শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

চিরশ্রী দেবনাথ-এর ঝুরোগল্প


হঠাৎ হারিয়ে গেলে

তন্ময়ের এক  হাতে বাজারের ব্যাগআর এক হাতে  মোবাইলকথা বলতে বলতে সে ফিরছেবসের সঙ্গে জরুরি কথা হচ্ছেকানের পাশ দিয়ে গাড়ি চলে যাচ্ছে হুসহাসচারদিকে সব ব্যস্ত ছুটন্ত মানুষহইহই করে দিন শুরু হয়েছে উৎসবের মতোসেই কলকল ধ্বনি ভেঙে দিয়ে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চলে গেলো সাইরেন বাজিয়েসাইরেনের আওয়াজ মিলিয়ে যেতে না যেতে আবার হকারের একঘেয়ে কিন্তু প্রাণবন্ত সুরএইসব কিছুর মধ্যে তন্ময় যেন কেটে কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে দক্ষ ময়ূরের মতোতার ব্যাগ থেকে উঁকি দিচ্ছে পালংশাকের সবুজ গুচ্ছনতুন ওঠা ফুলকপির পাতা,

এতো পরিচিত এই শহর  পথঘাটতন্ময় চোখ বন্ধ করেও যেন বাড়ি থেকে বাজার কিংবা বাজার থেকে বাড়ি চলে আসতে পারেচোখ না খুলেই  ' নিবেদিতা  ফার্মেসিতেঢুকে কিনে নিতে পারে দরকারি  ঔষধনা তাকিয়েও  সে বলে দিতে পারেনিখিলদা বাঁপাশের তিন নং তাকের পাঁচ নং বাক্স থেকে বের করছে পরিচিত ঔষধটিসব গোছানো পরিপাটিযাতে দ্রুত কাজ করা যায়।  তন্ময়ের জীবনও একদম ছকে বাঁধাখুব আরাম করে সে এটা উপভোগ করে। এই রে,  আকাশটা একটু মেঘলা হলো হঠাৎবৃষ্টি আসবে নাকি?  ঝলমলে রোদটা নিভে যাচ্ছে যেনফোনের লাইনটাও কেটে গেলোধ্যাৎএমন সময়ে লাইন কাটে যখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটাই বলা হয় নাভাবতে    ভাবতে তন্ময় অন্যমনস্ক ভাবে সামনের দিকে তাকালোআরে এতো কুয়াশা কোথা থেকে আসলঘন কুয়াশার দেয়াল পেরোচ্ছে যেন সেবিস্ময় কাটতে না কাটতেই তন্ময় হারিয়ে ফেলল তার চেনা রাস্তাঘাট লোকজনসামনে চওড়া পথদুধারে বড় বড় বৃক্ষখুব প্রাচীন একটি নগরের ছায়া যেনইতিহাসের বইয়ে যেমন থাকে ঠিক তেমনিকিন্তু সবকিছু মনে হচ্ছে হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে,  শক্তপোক্ত নয়নড়বড়েতরঙ্গায়িত। 

 তন্ময় ভীষণ ভয় পেয়ে গেলোঅথচ ওর জামাকাপড়বাজারের ব্যাগএমনকি হাতের মোবাইল ফোন পর্যন্ত একদম ঠিকঠাকএমনকি সে চিনতেও পারছে নম্বরগুলোকৃষ্ণাকে ফোন করললাইন ঢুকছে নাআরো কয়েকটি পরিচিত নাম্বারেনা কোথাও না ।তন্ময় হারিয়ে গেলো এই হাতের তালুর মতো চেনা শহরে?  আবছা করে মনে পড়ল বহুদিন আগে ওর  বন্ধু সায়ক বলেছিলজানিস তন্ময়আমাদের শহরটিতে একটি জায়গা আছে যা  এক অদ্ভুত অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত বা বলা যেতে পারে এই জায়গাটির ওয়েব লেংথআমাদের কমন ওয়েব লেংথ থেকে আলাদাতাই তাকে ঠাহর করা যায় নাকিন্তু আছেআমি ফিল করেছি একদিনকোনক্রমে এর থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি , 

যেখানে কোন কোন মানুষ হঠাৎ ঢুকে হারিয়ে যেতে পারেঅনেকটা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতো। পাগলা বিশুঅংশু স্যাররুমি কাকিমা এই তিনজন মানুষ কী রকম ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছিল কয়েক বছর পর পর মনে আছে তো তোদের , পুলিশ কত খুঁজেছেচিহ্ন মাত্র পায়নি মানুষগুলোরসেদিন তন্ময় এবং বাকি বন্ধুরা খুব হেসে ওকে থামিয়ে দিয়েছিল।  

তন্ময় কি আজ সেই রহস্যজনক জোনে পড়েছে

আরে  যে ওখানে গাছের নিচে একটি বেদির মতো জায়গায় বসে আছে রুমি কাকিমা !  ছোট থাকতে খুব 

আদর পেতো তন্ময় ওনার কাছেদৌড়ে তার কাছে গেলো তন্ময়কাকীমণি আমি কি আর ফিরতে পারব?

বলুন প্লিজআমার ছেলের স্কুলের ফি দেওয়া হয়নিবাবাকে চিকিৎসা করাতে হবেকৃষ্ণার শরীর ভালো নয়
অফিসে প্রচুর কাজআমি বেতন না পেলে পুরো পরিবার না খেয়ে মরবে। রুমি কাকিমা আঙুল দিয়ে দূরে কী যেন দেখালেন তো কুয়াশার দেয়ালতন্ময় বলল বুঝেছিওটা পেরিয়ে গেলেই আবার ফিরে যাবো সবার কাছেতন্ময় দ্রুত দৌড়ুতে লাগলউল্টো দিকে বিশু পাগলাই তোহো হো 
হাসছে দেয়াল আর পেরোনো যায় না ! বুঝেছ ! তবুও  তন্ময় দৌড়ুচ্ছেসে যে কাউকে বলে আসেনিসবাই অপেক্ষা করছে ওর ফিরে আসারব্যাগ থেকে সব সব্জি ছিটকে পড়ে যাচ্ছে,  যে করেই হোক এই কুয়াশার দেয়াল ভেঙে দেবে তন্ময় ...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন