বারেবারে কে যেন ডাকে
কেউ তাকে ডাকে। মাঝে মাঝেই ডাকে। কখনও কখনও প্রায় প্রতিদিনই ডাকে। কে ডাকে? কেন ডাকে? কোথা থেকে ডাকে? না, অনেক চেষ্টা করেও তটিনী বুঝে উঠতে পারে না। এমন নয় যে তটিনী এই ডাক ঘুমের ঘোরে শোনে। বরং সে যখন জেগে থাকে তখনই এই ডাক শুনতে পায়। আড়াল থেকে কেউ তার নাম ধরে ডাকছে।
বাংলাসাহিত্যে অনার্স সহ তটিনী বি-এ পাশ করেছিল। তার ইচ্ছে ছিল এরপর বাংলাসাহিত্যে এম-এ পড়বে। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে পি-এইচ-ডি করবে। কিন্তু তার কোনো ইচ্ছেই মর্যাদা পেল না বাড়িতে। মা-বাবা একরকম পাকড়াও করে তটিনীকে বসিয়ে দিল বিয়ের পিঁড়িতে। বিয়ের পর তার বর তাকে বগলদাবা করে নিয়ে গেল এমন একটা বাড়িতে, যেখানে পড়াশোনার কোনো চাষবাস নেই। একান্নবর্তী পরিবারের ছেলেরা সবাই চাল-ডালের ব্যবসায় ব্যস্ত, আর বাড়ির বৌ-মেয়েরা চাল-ডাল রান্নায় ব্যস্ত।
তটিনীর বর শম্ভুনাথ একটা আজীব চীজ! সারাটা দিন ব্যবসার কাজে টো টো করে চক্কর মেরে রাতে ফিরে তটিনীর শরীরটা খামচে খুবলে মোষের মত সঙ্গমক্রিয়া সেরে ভোঁস ভোঁস করে নাকের গর্জন তুলে ঘুমিয়ে পড়ে। তটিনী সেই অন্ধকার ঘরে বড় বড় চোখ করে বোঝার চেষ্টা করে, তার কি সত্যি সত্যিই বিয়ে হয়েছে এই লোকটার সঙ্গে? নাকি বিয়ের নামে এই লোকটা তাকে অপহরণ করে এনেছে নিয়মিত ধর্ষণ করার জন্য? এবং যেহেতু এই সঙ্গম আসলে ধর্ষণ, তাই তটিনীর দম আটকে আসে যখন লোকটা তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। প্রচন্ড যন্ত্রণায় ছটপট করতে থাকে যখন লোকটা জবরদস্তি তার যৌনাঙ্গ প্রবেশ করায় তটিনীর যৌনাঙ্গে। চরম অস্বস্তি ও অতৃপ্তিতে তটিনী বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে যখন লোকটা যৌনতৃপ্তির বিকট উদ্গার তুলে উপুড় হয়ে চোখ বোজে।
তটিনী অবশ্য বিয়ের পরে নয়, বরং বিয়ের আগে থেকে, বলা যেতে পারে সেই কিশোরীবেলা থেকেই এই ডাক শুনতে পায়। কিন্তু কে যে ডাকে, তার কোনো হদিশ পায় না। কিশোরী তটিনি স্কুলে যখন পড়ত, তখন তার খুব ভালো লাগত কিশোর নীলাব্জকে। ভালো কি বাসত, তা অবশ্য ঠিক জানা নেই তটিনীর। তবে নীলাব্জ তটিনীর জীবনের সেই প্রথমপুরুষ, যে পুরুষ প্রথম তার শরীর স্পর্শ করেছিল, তার গালে ও ঠোঁটে চুমু খেয়েছিল। তটিনীর কখনও মনে হয়, নীলাব্জই বুঝি আড়াল থেকে তার নাম ধরে ডাকছে! সত্যিই নীলাব্জ তাকে ডাকছে? ঠিক বুঝে উঠতে পারে না তটিনী।
কলেজে পড়তে এসে বন্ধুত্ব হয়েছিল সহপাঠী সার্থকের সঙ্গে। পড়াশোনায় তুখোর ছিল সার্থক। সাহিত্যে ছিল আন্তরিক অনুরাগ। নিজেও কবিতা ছোটগল্প লিখত। তটিনীকেও লেখার জন্য উৎসাহিত করত। তটিনী সম্ভবত ভালোবেসে ফেলেছিল সার্থককে। আর তাই সার্থক তার জীবনের সেই প্রথমপুরুষ, যার সঙ্গে প্রথম শরীরীবন্ধনে নিমগ্ন হয়েছিল তটিনী। তাহলে কি আড়াল থেকে সার্থক তাকে ডাকে? সত্যিই ডাকে? তাহলে আড়াল ছেড়ে সামনে আসে না কেন?
তটিনী মনে মনে ভাবে, নীলাব্জ ও সার্থক ছাড়া আর কে কে তার নাম ধরে ডাকতে পারে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন