শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

সুবল দত্ত-র ঝুরোগল্প


মাংসখেকো                       

সুখাসনে বসে শালগ্রাম শিলার দিকে তাকিয়ে পবিত্র কোশাকুশির জলে হাত রেখেও কেন যে জানিনা বুড়ির ওই কথাটা মাথায় ভাঙা রেকর্ডের মতো বাজে স্বামী সুখবোধানন্দ বারবার মাথা ঝাঁকান অবাধ্য মাছির মত বুড়ির ওই কথাটা বারবার ভনভন করে মাথার ভিতরে বসে প্রায় কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, চামের(চামড়ারমু(মুখ)মাংস খাব বইলছেনা খাল্যে পাপ হব্যাক নাই?’ শিথিল হয়ে যায় হাত ঈশ্বরকে পুষ্প অর্ঘ দিতে গিয়ে উল্টো ঝুলিয়ে রাখা চামড়া ছাড়ানো ছাগ শিশুর দৃশ্য চোখে ভাসে এর থেকে কি পরিত্রাণ নেই?

মঠের উপাধ্যক্ষ তিনি ঈশ্বর  মানব সেবায় ব্রতী যারা ব্রাহ্মণ,তাঁরা হলেন দ্বিজ, দুবার জন্ম কিন্তু আমিতো সে হিসেবে ত্রিজ? ভাবলেন স্বামী মহারাজ আজ তিরিশ বছর আগের কথা আমি ছিলাম গৃহস্থি পিতৃহারা বউ, তার মায়ের কোনো কূলে কেউ নেই, তাই তিনিও সংসারের একজন ছিলেন জানিনা তাঁর কুকুরে দাঁত দুটো বড় থাকার দরুণ বা তাঁর তামসিক ব্যবহারের জন্যেই হোক তিনি খুব কচি পাঁঠার মাংস খেতে আবদার করতেন আমি ছিলাম কালী মন্দিরের পূজারী মাঝে মাঝেই পাঁঠা বলি হতো কাটা মুন্ডুটা আনতাম ঘরে আমার রুচি ছিলনা, উনিই বেশি খেতেন এমনকি কানগুলো পুড়িয়ে নুন তেল মেখে খেতেন বলতেন কানের কহা(কানের ভিতরের আঠাথাইকল্যে আরঅ সুয়াদ(স্বাদলাগে জামাই ছেলেপুলে নেই, সংসার ভালোই চলছিল একদিন দারোগার মেয়ের বিয়েতে নেমন্তন্ন গ্রামের সকলের মেয়ে মায়ের ঝগড়াতে নেমন্তন্ন ঘরে যেতে দেরি অঢেল মাংসের আয়োজন কিন্তু শেষে টানাটানি পড়ল খেতে বসেছি পঞ্চম ব্যাচে আমরা তিনজন আমার শাশুড়ির উত্কণ্ঠা শেষ, মাংস এবার পাতে পড়বে যত চাই দারোগাবাবু নিজে এসে তদারকি করতে করতে একজনকে বললেন, আর দুটো কাটতে পারলে না? এখনো অনেকজনের খাওয়া বাকি  কি করব্য হুজুর? ধইরতেই পাছি নাই বড় কামড়াত্যে আসে আর বড় ভুকে আমার বউ তখন হাড়ের নলি চুষে লহু খাচ্ছিল শুনেই বিষম খেয়ে হাড় সটান গলায় আটকে গেল আমার শাশুড়ির গাল ভর্তি মাংস মুখ থেকে একটুকরো মাংসের হাড় বের করে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আবার এক হাত মাংস মুখে পুরলেন উনি খাচ্ছিলেন আর ওনার মেয়ে তখন মৃত্যু পথযাত্রী দুদিনপর আমি বিপত্নীক হলাম  বছর পর এই মঠে

উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোনোমতে নিত্যপূজো সারলেন শাশুড়ি মঠের বাইরে আলাদা একটা ঘরে আছেন একেবারেই শয্যাশায়ী কিন্তু ডাক্তারের বারণ সত্ত্বেও চর্বিওলা মাংস তাঁর চাই স্বামিজী ওনার ঘরে একেবারেই যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন বিকেল অব্দি না না করে শেষ অব্দি সিদ্ধান্ত নিলেন সন্ধেবেলায় যাবেনই উনি এখন মৃত্যুশয্যায় মাস মাইনের একজন দাই দিনের বেলায় ওনার সেবা করে

স্বামী মহারাজ ঘরে ঢুকতেই একটা কাঁচা আমিষী দুর্গন্ধে মাথা ঘুরে গেল উনি মাথার কাছে বসে একটা টিফিন কৌটো খুলে বড় একটা কষা মাংসের চর্বি বের করে ওনার হাঁ মুখে দিলেন মুখ চোখ খোলা আর বন্ধ হলোনা

1 টি মন্তব্য: