সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২

কাজল সেন-এর ঝুরোগল্প

পশুপতি

 

ফুলশয্যার রাতে শরদিন্দুকে আদর করতে করতে শ্রদ্ধা বলল, আমি কিন্তু তোমাকে শরদিন্দু নামে ডাকতে পারব না। আমি ডাকব পশুপতি নামে। তোমাকে  এটা মেনে নিতেই হবে!

শ্রদ্ধার আবদারে ঘাবড়ে গেল শরদিন্দু। আবার কেমন আবদার!

-কেন? পশুপতি নামে ডাকবে কেন? শরদিন্দু নামটা কি খারাপ? তুমি জানোআমার দাদু এই নাম রেখেছিল?

শ্রদ্ধা ঠোঁট ওল্টালো। বলল, তোমার দাদু রেখেছিল, নাকি দিদা রেখেছিল, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি পশুপতি নামেই ডাকব।

-কিন্তু কেন? এমন একটা উদ্ভট নামে আমাকে ডাকবে কেন?

শ্রদ্ধা খিলখিল করে হেসে উঠে বলল, মা! তুমি জানো না বুঝি?

-কী জানি না?

-বিয়ের আগে যার সাথে আমার প্রেম ছিল, শুধু প্রেম নয়, বিয়ে হবারও কথা ছিল, তার নাম ছিল পশুপতি।

-সেকী! তাহলে পশুপতিকে বিয়ে না করে আমাকে বিয়ে করলে কেন?

-করতেই হলো। না করে আমার উপায় কী! পশুপতির সঙ্গে যে আমার ব্রেকআপ হয়ে গেল! তুমি কি জানো, ব্রেকআপ হয়ে গেলে মেয়েদের কী কষ্ট হয়? কতটা তারা দুঃখে ভেঙে পড়ে?

শরদিন্দু শ্রদ্ধার কথার আগাপাশতলা বুঝতে না পেরে ক্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকল। সেইসঙ্গে তার মনে সন্দেহের কাঁটা ফুটল, শ্রদ্ধার মাথায় কি ছিট আছে?

 

পাত্রপক্ষ এবং পাত্রীপক্ষ উভয়পক্ষই পাত্র-পাত্রী দেখাশোনা করে এই বিয়ে ঠিক করেছিল। তার আগে শরদিন্দু শ্রদ্ধা পরস্পরের পরিচিত ছিল না। এখনও পরিচিতিটা পুরোপুরি হয়নি, সবেমাত্র শুরু হয়েছে, আর শুরুতেই রীতিমতো ধাক্কা খেতে হচ্ছে শরদিন্দুকে। মেয়েটা বলে কী! ফুলশয্যার রাতে কোনো আনকোরা বউ কখনও তার আনকোরা বরকে তার বিয়ের আগের প্রেমিকের কথা বলে নাকি? এবং শুধু তাই নয়, বরের পিতৃদত্ত নাম পর্যন্ত বদলে দিয়ে তার প্রেমিকের নামে সম্বোধন করছে! অদ্ভুত তো!  

 

সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই বাড়ির সবাই জেনে গেল, নতুন বৌমা তার বরকে পশুপতি নামে ডাকে। সবাই অবাক হলো, কিন্তু মজাও পেল। কেউ কেউ শরদিন্দুকে রাগাবার জন্য তাকে পশুপতি নামে ডাকতে শুরু করল। শরদিন্দু পড়ল আজব ফ্যাসাদে। কীভাবে এই উৎকট ঝামেলা থেকে পরিত্রাণ পাবে, তাই ভেবে ভেবে তার মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেল। প্রায় প্রতিদিন রাতেই সে শ্রদ্ধাকে বোঝাতে চেষ্টা করে, আমাকে পশুপতি নামে তোমার যখন ডাকতে সাংঘাতিক ইচ্ছে হয়, তখন তাই ডেকো, কিন্তু আড়ালে ডেকো, সবার সামনে নয়। তুমি বুঝতে পারছ না কেন, আমাদের নিয়ে সবাই কেমন হাসাহাসি করে! বলে, শ্রদ্ধার মাথাটা খারাপ।

সঙ্গে সঙ্গে রুখে দাঁড়াল শ্রদ্ধা। বলল, হ্যাঁ, ঠিকই তো বলে! যেদিন থেকে পশুপতির সঙ্গে আমার ব্রেকআপ হয়েছে, সেদিন থেকেই আমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে। আমি পশুপতিকেই আমার পতি বলে বিয়ের আগে থেকে ভেবে এসেছি। এখন তুমিই বলো, পশুপতির সঙ্গে তো ব্রেকআপ হয়ে গেছে, তাকে তো আর আমি পতি রূপে পাইনি। তাই তোমাকেই আমি আঁকড়ে ধরেছি পশুপতি মনে করে। তুমি কেন যে বুঝতে পারছ না, কে জানে

 

1 টি মন্তব্য: