হঠাৎ হারিয়ে গেলে
তন্ময়ের এক হাতে বাজারের ব্যাগ, আর এক হাতে মোবাইল, কথা বলতে বলতে সে ফিরছে, বসের সঙ্গে জরুরি কথা হচ্ছে, কানের পাশ দিয়ে গাড়ি চলে যাচ্ছে হুসহাস, চারদিকে সব ব্যস্ত ছুটন্ত মানুষ, হইহই করে দিন শুরু হয়েছে উৎসবের মতো, সেই কলকল ধ্বনি ভেঙে দিয়ে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চলে গেলো সাইরেন বাজিয়ে, সাইরেনের আওয়াজ মিলিয়ে যেতে না যেতে আবার হকারের একঘেয়ে কিন্তু প্রাণবন্ত সুর, এইসব কিছুর মধ্যে তন্ময় যেন কেটে কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে দক্ষ ময়ূরের মতো, তার ব্যাগ থেকে উঁকি দিচ্ছে পালংশাকের সবুজ গুচ্ছ, নতুন ওঠা ফুলকপির পাতা,
এতো পরিচিত এই শহর ও পথঘাট, তন্ময় চোখ বন্ধ করেও যেন বাড়ি থেকে বাজার কিংবা বাজার থেকে বাড়ি চলে আসতে পারে, চোখ না খুলেই ' নিবেদিতা ক ফার্মেসিতে' ঢুকে কিনে নিতে পারে দরকারি ঔষধ, না তাকিয়েও সে বলে দিতে পারে, নিখিলদা বাঁপাশের তিন নং তাকের পাঁচ নং বাক্স থেকে বের করছে পরিচিত ঔষধটি, সব গোছানো পরিপাটি, যাতে দ্রুত কাজ করা যায়। তন্ময়ের জীবনও একদম ছকে বাঁধা, খুব আরাম করে সে এটা উপভোগ করে। এই রে, আকাশটা একটু মেঘলা হলো হঠাৎ, বৃষ্টি আসবে নাকি? ঝলমলে রোদটা নিভে যাচ্ছে যেন, ফোনের লাইনটাও কেটে গেলো, ধ্যাৎ, এমন সময়ে লাইন কাটে যখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটাই বলা হয় না, ভাবতে ভাবতে তন্ময় অন্যমনস্ক ভাবে সামনের দিকে তাকালো, আরে এতো কুয়াশা কোথা থেকে আসল, ঘন কুয়াশার দেয়াল পেরোচ্ছে যেন সে, বিস্ময় কাটতে না কাটতেই তন্ময় হারিয়ে ফেলল তার চেনা রাস্তাঘাট লোকজন, সামনে চওড়া পথ, দুধারে বড় বড় বৃক্ষ, খুব প্রাচীন একটি নগরের ছায়া যেন, ইতিহাসের বইয়ে যেমন থাকে ঠিক তেমনি, কিন্তু সবকিছু মনে হচ্ছে হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে, শক্তপোক্ত নয়, নড়বড়ে, তরঙ্গায়িত।
তন্ময় ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো, অথচ ওর জামাকাপড়, বাজারের ব্যাগ, এমনকি হাতের মোবাইল ফোন পর্যন্ত একদম ঠিকঠাক, এমনকি সে চিনতেও পারছে নম্বরগুলো, কৃষ্ণাকে ফোন করল, লাইন ঢুকছে না, আরো কয়েকটি পরিচিত নাম্বারে, না কোথাও না ।তন্ময় হারিয়ে গেলো এই হাতের তালুর মতো চেনা শহরে? আবছা করে মনে পড়ল বহুদিন আগে ওর বন্ধু সায়ক বলেছিল, জানিস তন্ময়, আমাদের শহরটিতে একটি জায়গা আছে যা এক অদ্ভুত অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত বা বলা যেতে পারে এই জায়গাটির ওয়েব লেংথ, আমাদের কমন ওয়েব লেংথ থেকে আলাদা, তাই তাকে ঠাহর করা যায় না, কিন্তু আছে, আমি ফিল করেছি একদিন, কোনক্রমে এর থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি ,
যেখানে কোন কোন মানুষ হঠাৎ ঢুকে হারিয়ে যেতে পারে, অনেকটা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতো। পাগলা বিশু, অংশু স্যার, রুমি কাকিমা এই তিনজন মানুষ কী রকম ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছিল কয়েক বছর পর পর মনে আছে তো তোদের , পুলিশ কত খুঁজেছে, চিহ্ন মাত্র পায়নি মানুষগুলোর, সেদিন তন্ময় এবং বাকি বন্ধুরা খুব হেসে ওকে থামিয়ে দিয়েছিল।
তন্ময় কি আজ সেই রহস্যজনক জোনে পড়েছে?
আরে ঐ যে ওখানে গাছের নিচে একটি বেদির মতো জায়গায় বসে আছে রুমি কাকিমা ! ছোট থাকতে খুব
আদর পেতো তন্ময় ওনার কাছে, দৌড়ে তার কাছে গেলো তন্ময়, কাকীমণি আমি কি আর ফিরতে পারব?
বলুন প্লিজ! আমার ছেলের স্কুলের ফি দেওয়া হয়নি, বাবাকে চিকিৎসা করাতে হবে, কৃষ্ণার শরীর ভালো নয়,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন