পতঝড়
বাগানের দোপাটি ফুলগাছের পাতাগুলো হঠাৎ ঝরতে আরম্ভ করল । এখন তো পাতা ঝরার সময় নয় । স্কুলজীবনের একটা ছবি ভেসে এল অকারণেই । বসন্তে যখন গাছের পাতা খসা শুরু হত , আর আমাকে স্কুলে যেতে হত একটা বিস্তীর্ণ শালবনের ভেতর দিয়ে , আমার গায়ে মাথায় সাইকেলের চাকায় শুকনো ঝরা পাতার আলিঙ্গন গেঁথে যেত । যেন ওরা আমাকে যেতে দিতে চাইত না । আবার এক সময় দমকা হাওয়া এসে ওদের উড়িয়ে নিয়ে যেত । কখনো কাছাকাছি গিয়ে ওরা আবার ভূমিশয্যা নিত । আবার কখনো হাওয়ার সঙ্গে ছুটতে ছুটতে ওদের অনেক দূরে চলে যেতে হত , আর দেখা যেত না । আমার মনে হত ঝরাপাতার কত আনন্দ ! ওদের কাজ নেই , লেখাপড়া নেই । শুধু বাতাসে ভাসো । ওড়ো । আমারও খুব উড়তে ইচ্ছে হত । কিন্তু ওদের আবার মাটিতে এসে মরার মতো শুয়ে পড়াটা আমার পচ্ছন্দ ছিল না । মাটিতে পড়ে থাকলেই কোথা থেকে আগুন এসে ছাই করে চলে যাবে ওদের । কেউ আবার বিড়ি-সিগ্রেট খেতে খেতে জ্বলন্ত ফেলে যাবে ওদের ওপর । আর আগুন লেগে যাবে ওদের শয্যাপাতিতে ।
আজ দোপাটির পাতা ঝরা দেখে আমার মনে পড়ল সামনের আবাসনের স্থুলকায় বউটি কয়েকদিন আগে হারিয়ে গেলেন । আমাদের আবাসনের কেউ-ই জানতে পারেনি আমি ছাড়া । আমি সন্ধেবেলা কিছু একটা পড়তে পড়তে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছি --দেখি কিছু লোকের জটলা ।
গাড়িপার্কিংয়ের মেঝের ওপর থেকে কোনো মানুষকে তুলে ভ্যানগাড়িতে তোলা হচ্ছে । সেই ভদ্রমহিলার স্বামীর হাতে পাকানো কিছু কাগজ দেখতে পেলাম । মৃত্যু ? আধো অন্ধকারে সেটাই প্রথম মাথায় এল । পরে জানতে পেরেছিলাম আমি ঠিকই বুঝেছি । তিনিই ঝরাপাতার দেশে চলে গেছেন ।
এখন আমাদের বয়েসটাই এমন যে গাছের গায়ে পাতার বোঁটার ক্ষমতা খসে যাওয়ার অবস্থায় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন