শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

সুবীর সরকার-এর ধারাবাহিক গদ্য : "ভবতারণের জোত"


 ভবতারণের জোত


১।

 

ফাঁকা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এই প্রাকসন্ধ্যের বিষণ্ণ আলো শরীরে মাখতে মাখতে কত কথাই যে মনে আসে

অনিমেষের!কথার

জালে জড়িয়ে যেতে যেতে,স্মৃতির পাকে পাকে জড়িয়ে যেতে যেতে এই প্রায় পঞ্চাশে অনিমেষ কি তবে

চূড়ান্তরকম তাড়িত হয়!

সে কি শাহ আব্দুল করিমের গান শুনতে শুনতে জীবনের আরো গভীরেই ঢুকে পড়তে থাকে!এত এত বছরের

কবিতা লিখবার

জীবনে এত ক্লান্তি জমে কেন!এই জনপদের সবচেয়ে অপমানিত কবি অনিমেষ।কবিতার জন্য কত কিছু

ছাড়তে হয়েছে তাকে।

ভালোবাসতে ভালোবাসতে কি দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে সে।আগুনের ভেতর দিয়েই তো একজন স্রষ্টাকে হেঁটে যেতে

হয়।সেই ৩০ বছর

আগে এক কিংবদন্তি কবি তরুণ অনিমেষকে এই কথা বলেছিলেন।তারপর থেকেই অনিমেষ বেছে নিয়েছে

কবিতা লিখবার

এক জীবন।প্রবল অভিশপ্ত এক জীবন।তাড়িত দুঃখের মতন সে কেবল জীবনের পরতে পরতে

বাদ্য  বাজনার সমস্বর মিশিয়ে

দিতে চেয়েছে।এই বিকেল সন্ধ্যের মাঝামাঝি অনিমেষ তার চোয়ালের পেশিতে এঁকে রাখতে থাকে এক চিলতে

 হাসি।আর পাখিরা

ফিরে আসতে থাকে ঝাঁকে ঝাঁকে



২।

 

মানুষের ঘরবাড়ি থেকে যাপনের গল্পগুলি ছড়িয়ে পড়তে থাকে।চাঁদের আলোয় রহস্য গড়িয়ে নামে।ভাঙ্গা

হাটের টুকরো টুকরো

 অংশগুলি তখনও জেগেই থাকে।আর উকিল মুন্সীর গান গাইতে গাইতে হারাধন তার চায়ের দোকানে একটা

ময়মনসিংহ একটা

নেত্রকোনা আর হাউড়ের জলের শব্দ শুন্তে থাকে বুঝি!হারাধনের দুচোখ তখন বন্ধ।চোখে জলের ধারা।দেশ

ছেড়ে এসেছে কবে,

কিন্তু আজও সে তার শরীরে;তার সমগ্রতার ভেতর বহন করেই চলেছে তার দেশ।অনিমেষ সামান্য দূর থেকে

এটা দেখে।সে

এগোতে থাকে হারাধনের গানের দিকে।না কি গানই এগিয়ে আসে তার দিকে_

 

আখ খেতে ছাগল বন্দী

 

জলে বন্দী মাছ

 

নারীর কাছে পুরুষ বন্দী

 

ঘুরায় বারো মাস

 

এটাই তো জীবন।জীবনের বাঁকে বাঁকে বাঁকে কে বুঝি গুঁজে দিতেই থাকে প্রসন্ন বিজধান







ক্রমশ...



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন