সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১

তরুণ মুখোপাধ্যায়-এর ঝুরোগল্প


 অনুসন্ধানী

বাড়িশুদ্ধ লোকের আজ দুপুরে ভাতঘুমটা বেশ গাঢ় হয়েছে। ঘুম যখন ভাঙল, ঘড়িতে তখন বিকেল সাড়ে চারটে। হাই তুলতে তুলতে মঞ্জু দেবী বলেন, এম্মা! বড্ড অবেলা হলো দেখছি। বৌমা, তাড়াতাড়ি চা করো তো। বীরেনবাবুও গলা তুলে বলেন, বৌমা, আমার চায়ে একটু আদার রস দিয়ো কিন্তু।

রান্নাঘর থেকে রিঙ্কু বলে, আচ্ছা। গ্যাস ওভেনে আমি চা বসিয়ে দিয়েছি।

এমন সময় শুভমের উৎকণ্ঠিত গলা শোনা যায়। - ওমা, ঝিঙ্কুসোনা কই?

-             অ্যাঁ! সে কি! সমস্বরে সবাই চেঁচিয়ে ওঠে।

বীরেনবাবু বলেন, তোদের ঘরেই তো দুপুরে শুয়েছিল। খুঁজে দ্যাখ এঘর-ওঘর গেছে কিনা।

মঞ্জুদেবী বলেন, হ্যাঁরে ছাদের দরজা, বাইরের গেট বন্ধ তো? ঝিঙ্কুসোনার কাকা নিলয় বলে, সব বন্ধ। ওইটুকু বাচ্চা যাবে কোথায়? তবে বড্ড জল ভালোবাসে। বাথরুমে নেই তো?

নাহ্‌, সেখানেও তাকে পাওয়া যায় না।

রান্নাঘর থেকে ছুটে আসে রিঙ্কু। কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমার ঝিঙ্কুসোনা কোথায় গেল? কী হলো? ওর কিছু হলে আমি বাঁচবো না।

শ্বশুর-শাশুড়ী দুজনেই বলেন, আজেবাজে ভেবো না বৌমা। দাদুভাইয়ের কিচ্ছু হবে না। কোথাও দুষ্টুমি করে লুকিয়ে আছে দ্যাখো। চলো, সবাই মিলে খুঁজি। - দা-দু-ভা-...

 

মাত্র আড়াই বছর বয়স ঝিঙ্কুর। কোথায় যেতে পারে সে? কে তাকে চুরি করবে? সাতপাঁচ ভেবে নিলয় বলে, দাঁড়াও, বাইরের উঠোনটা দেখি। ওখানে অনেক ফুলের টব আছে। ফুল খুব ভালোবাসে। গিয়ে দেখি তো।

সবাই ছুটে যায়। দ্যাখে, বড় একটা টবের পাশে /৫টা ভাঙা পোলট্রির ডিম হাতে নিয়ে ঘাঁটছে ঝিঙ্কু।

-             একি রে! তুই এখানে কি করছিস? ডিম কে ভাঙল?

হাসিমুখে ঝিঙ্কু বলে, আমি ভেঙেছি কাকা। ডিম থেকে পাখির বাচ্চা বের করছিলাম। কিন্তু একটাও পেলাম না। বলতে বলতে ঝিঙ্কুর দুচোখ জলে ভরে যায়।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন