‘He is human force, and human timidity had better get out of the way’ – Mark Van Doren
ওয়াল্ট হুইট্ম্যান (১৮১৯-১৮৯২) আত্ম-উদ্যাপনের কবি, চিরযৌবনেরও। কাজে ও চিন্তায় তিনি পরিপূর্ণভাবেই আমেরিকান। জন্মের দুশো বছর পেরিয়েও আমরা যখন তাঁকে পড়ি, তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, স্বদেশিয়ানা, মানবপ্রেম এবং দেহময় সংরাগ জীবন্ত হয়ে উঠতে দেখি। তাঁর গদ্য, উপন্যাস এবং অন্যান্য রচনা যদি বাদও দিই, তাঁর বিখ্যাত কবিতা সংকলন ‘লীভস্ অব গ্রাস’ (১৮৫৫-৯২) ঘুরে ফিরে পড়তে ইচ্ছে হয়। না, সব কবিতাই যে প্রবল মুগ্ধতা সঞ্চারী তেমন নয়। দীর্ঘ কবিতা এখন স্বভাবতই আমাদের কাছে তেমন আকর্ষণীয় হয় না, একথা মেনে নিয়েও হুইটম্যানের কবিতার মাঝে মাঝে কাছে ফিরে গেলে এক আশ্চর্য ছন্দবিদ্যুৎ যেন সঞ্চারিত হয় শিরায় শিরায়। ধ্রুবপদের মতো তখন উচ্চারণ করতে হয় :
Of Life immense in passion, pulse, and power,
Cheerful, for freest action form’d under the laws divine,
The Modern Man I sing. (One’s-Self I Sing)
১৮৫৫-এর পর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ন’টি সংস্করণে ‘লীভস্ অব গ্রাস’-এর কবিতা সংখ্যা বেড়ে গেছে। বারোটি কবিতার সংকলন ১৮৯১ সালে এসে চারশতাধিক কবিতায় এসে দাঁড়িয়েছে ক্রমসংশোধন ও সংযোজনের পথ ধরে। যে-কাব্যপুস্তিকা প্রকাশকে কেন্দ্র করে সমকালে অনেকের কাছে তিনি নিন্দিত ও সমালোচিত হয়েছেন, সেই কাব্যই উত্তরকালে হয়ে উঠেছে তাঁর বিজয়-বৈজয়ন্তী। যদিও সমকালে গুরুস্থানীয় সাহিত্যিক এমার্সনের কাছে তিনি পেয়েছিলে যথার্থ স্বীকৃতি। তাঁর কবিতাগুচ্ছে এমার্সন দেখেছিলেন অতুলনীয় ভাবনারাশি আর নবীন কবির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুভৈষণাও ছিল সেই পত্রে। ব্যক্তিগত বিষাদ, মৃত্যুশোক, একাধিক চাকরি ইত্যাদি নানাবিধ অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনকে ঋদ্ধ করেছে। কবিতার দর্পণে সেসব অভিজ্ঞতা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে প্রকাণ্ড একটা আগুনে খনির মতো।
২।
হুইট্ম্যানের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা পড়তে গিয়ে। নজরুলের অস্মিতাবোধের সঙ্গে সমালোচকেরা ‘সং অব মাইসেলফ’-এর রেফারেন্স টেনে এনেছেন বারবার। ‘I celebrate myself’ এই হুইটম্যানীয় উচ্চারণ যেন মিলেছে ‘বল বীর, চির উন্নত মম শির’ ঘোষণায়। নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় যে উচ্ছ্বাস, প্রলয়োল্লাস আর প্রতিবাদের দ্যোতনা রয়েছে, হুইটম্যানের ঐ কবিতাতে অনেকেই তার উৎসবীজ খুঁজতে চেয়েছেন। আরেকটা বাধ্যতামূলক পরিচয়ের সুযোগ ছিল স্নাতকোত্তরে তুলনামূলক সাহিত্য বিশেষপত্র পড়ার সময়। বাবার কাছে শুনেছিলাম তাঁদের সময়ে (১৯৭৬-৭৮) হুইটম্যানের কবিতা ও বাংলা কবিতা তুলনামূলকভাবে পড়ানো হতো। কিন্তু ঘটনাচক্রে আমাদের সময় ঐ জায়গায় ইয়েট্সের কবিতা স্থান করে নেয়, তাই আগে তেমনভাবে হুইটম্যান পড়া হয়নি। টুকরো কিছু পঙ্ক্তির সঙ্গে পরিচয় থাকলেও কবি হুইটম্যানের সঙ্গে আমার পরিচয় গাঢ়তর হয় নেট-সেট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে। সেখানে ‘বাংলা সাহিত্যে বিদেশি সাহিত্যের প্রেরণা’ ঐচ্ছিকপত্রে বাংলা কবিতায় হুইটম্যানের প্রভাব পড়তে হতো। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের ‘ছন্দ’ বইয়ের গদ্যছন্দ কবিতায় হুইটম্যানের আস্ত একটি কবিতাই অনুবাদ করে দেন কবি এবং হুইটম্যানের গদ্যরীতি সম্পর্কে সশ্রদ্ধ উল্লেখ পেয়েছিলো ওখানে। আর সেই সূত্রেই পড়া হয়ে যায় দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তথ্যনিষ্ঠ প্রবন্ধ ‘হুইটম্যানিয়া’, উজ্জ্বলকুমার মজুমদারের ‘হুইটম্যান ও রবীন্দ্রনাথ’, তরুণ মুখোপাধ্যায়ের ‘ওয়াল্ট হুইটম্যান ও প্রেমেন্দ্র মিত্র : প্রভাব ও প্রেরণা’ ইত্যাদি লেখা। ২০০৭-এর সেট পরীক্ষায় প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে তাই বেছে নিয়েছিলাম ‘বাংলা গদ্যছন্দ, হুইটম্যান ও রবীন্দ্রনাথ’ বিষয়ক প্রশ্নটিই। তারপর সল্টলেকে নেট/সেট-এর ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গেস্ট লেকচার দিতে গিয়ে অনেকবার এসব প্রসঙ্গ আলোচনা করেছি, তুলনামূলক আলোচনা করেছি রবীন্দ্রনাথ ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের উপর কবির প্রভাব ও প্রেরণা। কিছুদিন আগেও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুবাদচর্চার পরিবর্তিত পাঠক্রমে বহিরাগত বিশেষজ্ঞ ড. উজ্জ্বলকুমার মজুমদার ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকদের অনুমোদনক্রমে প্রেমেন্দ্র মিত্র ও রবীন্দ্রনাথের অনুবাদে হুইটম্যান পাঠ্য করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম, যা সকলেই মেনে নিয়েছিলেন। আজ তাঁর জন্মের দুশো বছর উদ্যাপনের লগ্নে নতুন করে তাঁকে নিয়ে পড়তে ও লিখতে বসে মনে পড়ে যাচ্ছে এইসব পুরনো কথা। তাই এ-বছর আমারই আগ্রহে প্রেসিডেন্সির ছাত্র-ছাত্রীদের ‘অসমাপিকা’ পত্রিকা প্রকাশের সূচক অনুষ্ঠানেও (২৬ অগাস্ট ২০১৯) চলে আসেন ‘জন্মদ্বিশতবর্ষে হুইটম্যান’। এই হলো হুইটম্যানের সঙ্গে আমার নিবিড় পরিচয়ের গল্প, যা হয়তো একবারে অপ্রাসঙ্গিক নয়।
৩।
সংক্ষেপে বলতে গেলে হুইটম্যানের জীবন খুব বর্ণময়, এমন নয়। ১৮১৯ সালের ৩১মে আমেরিকার ওয়েস্টহিলসের লং আইল্যাণ্ডে এক খামারে তাঁর জন্ম। বাবা ও মায়ের দেহে ছিল দিনেমার ও ইংরেজ রক্ত। স্কুল শিক্ষাও এগারো বছরের বেশি এগোয় নি। প্রকৃতির কোলে, সমুদ্রের তীরে শৈশব কেটেছিল তাঁর। আবৃত্তি করে বেড়াতেন শেক্সপিয়র, হোমারের কবিতা। চার বছর বয়সেই যদিও সপরিবারে হুইটম্যানেরা চলে আসেন ব্রুকলিনে। গ্রাম থেকে শহরে এই যাত্রা তাঁর পক্ষে শুভঙ্কর হয়েছিলো। বারো বছর বয়স থেকেই সংবাদপত্রের মুদ্রণবিভাগে কাজ দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা। তারপর কখনো কম্পোজিটর, কখনো ছুতোরের কাজ করেছেন; আবার শিক্ষকতা ও সংবাদপত্র সম্পাদনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও সামলেছেন হুইটম্যান। আর এই বহুমুখী অভিজ্ঞতার ফসল হিসেবেই আমরা পেয়েছি ‘লীভ্স অব গ্রাস’ কাব্যের কবিতাসমূহ। পূর্বজ সাহিত্যিক এমার্সন বা দার্শনিক থোরোর প্রভাবের কথা কেউ কেউ বললেও এই কাব্যের হুইটম্যান সে-দেশের পক্ষে তখন অভিনব এক কবি, যাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে এমার্সন লিখছিলেন :
‘লীভ্স অব গ্রাস থেকে আমরা যে কি পেয়েছি তা আমি উপলব্ধি করেছি। জ্ঞান ও আনন্দের ক্ষেত্রে আমেরিকা যা কিছু দিয়েছে, তাদের মধ্যে এই গ্রন্থখানির স্থান তুলনাহীন। বৃহৎ শক্তির প্রকাশ যেমন আমাদের মুগ্ধ করে তেমনি এই গ্রন্থখানি আমাদের মুগ্ধ করেছে। মহান জীবনে প্রবেশের তোরণদ্বারে আপনাকে অভিনন্দিত করছি’। (ভাষান্তর : রণজিৎ কুমার সেন)
হুইটম্যান এই কাব্য রচনার আগে ছোটগল্প, কবিতা, উপন্যাস বিচ্ছিন্ন ভাবে লিখে গেছেন। কিন্তু ‘লীভ্স অব গ্রাস’এর মতো তাঁর কবিমনের সামগ্রিক পরিচয় অন্য কোথাও মেলে না। আমেরিকার গৃহযুদ্ধে আহত তাঁর ভাইকে দেখতে গিয়ে হুইটম্যান যুদ্ধের ভয়াবহতা ও আহত মানুষের আর্তনাদ সামনে থেকে দেখেছিলেন। আহতদের সেবায় নিজেকে নিযুক্তও করেছিলে এ-সময়। নির্যাতিত ও দুঃখময় মানবজীবনের এই ছায়া তাঁর কবিতায় পড়েছে। লিখেছেন :
I sit and look out upon all the sorrows of the world,
And upon all oppression and shame; ...
I see the workings of battle, pestilence, tyranny –
I see martyrs and prisoners; ...
I observe the sights and degradations cast by arrogant persons upon
Labourers, the poor, and upon negroes, and the like;
All these – All the meanness and agony without end, I sitting, look out upon,
See, hear, and am silent. (I sit and look out)
আর্ত, নিপীড়িত মানুষের প্রতি তাঁর এই সহানুভূতি বা দরদ এতখানিই ছিল, যে তিনি বলতেন ‘I do not ask the wounded person how he feels, ‘I myself become the wounded person’ – উপলব্ধির এই অনন্যতায় তিনি সমাজের সকল স্তরের মানুষের সহমর্মী হয়েছিলেন। এই মানবতাবাদের পাশাপশি তাঁর কবিতায় প্রেম ও যৌনতা এক অনিবার্য উপাদান হিসেবে বন্দিত হয়েছে। নিজেকে একাধারে দেহ ও আত্মার কবি হিসেবে দেখেছিলেন তিনি, স্বর্গসুখ আর নারকীয় যন্ত্রণাকে আত্মস্থ করে তাঁর ঘোষণা :
I believe in the flesh and appetites,
Seeing, hearing, feeling are miracles, and each part and tag of me is a miracle.
Divine am I inside and out, and I make holy whatever I touch
Or am touch’d from
The scent of these arm-pits aroma finer than prayer,
The head more than churches, bibles, and all the creeds. (Song of Myself)
শরীরী-বিদ্যুতের জয়গান গাওয়া কবি বিশ্বাস করেন দেহের পবিত্রতায়। উপাদেয় যৌনতা আর মিলনের দিব্য অনুভবে হুইটম্যান নারীকে নিজের করে পেতে চেয়েছেন আর নিজেকেও উৎসর্গ করেছেন তার কাছে ‘I am for you, you are for me, not only for our own sake, but for others’ sakes’ (A woman waits for me)। তাঁর রাজনীতি সচেতন মনে আমেরিকার গণতন্ত্র যেমন মূল্য পেয়েছে, তেমনই উদারমনা রাষ্ট্রপতি লিঙ্কনের হত্যা তাঁকে অভিভূত করেছে। হত্যাকারীদের ক্ষমা করতে পারেননি তিনি। ‘ও ক্যাপ্টেন, মাই ক্যাপ্টেন’ সম্বোধন করে লেখা সেই কবিতা শোকাতুর অনুভবে লীন একটি সার্থক এলিজি। ১৮৯২ সালের ২৬ মার্চ ঠাণ্ডা লেগে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর চেতনা যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। জীবৎকালে পরিচিতি ও সম্মান পেলেও আজকের দিনে আমেরিকার সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি যে পথিকৃতের মূল্য পান, জীবিতাবস্থায় সেই স্বীকৃতি মেলেনি - আমেরিকার বিখ্যাত পোয়েট্রি পত্রিকার ওয়েবসাইট ‘পোয়েট্রি ফাউন্ডেশন’-এ স্বীকার করা হয়েছে সে-কথা। যদিও আজ তিনি হোমার-ভার্জিল-দান্তে-শেক্সপিয়রের সার্থক উত্তরসূরীরূপেই বন্দিত। আর তাঁর সম্ভ্রান্ত উত্তরজাতক বিখ্যাত কবি পাবলো নেরুদা, তিনিও প্রেম, যৌনতা ও স্বদেশচেতনায় দীক্ষিত হয়েছেন। বিশ্বাস করেছেন : ‘Poetry is like bread, and must be shared by everyone’।
৪।
‘প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’ কবিতায় ভারতপ্রেমিক হুইটম্যানকে খুঁজেছেন অনেকেই। তাঁর ‘আই হিয়ার আমেরিকা সিংগিং’ কবিতায় যেভাবে আপামর আমেরিকার গান আমাদের কানে বেজে ওঠে, সেইচোখে ভারতদর্শন তিনি করেননি। এই কবিতায় আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে প্রাচীন সভ্যতা, ঈশ্বরচেতনার মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন কবি। খাঁটি গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রেখে তিনি চেয়েছিলেন সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার আদর্শে রচিত এক মানবসমাজ। গাঙ্গেয় সভ্যতার ঐতিহ্যবাহী ভারতের প্রতি তাঁর সশ্রদ্ধ উচ্চারণ :
Passage to India!
Lo, soul! seest thou not God’s purpose
from the first?
The earth to be spann’d, connected by
network,
The races, neighbours, to marry and be
given in marriage,
The oceans to be cross’d, the distant
brought near,
The lands to be wedded together.
এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা কবি চান সাঁতার দিয়ে অগাধ জল পার হয়ে যেতে। ‘শেষের কবিতা’য় অমিতর কণ্ঠে আমরা শুনি এই কবিতারই অন্য একটি অংশের আংশিক অনুবাদ : ‘আমরা যাব যেখানে কোনো / যায়নি নেয়ে সাহস করি, / ডুবি যদি তো ডুবি-না কেন - / ডুবুক সবই, ডুবুক তরী’।
রবীন্দ্রনাথ হুইটম্যান পড়তে ও পড়াতে ভালোবাসতেন। তাঁর ‘গদ্যছন্দ’ প্রবন্ধে যেমন তিনি ‘I saw in Louisiana a live-oak growing’ কবিতাটির প্রাঞ্জল অনুবাদ করেছিলেন গদ্যকবিতার সৌন্দর্য বোঝাতে, তেমনই বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়কে চিঠিতে লিখেছিলেন :
‘তোমাদের হুইটম্যানের কাব্যালোচনার প্রচেষ্টা জয়যুক্ত হোক্, এই ইচ্ছা করি। প্রকাণ্ড একটা খনি, ওর মধ্যে নানান কিছুর নির্বিচারে মিশোল আছে, এরকম সর্বগ্রাসী বিমিশ্রণে প্রচুর শক্তি ও সাহসের প্রয়োজন – আদিমকালের বসুন্ধরার সেটা ছিল – তার কারণ তখন তার মধ্যে আগুন ছিল প্রচণ্ড – এই আগুনে নানা মূল্যের জিনিস গলে মিশে যায়। হুইটম্যানের চিত্তে সেই আগুন যাতা কাণ্ড করে বসেচে। জাগতিক সৃষ্টিতে যে রকম নির্বাচন নেই, সংঘটন আছে, এ সেই রকম – ছন্দোবদ্ধ সব লণ্ডভণ্ড – মাঝে মাঝে এক একটা সুসংলগ্ন রূপ ফুটে ওঠে আবার যায় মিলিয়ে। যেখানে কোনো যাচাই নেই সেখানে আবর্জনাও নেই, সেখানে সকলের সব স্থানই সস্থান। এক দৌড়ে সাহিত্যকে লঙ্ঘন করে গিয়েছে এই জন্যে সাহিত্যে এর জুড়ি নেই – মুখরতা অপরিমেয় তার মধ্যে সাহিত্য অসাহিত্য দুই সঞ্চরণ করচে আদিম যুগের মহাকায় জন্তুর মতো। এই অরণ্যে ভ্রমণ করতে হলে মরিয়া হওয়ার দরকার।’ (৩০ আষাঢ়, ১৩৪৪)
বিজয়লালের উদ্যোগে ১৯৩৭-এ হুইটম্যান-জয়ন্তী উদ্যাপনের আমন্ত্রণকে কেন্দ্র করেই রবীন্দ্রনাথ এই আশীর্বাণী পাঠান। সেই চিঠিতে বিজয়লাল হুইটম্যান ও রবীন্দ্রনাথের সাদৃশ্য নির্দেশ করেছেন। গণতন্ত্রের কবি হুইটম্যান ও মুক্তিপ্রিয় রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বপ্রেমিক ও যৌবনদীপ্ত এই দুই কবির ভাবসাযুজ্যের উল্লেখ সেখানে করেছিলেন বিজয়লাল। জানা যায়, রবীন্দ্রনাথের উৎসাহেই সত্যেন্দ্রনাথ হুইটম্যানের দুটি কবিতা তাঁর অনুবাদ-সংকলন ‘তীর্থসলিল’ ও ‘তীর্থরেণু’তে রেখেছিলেন (‘পথের পথিক’ ও ‘পতিতার প্রতি’)। এছাড়াও ‘তুমি রবে কি বিদেশিনী’ সংকলনে ‘নিজের সত্তার গান করি’ সহ বেশ কিছু অনুবাদ রেখেছিলেন বিষ্ণু দে। শঙ্খ ঘোষ ও অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত সম্পাদিত ‘সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত’ সংকলনেও রয়েছে তাঁর কবিতার বেশ কিছু অনুবাদ। তবে বাঙালির কাছে হুইটম্যানকে খণ্ডিতভাবে হলেও দুই মলাটে তুলে এনেছিলেন কবি-অনুবাদক প্রেমেন্দ্র মিত্র। তাঁর ‘হুইটম্যানের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ (১৯৫৮) হুইটম্যানের জন্মদিন ৩১ মে প্রকাশ পায় দীপায়ন প্রকাশ ভবন থেকে। ৩৮টি কবিতার এই গ্রন্থে পূর্ণাঙ্গ ও আংশিক দু’রকম অনুবাদই রয়েছে। প্রতিটি কবিতার নামকরণ করেছেন অনুবাদক। এই অনুবাদের সূত্রেই তিনি আমেরিকা যাওয়ার আমন্ত্রণ পান, পরবর্তীকালে গিয়েওছিলেন। এই মার্কিন কবির প্রভাব ও প্রেরণা তাঁর কবিতায় আজীবন সক্রিয় ছিল। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে খালেদ হামিদি ‘তৃণপত্র’ নামে হুইটম্যান অনুবাদ করেছেন।
৫।
‘শনিবারের চিঠি’ একদা জীবনানন্দ দাশের ‘বোধ’ ও ‘আজ’ কবিতাকে ব্যঙ্গ করে ‘নব সাহিত্যের হুইটম্যান’ বলে ঠাট্টা করেছিলো : ‘আজকালকার কবিদের নিকট যে হাড় মাংস রক্ত কিছুই বাদ যায় না, তাহা আমরা প্রগতির হুইটম্যান শ্রী জীবনানন্দের বাণীতে শুনিয়াছি। একেবারে রাক্ষসী বুভুক্ষা’। যদিও এই সমালোচনার উৎস ‘প্রগতি’র পাতায় বুদ্ধদেব বসুর জীবনানন্দের কবিতার রুক্ষতা ও দেশজ শব্দের ব্যবহার নিয়ে প্রশংসাসূচক আলোচনা। কিন্তু প্রেমেন্দ্র মিত্র ও হুইটম্যান যেন সমার্থক ছিল। ভৃগুকুমার গুহ প্রগতির পাতাতেই ‘অতি আধুনিক সাহিত্যের রূপ-সন্ধান’ প্রসঙ্গে হুইটম্যানের প্রেরণাকে আশীর্বাদস্বরূপ দেখেছেন। বিশেষত প্রেমেন্দ্রের ‘মানবক’ কবিতার অংশ উদ্ধার করেছেন, এছাড়াও অন্যান্য কবিতার উল্লেখ করে দেখিয়েছেন ভাবের দিক দিয়ে হুইটম্যানের ‘A woman waits for me’ ও প্রেমেন্দ্রের ‘সৃষ্টির প্রথম প্রাতে বিধাতার মনে যে-কথাটি ছিল সঙ্গোপনে’ একই। তাঁর ভাষায় ‘হুইটম্যানের যে আকাঙ্ক্ষা ক্ষুধার্ত সিংহের ভীম হুঙ্কারের মতো গর্জিয়া উঠিয়াছে, সেই আকাঙ্ক্ষাকেই প্রেমেন্দ্র মিত্র স্নেহ দিয়া, সৌন্দর্যবোধ দিয়া একটি স্নিগ্ধ সুষমায় মণ্ডিত করিয়া লইয়াছেন’।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের বিখ্যাত পঙ্ক্তি ‘আমি কবি যত কামারের আর কাঁসারির আর ছুতোরে, / মুটে মজুরের / - আমি কবি যত ইতরের’ এর পাশে রেখে পড়া যায় হুইটম্যানের ‘I am enamour’d of growing out-doors, / Of men that live among cattle or taste of the / ocean or woods / of the builders and steerers of ships and / wielders of axes and mauls / and the drivers of horses, / I can eat and sleep with them week in and week out’। আবার ‘I believe in the flesh and appetite’ উচ্চারণ করা হুইটম্যানের প্রেরণাতেই প্রেমেন্দ্র লেখেন ‘মানুষের মানে চাই - / গোটা মানুষের মানে! / রক্ত, মাংস, হাড়, মেদ, মজ্জা / ক্ষুধা, তৃষ্ণা, লোভ, কাম হিংসা সমেত -’। হুইটম্যানের মতো প্রেমেন্দ্রও গেয়েছেন ‘রাস্তা’র গান, যে রাস্তার ধুলো-কাঁকর-খোয়া-পাথর কিছুই তুচ্ছ নয় আর তাঁর কাছে। শ্রমজীবী মানুষের প্রতি অনুরাগে ‘পাঁওদল’ বা ‘বেনামী বন্দর’-এর কবি যে হুইটম্যানের মানবতাবাদ ও গণতন্ত্রানুরাগের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন তাতে সন্দেহ নেই (‘I hear the workman singing and farmer’s wife singing’ )। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তকে লেখা চিঠিতেও প্রেমেন্দ্র মিত্র হুইটম্যানের কবিতায় কমরেডশিপের মূল্য নিয়ে কথা বলেছেন (যেমন : ‘Camarado, I give you my hand! I give you my love more precious than money’)।
তবে এই প্রভাবের পাশাপাশি অনুবাদক প্রেমেন্দ্র মিত্রের কৃতিত্ব স্বল্পকথায় আলোচনার অপেক্ষা রাখে। ‘কবি হুইটম্যান ও প্রেমেন্দ্র মিত্র’ প্রবন্ধে মঞ্জুভাষ মিত্র কবির অনুবাদক সত্তার পরিচয় তুলে ধরেছেন, তাঁর কাব্যে হুইটম্যানের প্রভাবও আলোচিত হয়েছে। আর তরুণ মুখোপাধ্যায়, দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের প্রবন্ধগুলিতে মূল এবং অনুবাদকে পাশাপাশি রেখে প্রেমেন্দ্রর কৃতিত্ব বিচার করেছেন। তিনটি নমুনা উদ্ধার করা যেতে পারে,
অনুবাদ :
যেমন পুরুষের তেমনি নারী-দেহের গানও গাই।
আবেগে স্পন্দনে শক্তিতে বিপুল যে জীবন,
আনন্দময় যে জীবন ঐশ্বরিক নিয়মের শাসনে সৃষ্ট,
সেই আধুনিক মানুষের গান আমি গাই। (নিজের গান গাই)
[মূল : The Female equally with the Male I sing. / Of Life immense in passion, pulse, and power, / Cheerful, for freest action form’d under the laws divine, / The Modern Man I sing. (One’s-Self I Sing) ]
অনুবাদ :
শান্ত হও, স্বচ্ছন্দ হও আমার কাছে।
আমি ওয়াল্ট হুইটম্যান; উদার ও প্রাণবন্ত
প্রকৃতির মতই।
যতক্ষণ না সূর্য বিসর্জন দেয় তোমায়
আমি তোমায় বিসর্জন দেব না। (কোনো সাধারণ পতিতার প্রতি)
[ মূল : Be composed – be at ease with me – I am Walt Whitman, liberal and lusty / as Nature; / Not till the sun excludes you, do I exclude you; (To a Common Prostitute)]
অনুবাদ :
দ্বারপ্রান্তে শেষ যখন ফুটেছে লাইলাক
আর রাত্রে পশ্চিমাকাশে সেই উজ্জ্বলতম তারা
গিয়েছে অস্ত –
শোকাহত হয়েছি আমি, - বারবার এমনি হব শোকার্ত
বসন্ত যখন ফিরবে। (সমাপ্তি সঙ্গীত)
[মূল : When lilacs last in the door yard bloom’d, / And the great star early droop’d in the western/ sky in the night, / I mourn’d – and yet shall mourn with ever / returning spring. (When lilacs last in the Door-yard Bloom’d)]
উদাহরণ দীর্ঘ করে লাভ নেই। অনুচ্ছেদ ও পঙ্ক্তিবিন্যাসে স্বাধীনতা নিলেও প্রেমেন্দ্র মিত্র যে মূলানুগত তা এইসব অনুবাদকে মূলের পাশে রেখে পড়লে আমরা সহজেই বুঝতে পারি। হুইটম্যানের গদ্যছন্দের দৃপ্ত চলন এবং ভাবনার নিজস্বতাকে প্রেমেন্দ্র বঙ্গানুবাদের হুইটম্যানীয় চরিত্র বজায় রেখেই বাঙালির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। মাঝে মাঝে যদিও দীর্ঘ কবিতাকে সংক্ষিপ্ত করেছেন বা নির্বাচিত অংশের অনুবাদ করেছেন - একথা মেনে নিয়েও তাঁর অনুবাদক সত্তাকে বিশ্বাসঘাতক বলা যায় না কখনোই। তাঁর মৌলিক কবিতায় হুইটম্যানের প্রভাবের পাশাপাশি অনুবাদের ভিতর দিয়ে হুইটম্যানকে পুনর্লিখন, বাংলা কবিতার ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলে মনে করা হয়।
৬।
অতীতের সঙ্গে দূরত্ব রচনা করে জনগণতান্ত্রিক আধুনিক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন হুইটম্যান। তাঁর কবিতার ছন্দ ও বিষয়ের ক্ষেত্রেও অবাধ স্বাধীনতা আনতে চেয়েছিলেন। শরীরী উদ্যাপনকে করে তুলেছিলেন কবিতার অনিবার্য শর্ত। এসব স্বাধীন চিন্তা উত্তরকালের কবিদের প্রভাবিত করলেও, শেষাবধি বোদল্যার বা মালার্মের প্রেরণাই আধুনিক কবিমানসে ক্রমশ গুরুত্ব পেতে থাকে। সমালোচকদের একাংশ মনে করেন ‘বস্তুত হুইটম্যানের আধুনিকতা তাঁর কবিতার ভাববস্তুতে তত প্রকাশ পায় না, যতটা প্রকাশ পায় তাঁর ছন্দের মুক্ত প্রয়োগে’। এসব সমালোচনা সত্ত্বেও হুইটম্যানের কবিতা আমাদের কাছে আজও অপ্রাসঙ্গিক মনে হয় না কিছুতেই। লোরকা যেমন তাঁর ‘ওড টু হুইটম্যান’ কবিতায় ‘lovely Whitman’-এর প্রতি তাঁর স্বপ্নিল মুগ্ধতা ব্যক্ত করেন কিংবা নেরুদা হুইটম্যানের হাত ধরে হেঁটে যান তাঁর তৃণভূমিতে; তেমনই এ-বঙ্গেও তাঁর জন্মদ্বিশতবর্ষে সত্তরের কবি লিখে ফেলেন নতুন স্তোত্র :
বলেছিলেন, আমি কবি
মানুষগুলোর,
দাম দিই না সোনামুঠির;
পথের ধুলোর
(উপরে) যা কিছু পাই
নিই কুড়িয়ে,
সবুজ ঘাসে ছড়াই যে প্রাণ
তাই বুড়িয়ে
যাইনি আজো; আছি দ্যাখো
সমান তাজা;
সার জেনেছি এই দুনিয়ায়
সবাই রাজা!
মুক্তি এবং স্বাধীনতা
আমার যে ধ্যান –
বিপ্লবেরই গান গেয়েছি
(আমি) সেই হুইটম্যান! (হুইটম্যান / তরুণ মুখোপাধ্যায়)
এভাবেই উদার আর প্রাণবন্ত প্রকৃতির মতো ওয়াল্ট হুইটম্যানের গদ্যকবিতাগুলি বাঙালি কবিদের প্রেম ও প্রতিবাদী সত্তাকে বিকশিত করে। তাদের বলতে শেখায় ‘Give me the splendid silent Sun, with all his beams full-dazzling’। মৃত্যুও তাঁর কাছে পরমসুন্দর হয়ে ধরা দেয়। বাঙালির প্রিয় কবি জীবনানন্দের কবিতায় সূর্যে সূর্যে চলার যে-অঙ্গীকার পাই সেও তো এমনই দীপ্তিময় আর আস্তিক্যবোধে উজ্জ্বল : ‘মৃত্যুই অনন্ত শান্তি হয়ে / অন্তহীন অন্ধকারে আছে / লীন সব অরণ্যের কাছে। / আমি তবু বলি : / এখনও যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে-সূর্যে চলি, / দেখা যাক পৃথিবীর ঘাস / সৃষ্টির বিষের বিন্দু আর / নিষ্পেষিত মনুষ্যতার / আঁধারের থেকে আনে কী করে যে মহানীলাকাশ,’ - বাংলা কবিতার আকাশে হুইটম্যানের স্বপ্নের আলো এইভাবে বিকীর্ণ হয়ে যায়।
অনুকথন
বাংলায় হুইটম্যান অনুবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকলন প্রকাশ পায় ২০০৬ সালে, প্রকাশক এম.সি.সরকার, সম্পাদক কবি আশিস সান্যাল। মোট সাতচল্লিশটি ছোট-বড়ো কবিতার অনুবাদ দিয়ে সাজানো এই সংকলনে অনুবাদকের তালিকা শুরু হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে, রয়েছেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রমুখ এবং শেষ অনুবাদক একালের দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়। প্রাঞ্জল কয়েকটি অনুবাদের কিয়দংশ এখানে উদ্ধার করা হলো :
১) রাতের সমুদ্রের বেলাভূমিতে
বাবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে একটি মেয়ে
দেখছে পুবের হেমন্ত-আকাশ। (রাতে সমুদ্রের বেলাভূমিতে, আশিস সান্যাল অনূদিত)
২) একটি মেয়ে আমার অপেক্ষায় থাকে, নারীত্বের সব মহিমা
তার আছে, কিছুরই অভাব নেই, আসলে শরীর না থাকলে
একটি মেয়ের আর কিছুই রইল না, একটা যথার্থ পুরুষের
আর্দ্রতা না পেলেও সে একেবারে নিঃস্ব। (আমার অপেক্ষায় এক নারী, উত্তম দাশ অনূদিত)
৩) শান্ত হও, স্বাভাবিক হও, এই আমি – আমি ওয়াল্ট হুইটম্যান
উদার এবং প্রকৃতির মতো আর্ত
সূর্য তোমাকে আজো পরিত্যাগ করতে পারেনি, আমি কি করে তোমাকে
পরিত্যাগ করি বলো... (সাধারণ এক বেশ্যাকে, সুবোধ সরকার অনূদিত)
ঋণস্বীকার
১) Walt Whitman (1891-92), Leaves of Grass, Modern Library, New York
২) প্রেমেন্দ্র মিত্র (২০১৫), কবিতাসমগ্র, সিগনেট প্রেস, কলকাতা
৩) রণজিৎ কুমার সেন (১৯৮৩), বিশ্ব-মনীষী প্রসঙ্গ, ফার্মা কে এল এম, কলকাতা
৪) বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায় (১৯৯১), রবীন্দ্রনাথ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, কলকাতা
৫) উজ্জ্বলকুমার মজুমদার (২০০১), নির্বাচিত প্রবন্ধ, পুস্তক বিপণি, কলকাতা
৬) তরুণ মুখোপাধ্যায় (২০০৬), প্রেমেন্দ্র মিত্র : কবি ও গল্পকার, প্রতিভাস, কলকাতা
৭) দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৯৮), কাব্যের মুক্তি ও তারপর, পুস্তক বিপণি, কলকাতা
৮) শুভব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, ওয়াল্ট হুইটম্যান : স্বপ্নের অনুলিপিকার, দেশ : বই সংখ্যা (২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯)
৯) তরুণ মুখোপাধ্যায় সংকলিত (১৪২৩), সুনির্বাচিত জীবনানন্দ ৮০, যূথিকা বুক স্টল, কলকাতা
১০) তরুণ মুখোপাধ্যায় ও শীতল চৌধুরী সম্পাদিত (২০০০), প্রেমেন্দ্র মিত্র ও আধুনিক বাংলা সাহিত্য, সাহিত্যলোক, কলকাতা
১১) আশিস সান্যাল সম্পাদিত (২০০৬), ওয়াল্ট হুইটম্যানের কবিতা, এম.সি. সরকার, কলকাতা অ্যাণ্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড
১২) Krisha Sen and Ashok Sengupta Edited (2017), A Short History of American Literature, Orient Black Swan, Hyderabad
১৪) গণশক্তি, শারদ সংখ্যা : ২০১৯
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন