বিশ্বাস-অবিশ্বাস
সম্পর্কটা অনেকদিনের। সম্পর্কটা বন্ধুত্বের। একটু একটু করে জমাট বাঁধতে বাঁধতে পাকাপোক্ত হয়ে উঠেছে। সুভদ্র ও নীহারিকা, দুজনেই বিশ্বাস করত, তাদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক তারা সারাজীবন অটুট রাখতে পারবে। কোনো কিছুই তাদের সম্পর্ককে আলগা করতে পারবে না। কিন্তু জীবন কঠিন বাস্তব। সরল সমীকরণ মাঝে মাঝেই তার দিশা পরিবর্তন করে জটিল হয়ে ওঠে। ফাটল ধরে সম্পর্কে।
সুভদ্র ও নীহারিকা, দুজনেই বিশ্বাস করত, বন্ধুত্বের কোনো জেন্ডার হয় না। মেয়েবন্ধু বা ছেলেবন্ধু বলে কিছু হয় না। শুধুই বন্ধু হয়। কো-এডুকেশন স্কুল ও কলেজের তারা সহপাঠী। বি টেক করার পর রাজারহাটে একই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে তারা চাকরি করে। যেদিন সুভদ্র গাড়ি বের করে, সেদিন নীহারিকা সুভদ্রর গাড়িতে, আবার পরের দিন নীহারিকা্র গাড়িতে সুভদ্রর অফিসে আসা যাওয়া।
যারা তাদের একসঙ্গে এভাবে অফিসে আসা যাওয়া করতে দেখেছে, অফিসের পর বা ছুটির দিনে শপিংমলে বা রেস্তোরাঁয়, নন্দনে বা রবীন্দ্রসদনে হাত ধরাধরি করে হাঁটতে দেখেছে, তারা ভেবেছিল যে, সুভদ্র ও নীহারিকা খুব তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলবে, তার আগে চুটিয়ে প্রেমের মজাটাও ভোগ করে নিচ্ছে। মাঝে মাঝেই লং ড্রাইভে যায় দুজনে। কখনও সুভদ্র স্টিয়ারিং সামলায়, কখনও নীহারিকা। আগে থেকে প্ল্যানিং না করেই বেরিয়ে পড়ে, তারপর খেয়াল খুশি মতো কোনো একটা জায়গায় পৌঁছে যায়। সেখানে হয়তো দেখার কিছুই নেই, কেউ যায়ও না, কিন্তু তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না। ধাবায় বসে খায়। ড্রিংক করে। নেশার ঘোরে বকে যায় আলফাল। একটু বেসামাল হলেই একে অন্যের গায়ে ঢলে পড়ে।
এতটা পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। বন্ধুত্বের সম্পর্ক অটুট ছিল। কিন্তু সেবার লং ড্রাইভে হঠাৎ চলে গেছিল মুকুটমণিপুর। সেখানে পৌঁছে ঠিক করেছিল, সন্ধ্যের আগেই কলকাতায় ফিরে আসার জন্য রওয়ানা হবে। কিন্তু ফেরার পথে হঠাৎই বিপত্তি। সুভদ্রর গাড়ি আচমকা বিদ্রোহ ঘোষণা করল। তখন সন্ধ্যের অন্ধকার নেমে এসেছে। তবে জায়গাটায় ছোটখাটো বাজার ছিল। গাড়ি সারানোর গ্যারেজও পাওয়া গেল। কিন্তু মেকানিকস গাড়ি পরীক্ষা করে বলল, আগামীকাল সকালের আগে গাড়ি চালু করা যাবে না।
অগত্যা সুভদ্রা ও নীহারিকাকে সেখানেই একটা সাধারণ লজে রাতটা থেকে যেতে হলো। থাকার প্ল্যান ছিল না, তাই রাতে শোবার জামাকাপড় ছিল না সঙ্গে। ছিল না আরও আনুষাঙ্গিক অনেক কিছু।
তখন রাত কত গভীর, জানা ছিল না কারও। সারাদিনের ঘোরাঘুরির ক্লান্তিতে শরীরটা এলিয়ে পড়েছিল বিছানায়। ঘুমিয়ে পড়েছিল দুজনেই। কিন্তু কী এক শারীরিক অস্বস্তিতে নীহারিকার ঘুম ভেঙে গেছিল। অন্ধকারে কিছু দেখতে না পেলেও নীহারিকা অনুভব করল, একটা হাত খুব সচেতনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার দুই উদ্ধত স্তনে। নীহারিকা শিহরিত হলো। এর আগেও কখনও কখনও খেলাচ্ছলে সুভদ্রর সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি করার সময় সুভদ্রর হাত স্পর্শ করেছে তার স্তন। কিন্তু সে স্পর্শের ভাষা ছিল আলাদা। এ-এক সম্পূর্ণ অন্য ভাষা। এ ভাষায় মুখর হয়ে উঠেছে কাম। নীহারিকা নিঃশব্দে লজ থেকে বেরিয়ে গেল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন