অপেক্ষা
এক
প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে আসছিল অরূপ। লম্বা স্টেশন রোড যেখানে শেষ হয়েছে তার খুব কাছেই বাসস্ট্যান্ড। প্রায় দিন পনেরো পর আবার বাড়ি ফিরছে সে। অরূপ কর্মসূত্রে বহরমপুরে থাকে। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মী। আগে প্রতি সপ্তাহেই বাড়ি ফিরত। ইদানিং সেটা দুই সপ্তাহের অন্তরে এসে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকের কাজের চাপ তো কম নয়।
মাসের চতূর্থ শনিবার ব্যাংক ছুটি। শুক্রবার রাতেই ব্যাগ মোটামুটি গুছিয়ে রেখেছিল অরূপ। ফলে সকালের ভাগীরথী এক্সপ্রেসে উঠে পড়তে তেমন অসুবিধা হয়নি।
স্টেশন রোডে এদিক ওদিক অল্প কিছু মানুষের জটলা। তাদের কথাবার্তায় মুখর হয়ে আছে জায়গাটা। প্রায় ঘন্টা পাঁচেকের লম্বা ট্রেনযাত্রায় অরূপ ক্লান্ত। ট্রেন ধরবার তাগিদে বেশ ভোরেই তাকে ঘুম থেকে উঠতে হয়েছিল। অসম্পূর্ণ ঘুমের কারণে চোখেও লেগে আছে ক্লান্তির আবেশ। অরূপের মনে হল এখন এক কাপ চা হলে বেশ ভালো হত।
কাছাকাছি কোনও চায়ের দোকান নেই। লম্বা রাস্তার দুই পাশে নানা ধরনের দোকান। জামাকাপড়, ষ্টেশনারী, জুয়েলারি, মোবাইল, নামী কোম্পানির ঘড়ির মস্ত শোরুম ইত্যাদি। ফুটপাথও রকমারি জিনিসে ঠাসা। বাসস্ট্যান্ডের অনেকটাই কাছে এগিয়ে গিয়েছিল অরূপ। কিন্তু চা-পানের প্রবল ইচ্ছেয় আবার পেছনে ফিরল সে।
স্টেশনের ডান দিকের রাস্তা ধরে একটু এগোলেই একটা চায়ের দোকান। অরূপ দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায়।
লম্বা কাঠের বেঞ্চিতে বসে কড়া লিকার চায়ে চুমুক দিল সে। ডাউন লাইনে আবার ট্রেন আসার খবর হয়েছে। লেভেল ক্রসিঙে আটকে পড়েছে রিকশা, বাইক, অটো, ক্যাব।
দুই
ইস্পাতের পাতের উপর চেনা শব্দ তুলে চলে গেল গাড়ী। ছুটন্ত ট্রেনের দিকেই তাকিয়ে ছিল অরূপ। ট্রেনটা চলে যেতেই নড়াচড়া করে উঠল পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা রিকশা, বাইক, অটো, ক্যাব। আর ঠিক তখনই লেভেল ক্রসিঙের উল্টো দিকে একটা বাড়ির দিকে নজর পড়ল অরুপের।
বাড়িটা নানা ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। সে নিজেও বেশ কয়েকটি বিবাহ, অন্নপাশন, উপনয়নের অনুষ্ঠানে গিয়েছে সেখানে। আজ সেই বাড়ির সামনেই লোকজনের আনাগোনা, ফুল দিয়ে সাজানো সুদৃশ্য প্রবেশদ্বার। অরূপের মনে হল, নিশ্চয়ই কোনও বিয়ের অনুষ্ঠান।
চায়ের দাম মিটিয়ে লেভেল ক্রসিঙের কাছে এগিয়ে যায় অরূপ। এবার স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বাড়িটা। হ্যাঁ, বিয়েবাড়িই। মূল প্রবেশদ্বারে ফুল দিয়ে সাজানো অক্ষরে লেখা, ‘মধুমিতা ওয়েডস'...
চমকে ওঠে অরূপ। এ কি সেই মধুমিতা? নাকি অন্য কেউ? হতেও তো পারে সমনামী কেউ। মধুমিতা বসুরায়ই যে হবে তার তো কোনও নিশ্চয়তা নেই। আবার হতেও পারে। অরূপ চেনে মধুমিতার বাড়ি। এই অনুষ্ঠান বাড়ির খুব কাছেই। সিমেন্টে বাঁধানো রাস্তাটা ধরে এগিয়ে গেলে দু’মিনিট।
কিন্তু সেই কথাটা যে আজও বলা হয়ে উঠল না মধুমিতাকে! অরূপ মনে মনে ভাবে, এই বিয়েবাড়ির মধুমিতা যদি সমনামী অন্য কেউ হয় তাহলে সেই না বলা কথা নিশ্চয়ই বলা যাবে।
সুন্দর
উত্তরমুছুন