বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৩

সুবীর সরকার-এর বিশেষ গদ্য

আমাদের নাসের দা,আমাদের রোদ হাওয়ার অনন্ত পিকনিক

১.
নাসের হোসেন।কবি। আটের দশকে তিনি আয়ত্ব করেছিলেন তার নিজস্ব স্বর।খুব নিচু সুর তার কবিতার ভেতর একটা অদ্ভুত মায়া বিছিয়ে দিত।
নাসের দার "ছায়াপুরান" বইটি পাঠ করতে গিয়ে আমি নাসের দার কবিতার ভেতরের একটা মগ্নতা অনুভব করেছিলাম।গল্প বলবার ঢঙে একটানা বলে যেতেন আস্ত এক জীবনেরই গল্প।কিংবা ভাষ্য।
২.
১৯৯৫ সালে "কবিতা পাক্ষিক" পত্রিকায় লিখতে শুরু করি।প্রায় নিয়মিতভাবে।১৯৯৬ সালে আমার প্রথম বই প্রকাশিত হয় "কবিতা পাক্ষিক" থেকে।
ইতিমধ্যে পরিচয় হয়েছে নাসের হোসেন,শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়,মুরারী সিংহ,গৌরাঙ্গ মিত্র,কানন ভৌমিক,সমীর রায় চৌধুরী,শান্তনু দাদের সঙ্গে।আর প্রভাত দা তো ছিলেন মস্ত এক ছায়া হয়েই।
৩.
নাসের হোসেনের সঙ্গে মূলত চিঠিপত্রে বিনিময় হত।
কবিতা নিয়ে আমার অনেক জিজ্ঞাসা থাকতো।নাসের দা আমাকে চিঠিতে সে সব নিয়ে বলতেন।
কলকাতা গেলে বইমেলায়,কবিতা পক্ষিকের দপ্তরে,কখনো ৩৬ ডি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, পরে পটলডাঙায় নিয়মিত দেখা হত আমাদের।
কবিতা পক্ষিকের অনুষ্ঠানগুলোতে দেখা,কথা এসব তো হতই।
নাসের হোসেন ছিলেন খুব অন্তর্মুখী মানুষ।মুখে সবসময় একটা আলতো হাসি লেগেই থাকতো।সেই হাসিকে আমার একটা আলোর মতন মনে হত।
৪.
কখন কিভাবে বুঝি নাসের হোসেন, সোনালি বেগম, রোশনি আমার খুব অন্তরের মানুষ হয়ে গেল।
একদম পারিবারিক আত্মীয়তার মতন।
কবিতা নিয়ে মাঝে মাঝে কথা হত নাসের দার সঙ্গে।
নাসের দা আমাকে গদ্য লিখতে বলতেন।
"কবিতা পাক্ষিক" এ প্রকাশিত লেখা নিয়েও কথা চলতো আমাদের।
৫.
প্রভাত চৌধুরীর মুখ্য সেনানায়ক ছিলেন নাসের হোসেন।অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে নাসের দা কাজ করতেন।কবিতা আর কবিতা পাক্ষিক_এই ছিল নাসের দার ধ্যান জ্ঞান।পাশাপাশি প্রচুর প্রান্তে প্রান্তে
প্রকাশিত লিটিল ম্যাগাজিনের নামাঙ্কম করতেন নাসের দা।
নাসের হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়লেন।আমরা উদ্বিগ্ন হলাম।ভীষন ভেঙে পড়লেন প্রভাত দা।
একসময় কঠিন অসুখটির কথা আমরা জেনে গেলাম।
এদিকে অসুখ তাচ্ছিল্য করেই ছুটছেন,কাজ করে যাচ্ছেন নাসের হোসেন।মাঝে মাঝে হাসপাতালে ভর্তি হতে হত তাকে।
৬.
একদিন আচমকা নাসের হোসেনের চির বিদায়ের সংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করে দিল।
অসহায় হয়ে পড়লেন প্রভাত চৌধুরী।
একসময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন প্রভাত দা।কিডনি বিকল।একসময় প্রভাত দাও চলে গেলেন।
কিছু আগে প্রয়াত হয়েছেন গৌরাঙ্গ মৈত্র।
একটা সময়পর্ব হারিয়ে গেল এভাবেই।
৭.
মৃত্যুর কিছু দিন আগে কলকাতা বইমেলায় শেষ দেখা,শেষ কথা নাসের হোসেনের সাথে।
সেদিন ছিলেন সোনালি বেগম আর রোশনিও।
খুব আগ্রহ নিয়ে আমরা ছবি তুলেছিলাম।
নাসের হোসেন নেই এই কথা আজও বিশ্বাস করি না আমি!
প্রিয় নাসের দা,আমার খুব অন্তর্গত যাপনের গোপন অলিন্দে আপনি থাকবেন চিরকালীন জল, রোদ ও হাওয়ার মতন।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন