো আপনাকে খুব ভালো বাসত । আপনি ওকে বিয়ে করলেন না কেন ? আমি এবার ওর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলাম না । সে আবার বলে উঠল --- মাঝখান থেকে আপনি বড়মুখ করে দীপ্তার কথা আপনার স্ত্রীকে বলতে গেলেন । আর তাই আপনার স্ত্রী আপনাকে আজও সন্দেহ করে সেটা কি আপনি জানেন ?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন