একটি উৎসর্গ
থ্যাঁৎলানো আত্মার মুখগুলি আর মুখশূন্য যারা
অস্ত্র নিতে পারে অথবা ধ্বংস করতে পারে বিরূপ নড়াচড়ায়
যা কখনও বাস্তবিক ঘটে না যতক্ষণ না সেই মূর্খের মতো
যে চেয়েছিল সমুদ্র শান্ত হবে তুমি তাকে থামাতে চাও
আর তোমার মাথা থেকে ওজনটুকু ঝট করে উড়ে যায় সরল
প্রাকৃতিক নিয়মে। এ কোনো উপমা নয়, ইচ্ছাবিহীনদের,
সেই সিক্ত মানুষদের যারা ঘরে ফেরে ওজন বইবার লোহার ফ্রেমের নিচে।
সেই মানুষেরা যারা কখনও বুঝবে না আনন্দ অথবা আনন্দময়তাকে।
যতক্ষণ না শেষ বিশুদ্ধ স্বাধীনতাকামী মিথ্যুকটার
মৃত্যু হচ্ছে। মুখ মাটিতে, সমুদ্রের গতিতে জড়ানো।
শব্দেরা পচন ধরায় চকচকে হাড়ে।।
[ঊনিশশো তিরিশের দশকে প্যারিসে বসবাসকারী তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ, এমে সেজেয়ার, লেয়ঁ দামা ও লেপোল্ড সাঁগরের প্রভাবে সমগ্র পৃথিবীর কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের মানবতাবোধ জাগ্রত করবার আন্দোলন ‘নেগ্রিত্যুড মুভমেন্ট’ সুরু হয়। সেই ঢেউ আমেরিকায় প্রবাসী লক্ষ লক্ষ আফ্রিকান মানুষের বুকেও দোলা দিল। তিনদশক পেরিয়ে এসে সেখানে শুরু হল কৃষ্ণশক্তি আন্দোলন বা ‘ব্ল্যাক পাওয়ার মুভমেন্ট’। এর আগে সেখানে যে কালো মানুষের আন্দোলন বা ‘হার্লেম রেনেশঁস’, হয়েছিল তা ছিল মূলতঃ সাংস্কৃতিক আন্দোলন। কিন্তু কৃষ্ণশক্তি আন্দোলন এক কৃষ্ণাঙ্গ রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ হল। কালো মানুষ এতদিনে তাঁদের সুপ্রাচীন মাতৃভূমি আফ্রিকাকে স্মরণ করলেন, নিজেদের প্রথমে আফ্রো-আমেরিকান ও তারপর আফ্রিকান-আমেরিকান বলে চিহ্নিত করতে থাকলেন। শ্বেতাঙ্গ আমেরিকা থেকে নিজেদের আলাদা করতে চেয়ে অনেকেই আমেরিকান নাম পালটে নিজেদের নতুন আফ্রিকান নাম রাখলেন। তিনজন কবি নতুন নাম নিলেন ইমামু আমিরি বারাকা, হাকি মধুবুটি আর এনিটজাকে শাঙ্গে।
ইমামু আমিরি বারাকার জন্ম ১৯৩৪ সালে, হার্লেম রেনেশঁস আর কৃষ্ণশক্তি আন্দোলনের মাঝামাঝি সময়ে। ২০১৪ সালে মৃত্যু হয় কবির। আমেরিকান নাম লেরয় জোনস-এর পরিবর্তে আফ্রিকান নাম নেবার মধ্যেই তাঁর সুগভীর জাতিচেতনার পরিচয় মেলে। বারাকার কবিতায় একদিকে যেমন কৃষ্ণাঙ্গ জাতিচেতনার প্রকাশ, তেমনই তাঁর কন্ঠস্বরে আমেরিকার কালো অভিজ্ঞতার মূলে যে হিংস্রতা তার পূর্ণ অভিব্যক্তি। এই হিংস্রতার প্রকাশের জন্য তাঁর কবিতা কিছু বিতর্ক তুলেছিল, কিন্তু একজন শ্রেষ্ঠ আফ্রিকান আমেরিকান কবি হিসেবে আজ তিনি পূর্ণ স্বীকৃতি পেয়েছেন।]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন