হাত
হাত হলো মানুষের শুকিয়ে যাওয়া পায়ের নাম
শিশুকে মজা দেখাবার জন্য প্রথমে সে পিছনের
পায়ে দাঁড়িয়েছিল একদিন
শিশুর ফিকফিক হাসি আর বারংবার বায়নার কাছে
দুপায়েই টলেমলে লাফিয়ে চলতে হলো কিছুক্ষণ, যেমন
মানুষের বাচ্চারা আজ বাবাকে চারপেয়ে ঘোড়া বানিয়ে
পিঠের উপর চড়ে বসে, কান ধরে চিঁহি ডেকে ওঠে
ব্যাপারটা ঠিক তেমনই ছিল; ফাজিল শিশু বলেছিল
বাপ তুই দুই পায়ে হাঁট
একবার ভাবো দেখি দু’পায়ে হাঁটতে গেলে
সামনের পা দুটি কি বিচ্ছিরি কাঁধের উপরে ঝুলে থাকে
তবু সন্তানের আবদার কোন জন্তু উপেক্ষা করতে পারে?
মানুষ বহুদিন জানত না শুকিয়ে যাওয়া সামনের পা দু’টির
আসলে কোন কাজ আছে কিনা; অপ্রয়োজনীয় শব্দটি
তখন থেকেই মানুষ বুঝতে শিখল; ঝুলে থাকা হাতে
তুলে নিল পাথর, এদিক ওদিক ছুঁড়ে মারল
রক্তাক্ত হলো নিরীহ মহিষের শিরোদেশ
শান্ত গোবৎস বনান্তরে ছুটে পালাল; তারপর
একটি শিম্পাঞ্জিও মানুষকে বিশ্বাস করতে পারল না
সেই থেকে মানুষের জাত প্রাণিকুল থেকে আলাদা হয়ে গেল
কারণ মানুষ প্রকৃতিবিরোধী
এভাবে পাথর আর বল্লমের কাল কবেই ফুরিয়েছে
নিহত শূকরের রক্তে মানুষের আর কোন আনন্দ নেই
হাত এখন হাতের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি জেগে আছে
মানুষের বুদ্ধিশুদ্ধি ওসব কিছু নয়
মানুষের ইতিহাস হলো হাতের ইতিহাস
মিলনের অপরাধে
অত বাকবিতণ্ডার ইচ্ছা নেই
অপরাধ যাই হোক, রায় এক
কিছুদিন হাজত বাস
তারপর সোজা ঝুলিয়ে দেয়া হবে
পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মৃত্যুদণ্ড
নিয়ে কথা নেই
জেলখানার হুজুর কলমা পড়াতে এসে
সাস্ত¡না দেয়-
বলে ঈশ্বরের অভিপ্রায় এমন
আচ্ছা এতে সান্ত¡নার কি আছে
ঘাড়টা মটকে দিলে কিংবা
গলা থেকে বিচ্ছিন্ন করা হলে
ক্রশফায়ারেও তো একটা বুলেট অন্তত
এফোঁড়ওফোঁড় হতে পারে
ধরো কেউ জানতেই পারল না
তবু মিলতে না পারার কষ্ট তো থেকে যায়
মৃত্যুকে ভয় পাই বলে, তোমরা কাপুরুষ বলো
মৃত্যুকে ভয় না পাওয়ার মতো
আমার কাছে একটিও কারণ নেই
আমাকে গলায় রশি দিয়ে টানতে টানতে
বধ্যভূমিতে না নিয়ে গেলে
শূন্যে যূপকাঠে তুলে ধরা না হলে
অহেতুক সাহস দেখাতে যাব না
অন্যের পাপে মৃত্যুর বিধান ঈশ্বর রেখেছেন
বুঝতে যে চেষ্টা করিনি- তা না
এটা ঠিক অপরাধ নয়, পাপ
ঈশ্বরের চোখে নারী-পুরুষের মিলন মহাপাপ
স্বর্গে মানুষ তার অবাধ্য যে পাপ করেছিল
সেই থেকে মানুষ একই পাপ ও মৃত্যুর অধীন
অর্থাৎ প্রতিটি মানুষকে ঈশ্বর হত্যা করেন
তার পিতামাতার মিলনের অপরাধে।
কবিতাগুলো পড়েছি। ভালো লাগল।
উত্তরমুছুন