শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১
দেবযানী বসু-র ঝুরোগল্প
অতএব তুই মিসলেনিয়াসগোরে মুহ সো মোরে মন ভাওয়ে -- আমার চন্দ্রাকে চিনিস তুই? এত নারী এল গেল কিন্তু চন্দ্রাকে ভুলতে পারি না। হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে বেদনা জিইয়ে রাখতে ভালোবাসে মানুষ। মাঝে মাঝে সেই বেদনার স্থান ঝাঁপি খুলে দেখতে কত যে সুখ। এই যে তুই আমার এখনকার প্রেমিকা সচিব সখা , তোকে সব বলা যায়।
চন্দ্রা মানে ষোল সতেরো আঠারোর দিনগুলো। নকশাল আমল।কিছু লিফলেট জমে ঘরে। চন্দ্রার হারিয়ে যাওয়া প্রমাণ করে না যে সে মারা গেছে। খেলার মাঠ ধানক্ষেত পোড়ো মসজিদ লক্ষ্মীকান্তদের ফলের বাগান আর রামদাস বাবাজির মঠ ঘিরে প্রেমপর্ব। শুধু চুম্বন আর জড়িয়ে ধরা ছাড়া আর এগোই নি -- যেখানে হল না খেলা সে খেলাঘরে আজি নিশিদিন মন কেমন কেমন করে। আর একটা মানুষ সত্তরে পৌঁছতে পৌঁছতে , অনেক গোল দিতে দিতে , নারীকে নীরা করতে করতে প্রথম ধাপটা সিঁড়ির ভুলেই যায়। আদরী মনে হয় তুইই আমার শেষ প্রেমিকা। হৃদয়ের জোর কমে যাচ্ছে মানে মস্তিষ্কের জোর কমে যাচ্ছে। সেভাবে টানাপড়েন আর খেলতে পারি না। তোর সঙ্গে হিসেব নিকেশ চুকিয়ে দেব শীঘ্র। তোকে নিয়ে আমার স্বপ্নটা শুরু হয়।
সেলিমপুরের এই বাড়িটা আমার ব্যক্তিগত বাড়ি। বসুন্ধরা বীরভোগ্যা না হলে চলবে কেন? নারী বাড়ি গাড়ি সুরা সম্রাট সব মিলিয়ে একাকার। বৌকেও সব দিই রে। ইদানিং বৌ খুব ঠাকুর ধর্ম করে বলে আস্তে আস্তে সরিয়ে দিয়েছে আমাকে। ফুলশয্যা নিয়ে ভাবালুতা ছিল বিয়ের সময়ে তা সে যত গন্ডা আপাদমস্তক ঘনিষ্ঠতা করার পর ফুটিয়ে দিই না কেন।
শোন্ চন্দ্রা ও আমি একসাথে স্কুলে পড়তাম।একই কোচিংয়ে পড়তাম।আদরী তোকে আমার কামসূত্র মুভিটার রেখার মতো মনে হয়। স্বপ্নে তোকে পেতে গিয়ে দেখি চন্দ্রা হাজির। তোকে জানি। কিন্তু চন্দ্রার শরীর তো অচেনা। খুব মুস্কিল। সেই অতীতের ফুলশয্যার ঘরে চন্দ্রা স্কুলের ইউনিফর্ম পরা কিশোরী হাসছে। আমার টোপর। ওর স্কুল শু। আমার ধুতি পাঞ্জাবি।ওর হাতে বইপত্র। ক্রমশ ফুলশয্যা ঘরের দরজা জানলা দেয়াল মিলিয়ে যাচ্ছে। এল স্কুলের বেঞ্চ টেবিল। শোব কোথায়!
চন্দ্রাকে তুই চিনিস আদরী? তুইও তো ঐ একই স্কুলের ছাত্রী ছিলিস।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন