কাগজের পৃষ্ঠাটা সাদা ছিল। তখনও কোনো কালির আঁচড় সাদা পৃষ্ঠায় লাগেনি। গল্পের প্রথম অংশে কোনো অক্ষর,শব্দ, বাক্য কিছুই ছিল না...। সাদা আর সাদা। দুধের মতন। কিংবা রূপকথার সমুদ্রের মতন।
একজন বাতিকগ্রস্থ লেখক ভাবল, গল্প-সল্পতে একটি গল্প লিখবে। কিন্তু শত শত শব্দে, কালো কালো অক্ষরে, অজস্র অজস্র সরল, যৌগিক এবং জটিল বাক্যে ভিড় করে আসা তার জীবন – এই মুহূর্তে কিছুই লিখতে পারল না৷ শুধু সাদা পৃষ্ঠার প্রথম অংশ ছেড়ে দিয়ে, নিচের দিকে প্রথমে সে একটি মেয়ের মুখ আঁকলো। তারপর একটি ছেলের। ছেলেটা ও মেয়েটার ছবির নিচে দুটো ফুটকি ও ড্যাশ দিয়ে ব্যর্থ লেখক গল্পটা শেষ করলেন।
গল্পটা পোষ্ট করা মাত্রই হৈ হৈ, রৈ রৈ করে কমেন্ট শুরু হোল। প্রথম জন লিখল, “এটা কী ছবি না গল্প? না কবিতা! না প্রবন্ধ? মহাশয় অনুগ্রহ করে একটু বলবেন?”
দ্বিতীয় জন, “আপনি কি সিম্বলিজ্ম এনে একটি জীবনের গল্প লিখতে চেয়েছেন”
তৃতীয় জন, এগুলো খ্যাপা লোকের খ্যাপামী।
“সাদা পৃষ্ঠা — মানে, সাদাটে মার্কা আমাদের — ফাঁকা জীবন৷ তার নীচে, একটি পুরুষের ও একটি নারীর ছবি৷ সব শেষে, বহু ব্যবহৃত আমাদের লেখ্য ভাষায় — কোলন চিহ্ন — প্রেম অথবা প্রেমহীনতা – অস্থিরতা –
লেখক এটাই বুঝাতে চেয়েছেন মনেহয়!” আরেকজন লিখল।
“নারী ও একটি পুরুষ — নীচে দুটো ফুটকি ও একটি ড্যাশ। এটি একটি চটি গল্প৷ এগুলো কি মাথায় কিলবিল করছে মশাই?”
অপর একজন লিখল, “সাদা পৃষ্ঠা – মানে আমাদের জীবনের মতন। শেষে প্রতীকের আশ্রয় — মানে ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পন। কোলন চিহ্ন মানে এখানে আমাদের লিঙ্গ চিহ্ন — শিব বা মঙ্গলের ধারণা৷”
একজন কমেন্টে লিখল, “যারা যারা খিল্লি করতে চাও সব এক লাইনে এসে দাঁড়াও।”
“কোলনের মতন দুটো ফুটকি পাশে ড্যাশ — অসভ্য। আপনি মানুষ না চতুষ্পদ?”
আরেকজন, “এই আপনাদের মতোন অসভ্য লোকদের জন্যই সাহিত্য সংস্কৃতিতে এত অপসংস্কৃতি। আপনাদের মতন লেখকদের গুলি করা উচিত।”
কিছু তরুণী লিখল, “ফুটকি ড্যাশ ঠিক আছে, কিন্তু ড্যাশের গায়ে জামা পড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিল লেখকের৷”
আরেকজন মহিলা,“দেখ কী অসভ্য। জানোয়ার। এদেরকে পুলিশে দেওয়া উচিত।” শুধু কেউ কেউ বলল, “এটার ভিতরে হয়ত একটা গভীর ইনার মিনিং আছে।”
লেখকের উত্তর — “আমার গল্পে প্রথমে যে ফাঁকা সাদা অংশটা রেখেছি, সেটা আমাদের জন্মের পর মুহূর্তের ফাঁকা জীবন। যার যা জীবন — ঘটনা-দূর্ঘটনা, হতাশ-হাহুতাশ, পাওয়া-না পাওয়া, ব্যথা-যন্ত্রণা, সুখ-দুঃখ, লজ্জা, ঘেন্না, ভয়, আনন্দ, শোক, তাপ, জ্বালা, হীনমন্যতা, অনুতাপ, অনুশোচনা...। ঐ অংশে সেটা সে লিখবে। আর একটি নারী এবং পুরুষের ছবির নীচে কোলন এর পর ড্যাশ – আপনারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের জীবন নিয়ে খিল্লি করবেন আবার ভূয়সী প্রশংসাও করবেন...। মান আর অপমান নিয়েই তো আমাদের জীবন...! বলুন, তাই নয়?”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন