ফুলের ওপর একটা লোডেড গান
॥আহুতি দেবার জন্য দেবতারা বসন্ত ঋতুকে ঘি, গ্রীষ্মঋতুকে অরণি কাঠ, এবং শরত ঋতুকে হবি বানালেন॥
সন্ধেটা কখন থেকে ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদছে,ভাল্লাগেনা। এখানে চরাচর মানে কেবলই অ্যাপার্টমেন্ট। কান পাতলে স্পষ্ট গালি অন্য ফ্ল্যাটের সবার ঘরের কথা, মাতালের আস্ফালন সব শোনা যায়। আমার একটা বন্ধু বেশ ডাক্তারের মত গম্ভীর মাথা নেড়ে বলেছিল,তোর দিলটা বহুত কমজোর। ট্রাফিক পুলিশ হাত তুললে চমকে যাস। যখন তখন ভাব এসে যায়, দাঁড়িয়ে পড়িস রাস্তায়। ফুল দেখে ভিরমি খাস তো মাল দেখবি কি? ওই পাড়ার একটাকে ফিট করেছিলাম, ঊরু তুলে বসে টাকাপয়সার দফারফা করছিল, তোর তখন কুমারসম্ভবম মনে পড়ল। যে কাজ যে সময়ে করার না করিস তো জীবনে কিস্যু হবে না এই বলে দিলাম।
সত্যি সত্যি আমি ঠিক এই কারণে এখনো অব্দি কিছুই করে উঠতে পারলাম না। কিন্তু আমি কি করব? যখন কম বয়েস ছিল,বন্ধুরা একবার গোপনে প্লে বয় ম্যাগাজিনে ন্যুড দেখে মজা নিচ্ছিল,আমি একঝলক দেখেই ফট করে বলে দিয়েছিলাম, ওর তো পিরিয়ড হয়েছে। ব্যাস, ওরা মারে আরকি। একটা চা কম্পানীর ঠিকাদারের আণ্ডারে কাজ পেয়েছিলাম। মাথায় কি পোকা নড়ল, অনেক বড় কম্পানী যারা কাঁচা মাল আমাদের কাছ থেকে কিনতো, ডিসক্লোজ করে দিলাম গুঁড়ো পাতা চায়ের সাথে চামড়া গুঁড়ো মেশানো হচ্ছে।
এইরকম কেউ কি নিজের পায়ে কুড়ুল মারে? কিন্তু পদে পদে আমার নজর ওই খারাপের দিকে যায়। কোনো ওষুধ যে জাল,আমি কিভাবে জানিনা ফট করে ধরে ফেলতে পারি। আর পরিস্থিতিও আমার এমন অনুকূলে হয় যে জাল ওষুধ দোকান আর ডাক্তার ঠিক ধরা পড়ে যায়। একবার ব্যাংকে ঢুকে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে দেখি সামনের লোকটার পিছনে একটা লোডেড গান জামায় ঢাকা। আমি চারপাশে নজর দৌড়ালাম। ওর সাকরেদগুলো আমার নজরে পড়ে গেল। তারপর আর কি? ম্যানেজারের চেম্বারে ঢুকে কথাটা বলতেই বোতাম দাবিয়ে দিল। পাঁচ মিনিটে পুলিশ গম গম করতে লাগল। আচ্ছা? আমি কি মনহুশ?
এখন সন্ধেবেলা। আমার ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে। পেটে আগুন জ্বলছে। বসন্তকাল। তলপেটের আগুন আমার চিরকাল ঠান্ডা। অন্যের খারাপ ভালো ভবিষ্যত্ আর সেইরকম পরিবেশ জেনে সতর্ক করার কাজে তো আর পেট ভরেনা? কিন্তু আমি যে থাকতে পারিনা। এই যে একটু দূরের একটা ব্যালকনি থেকে দু টুকরো কথা ভেসে আসতেই পরিষ্কার বুঝলাম ওখানে জোর তর্ক বিতর্ক। হ্যাঁ,এমন কিছু ঘটতে চলেছে যে থানাতে খবর দিতেই হয়। নইলে অনর্থ বাধবে। পুরো পরিবার কাঁদছে আর দুতিনজন কমবয়েসীর গলায় চোস্ত ঊর্দু। খাওয়া ভুললাম। শনির প্রকোপ আমাকে ভর করেছে যে? এর থেকে কি পরিত্রাণ এ জন্মে হবে? আর ওইযে সামনের ফ্ল্যাটের মালিক মদ খেয়ে খেয়ে সম্পত্তি লিকুইডেট করে উঁচু ন্যাড়া ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে পায়চারি করছে। সুইসাইড করার তালে আছে বুঝি?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন