হে মহাজীবন
আতিথেয়তায় পরম মুগ্ধ ও পরিতৃপ্ত জনা পাঁচেক আমরা। আমি ব্যাঙ্কার। রুমা সেক্রেটারি। সুরঞ্জনা ম্যানেজিং ডিরেক্টার। মানে এভাবে দাবার ছক সাজানো থাকলেও আমরা পরস্পর মিলেমিশে কাজ করি। এবারের অভিযান ছিল চিরহরিৎ দেশের মালভূমি এলাকায়। রাজা জনকের মতো ঋষিতুল্য এক ব্যক্তি যিনি পূর্বপুরুষের জমিদারি সম্পত্তি নয়ছয় হয়ে যেতে দেন নি। বিশাল এলাকা জুড়ে নামিদামি গাছগাছালি লাগিয়ে ও পশুপাখি পালন করে সুবিখ্যাত হয়ে উঠেছেন। আমার নামের সঙ্গে তার মিল ও আছে। আমি অমলকান্তি। উনি নিজেকে পরিচয় দেন বৃক্ষমিত্র অমলকান্তি বলে।
যাতায়াত নিয়ে সাড়ে চারদিন কোথা থেকে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। আমি বোটানির ছাত্র। একটুও ক্লান্তি লাগে নি ওনার চাষবাস দেখতে। এক একটা বৃক্ষ দেখান আর আদিগন্ত বৈজ্ঞানিক নাম সহ সব বলে যান। একেকটা ক্ষেত দেখান আর সেই ফসলের চাষ পদ্ধতি সব বলে যান। ওহ্ বাঁধাকপির কি সাইজ!! তার সঙ্গে মিশিয়ে দেন সংস্কৃত শ্লোক। বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক গুরুদের প্রতি ওনার শ্রদ্ধা দেখবার মতো।
এই নব্বই ছুঁই ছুঁই বয়সেও তিনি শালপ্রাংশু ঋজু শরীর নিয়ে শ্বেত শ্মশ্রুগুম্ফমন্ডিত মুখ ও সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরনে দ্রুত চলাফেরা করছেন।
ওনার ট্যুরিস্ট লজে থাকা খাওয়া ছাড়া কিছু অনুদান দিতে হয়েছিল। আমাদের ক্যামেরাম্যান গোস্বামীদা প্রবল দমে ছবি তুলেই যাচ্ছেন আমাদের ও গাছের ফসলের।শেষে এলাম গ্ৰন্থাগার ও কম্পিউটার ভবনে। অনেক কম্পিউটার আর দেশি বিদেশি বইয়ে ভরা অনেক আলমারি। বইগুলি সভ্যতার ইতিহাসের জীববিজ্ঞানের প্রকৃতি বিজ্ঞানের। সাহিত্যের বইও আছে। কয়েকজন ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা বসে কাজ করছে।
সার তৈরির ভাঁটিটাও ঘুরে ঘুরে দেখলাম।
দেখে মনে হল অবিবাহিত উনি। সারাজীবন এরকম তপস্যা করেছেন। কোলকাতায় ফিরে এসে বান্ধবী জয়াকে সব গল্প করেছি। আমার বৌ প্রমীলা ওকে আবার সন্দেহ করে।জয়া আবার একটু আধটু লেখে দেখে। জয়া একেবারে আকাশ থেকে পড়ল -- ওমা তোরা ওখানে গিয়েছিলি! কি কান্ড জানিস না ওনার দুটো বিয়ে। প্রথমজন ওনাকে ছেড়ে দিয়ে টরেন্ট চলে গেছেন। সোমাশ্রীদিকে দেখিস নি? ওই তো দ্বিতীয় বৌ। অমলদার থেকে কুড়ি বছরের ছোট।'
আমার মনে পড়ল কম্পিউটার রুমে বয়স্কা ভদ্রমহিলাই তাহলে এই বিরাট কর্মবীরের সাধনসঙ্গিনী!!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন