শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

সুবীর ঘোষ-এর ঝুরোগল্প


পতঝড়

 বাগানের দোপাটি ফুলগাছের পাতাগুলো হঠাৎ ঝরতে আরম্ভ করল  এখন তো পাতা ঝরার  সময় নয়  স্কুলজীবনের একটা ছবি ভেসে এল অকারণেই  বসন্তে যখন গাছের পাতা খসা শুরু হত আর আমাকে স্কুলে যেতে হত একটা বিস্তীর্ণ শালবনের ভেতর দিয়ে আমার গায়ে মাথায় সাইকেলের চাকায় শুকনো ঝরা পাতার আলিঙ্গন গেঁথে যেত  যেন ওরা আমাকে যেতে দিতে চাইত না   আবার এক সময় দমকা হাওয়া এসে ওদের উড়িয়ে নিয়ে  যেত  কখনো কাছাকাছি গিয়ে ওরা আবার ভূমিশয্যা নিত  আবার কখনো হাওয়ার সঙ্গে ছুটতে ছুটতে ওদের অনেক দূরে চলে যেতে হত আর দেখা যেত না  আমার মনে হত ঝরাপাতার কত আনন্দ ! ওদের কাজ নেই লেখাপড়া নেই  শুধু বাতাসে ভাসো  ওড়ো  আমারও খুব উড়তে ইচ্ছে হত  কিন্তু ওদের আবার মাটিতে এসে মরার মতো শুয়ে পড়াটা আমার পচ্ছন্দ ছিল না  মাটিতে পড়ে থাকলেই কোথা থেকে আগুন এসে ছাই করে চলে যাবে ওদের  কেউ আবার বিড়ি-সিগ্রেট খেতে খেতে জ্বলন্ত ফেলে যাবে ওদের ওপর  আর আগুন লেগে যাবে ওদের শয্যাপাতিতে 

 

আজ দোপাটির পাতা ঝরা দেখে আমার মনে পড়ল সামনের আবাসনের স্থুলকায় বউটি কয়েকদিন আগে হারিয়ে গেলেন  আমাদের আবাসনের কেউ- জানতে পারেনি আমি ছাড়া  আমি সন্ধেবেলা কিছু একটা পড়তে পড়তে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছি --দেখি কিছু লোকের জটলা 

গাড়িপার্কিংয়ের মেঝের ওপর থেকে কোনো মানুষকে তুলে ভ্যানগাড়িতে তোলা হচ্ছে  সেই ভদ্রমহিলার  স্বামীর হাতে পাকানো কিছু কাগজ দেখতে পেলাম  মৃত্যু আধো অন্ধকারে সেটাই প্রথম মাথায় এল  পরে জানতে পেরেছিলাম আমি ঠিকই বুঝেছি  তিনিই ঝরাপাতার দেশে চলে গেছেন 

 

এখন আমাদের বয়েসটাই এমন যে  গাছের গায়ে পাতার বোঁটার ক্ষমতা খসে যাওয়ার অবস্থায় 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন