ট্রিট
অই,অই লেগে গেল ধুন্ধুমার। ঘরের জিনিসপত্র দুমদাম পড়ছে। কাঠের ঘর কাঁপানো ধড়াস ধড়াস শব্দে বুক কাঁপে।
-‘এক্সট্রিমলি সরি, তুলাসের পায়ে আলাস্কার বালি। ও শ্লেজ প্র্যাক্টিস করে ডাইরেক্টলি এখানে এসে তোমার ফ্লোর কার্পেট নোংরা করে দিচ্ছে’। আফগানি দম্পতির আফসোস।
-‘ও কিছু না। আংকেল আছে না? সাফ করে দেবে’। আসন্ন প্রসবা বৌমার নির্লিপ্ত জবাব। কানাডার প্রত্যন্ত প্রান্তে আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে প্রসবকালীন কঠিন সময়টি নিরুদ্বেগে যেন পার হয়ে যায়। কিন্তু এ দেখি ভিন্ন জীবনযাপন ভিন্ন পৃথিবী। ভাইপো দম্পতি ও গেস্টের ডিনারের জন্য আমারটা বাদে মেনু অর্ডারের ডেলিভারি হয়ে গেছে। আরোস কালজো পরিজ, টার্কী বেকন এবং আরো খাবার, পর্ক বিফ দিয়ে হ্যাম ইত্যাদি। সঙ্গে পানীয়। আমার জন্যে একটুকরো কাঁচা চিকেন কিচেনে রাখা। দেশের কথা ভেবে চোখে একটু জল রেখে ভয়ে গুটিশুটি মেরে সোফার এক কোনায় বসে আছি।
মিশমিশে কালো কুকুর তুলাস আর সোনালী কুকুরী টুবির আলাপন তখন তুঙ্গে। খাবার খেতে খেতে সবাই লাইভ দেখছে। আরেক কানাডিয়ান দম্পতি হাঁ করে বসে গুণমুগ্ধ। একটি ল্যাব্রডোর ফক্স হাউন্ড কুকুর প্রজাতির সাথে একটি গোল্ডেন ডুডুল প্রজাতির সঙ্গমে এক বিরল সারমেয় বাচ্চা জন্ম নেবে। সেই বাচ্চা ঘরে নিয়ে যাবে এই স্বপ্নের আবেশ চোখে। ঘরের ভিতরে ম্লান সন্ধ্যেবাতি। এমন শিক্ষিত বায়ো অর্গেনিক কুকুরের প্রজনন এমনি করেই হয়? এসব হওয়ার পরে কতদিন পর বাচ্চা হয়? কোথায় কেমনভাবে? আমার মত কোনো হেল্পারের প্রয়োজন থাকে কী? এই বর্ণসংকর সারমেয়দের জন্য কি প্রকৃতি ভিন্ন জীবনযাত্রার কথা ভাববে,যেমন কানাডীয় স্ত্রীর গর্ভে আমার ভারতীয় ভাইপোর শিশু প্রজাতি? সেও কি ভুলে যাবে আমার মতো বিশুদ্ধ ইন্ডিয়ান নেড়ি সারাদিন অভুক্ত? আচ্ছা? আমারও চরিত্রের কি মিউটেশন হয়ে যাবে এখানে থাকলে?
–‘হ্যাভ ইউ ফিনিশড মাই সুইট হার্ট?’ আফগানি মহিলার গলা শুনে চমক ভাঙলো। দেখলাম তুলাস ও টুবি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। রান্নাঘর তাহলে ওদের প্রাইভেট রুম ছিল। সেখানেই হলো দ্রুতলয়ে সঙ্গম? ভালো। এরা বেশ শিক্ষিত। শ্লীল অশ্লীল বোঝে। দেখলাম, দুজনে খুব ক্লান্ত, একটুকরো মাংস ছেঁড়াছেঁড়ি করতে করতে আসছে।
-‘সরি আংকেল। আপনার মাংসটা টুবি খেয়ে ফেলেছে। নেক্সট টাইম ফ্রিজে রাখবেন। এখন এই প্যাকেটটা ধরুন। ডগস ট্রিট। ফ্রাঙ্কলিন ল্যাম্ব চপ। আর এই প্যাকেটে শুয়োরের ড্রাই ইন্টেস্টাইন। ওরা এলে আপনি ওদের ট্রিট দেবেন। ওরা খুব প্লিজড হবে’।
আমি সোফা ছেড়ে বাধ্য সেবকের মতো ট্রিট হাতে দাঁড়িয়ে পড়লাম। জোড়া কুকুর পুরো সোফা দখল করে শুয়ে পড়ল। আমার দিকে তাকালোও না। ওদের তো পেট ভরা? দেখলাম তিন দম্পতি ডাইনিং টেবিলে বসে পোকার খেলছে। হুঁশ নেই,আমি অভুক্ত। আমি কুকুরের পদতলে বসে পড়লাম। ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে। রান্নাঘরে আর কিছু খাবার নেই। আমি ট্রিট প্যাকেট থেকে কুত্তা খাবার মুখে পুরে চিবোতে লাগলাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন