শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

বিদ্যুৎলেখা ঘোষ-এর ঝুরোগল্প


ইলেকশান

ঢেউ আসে ঢেউ যায় যতই তুমি করো না কিংবা মরো না কেন , চলছে , হাসপাতালের পর হাসপাতাল দেশ থেকে দেশান্তরের অন্তিম সংস্কার উস্কে দেওয়া ধর্মাচরণ লোকসভা অস্ত্র মজুত রাখার জন্য মরিয়া চেষ্টা মঞ্জুর শাশুড়ির হেলদোল নেই তাতে দিব্যি আছে নাতি নাতনী ছেলে বৌমার সঙ্গে ভরা সংসারে। তর্জনীর নখে এখনো লোকসভা উঁকি মারছে আর একবার নখ কাটলে ঘুচে যাবে শেষ আভাসটুকু।  এরকম আঙুল কালো করা ব্যাপার হয়েই যায় কাঁচা কলা , মোচা এসব কুটনো কোটার সময়। পুকুরে ঘাটের পাশ থেকে মাটি খুবলে নিয়ে হাত ঘসে ঘসে ধুয়ে ফেললেই আবার সব পরিষ্কার। এইসব মহামারী ডলে ধুয়ে ফেলার যদি সেরকম কিছু উপায় থাকতো মরে গেলে শেষবারের মতো নিজের ভিটেটুকু শেষবার দেখে যাওয়ার অনুমতি পর্যন্ত নেই।কেউ ছুঁয়েওদেখবে না।একটা জিনিস বেশ লাগে। অক্ষণে কুক্ষণে হুট করে কুটুম আসার ব্যাপার নেই।‌  

 

পাতে মাছ তরকারি গরম গরম পাওয়া যাচ্ছে।গাঁ ঘরের প্রৌঢ়া বিধবা হলেও এই মহামারীতে মাংসও পড়ছে পাতে। কিন্তু শরীরটা এতকিছুতেও ঠিক যুতের লাগছে না। আস্তে আস্তে হাঁফ ধরছে। ধারে কাছেও কেউ আসছে না খাবার দেওয়ার সময়টুকু ছাড়া। নাতি নাতনীর কাছে বায়না করে ওদের কচি নরম হাতের চাপ পেলে পিঠটা কোমরটা একটু আরাম পেতো। কিন্তু কী যে একটা রোগ এলো পৃথিবী জুড়ে সবাইকে একঘরে করে রেখেছে। ভারি বিরক্তিকর ঠেকছে ক্রমশ। 

বৌমা' বেশ মজা। শাশুড়ির সেবাযত্ন দূর থেকেই সেরে ফেলছে কাছে থাকলে শাশুড়ি তাকে নানা অছিলায় ফাইফরমাস খাটাতে পারতো।

 

বৌমা না হয় পরের মেয়ে। কিন্তু ছেলেটা তো পেটের। সে কেন আসছে না ধারেপাশে। জামগাছের নিচে দালানঘরে ওরা বেশ সুখেই আছে এধারে বুড়ি মা'কে   আলাদা ঘরে ফেলে রেখে। বিছানা থেকে আর উঠে বসতে ইচ্ছে করছে না। বুকের ভেতর কেঁপে কেঁপে উঠছে। দিন কি ফুরিয়ে এলো! এই ঘরদোর, এই সানের ঘাট, এই জামরুল সবেদাতলা, খেত ভরা নটেশাক সবকিছু ফেলে রেখে যেতে হবে! তারপর তো বৌমার জমিদারী। ওর গুষ্টি এসে পুকুরের বড় কাতলার ঝোল ঝাল মুড়োঘন্ট তারিয়ে খাবে

 

পুকুর থেকে এবেলা পাকা শোলমাছ ধরেছে ছেলে। দালানঘর থেকে বৌমার বাপের গলা শোনা যাচ্ছে যেন। বুড়ি একগাল হেসে হঠাৎ করে উঠে বসলো বিছানায়। ভাবখানা যেন চলে যাওয়ার আগে ছেলে বৌমার সুখের কথা ভেবে বেশ সুখ অনুভব হচ্ছে তার। বৌমার বাপ নাকি ঘটকের কাছে প্রথমে আপত্তিই জানিয়েছিলো। ছেলের টাকা পয়সা তেমন নেই। মেয়ে হয়তো সুখী হবে না এই ভেবে। এখন অবশ্য জামাইকে চোখে হারায়। সেই থেকে বেয়াইকে বুড়ি ভালো চোখে দেখে না। ছেলের মা হিসেবে এখন বেশ গর্ব ভরাপোরা সংসারের। শুধু বৌমার বাপটা একদম অপছন্দের। পায়ে পায়ে কখন বুড়ি তার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বৌমাকে গিয়ে জাপটে ধরেছে কেউই খেয়াল করেনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন