বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১

কাজল সেন-এর ঝুরোগল্প

গোলকিপার

আমি কখনই গোলকিপিং করতে চাইনি। কিন্তু সিধুদা বলল, না, এই ম্যাচে  তোকেই গোলকিপিং করতে হবে।

-কেন সিধুদা? আমি তো রক্ষণভাগে খেলি। গোলকিপার তো মদনদা!

সিধুদা আমাদের দলের কোচ কাম ক্যাপ্টেন। গম্ভীর মুখে বললেন, দলের স্বার্থে তোকে খেলতে হবে মানু। মদন আজ খেলবে তোর পজিশনে।

 

তো আচ্ছা ফ্যাসাদ! সব প্লেয়ারই গোলকিপার হতে পারে নাকি? অথবা উইকেটকিপার? জীবনে কোনোদিন আমি গোলকিপিং করিনি। আমি তো দাঁড়িয়ে  দাঁড়িয়ে গোল খাব! অথচ এটা বাবা বিশ্বনাথ চ্যালেঞ্জ কাপ লিগের খুব গুরুত্বপূর্ণ খেলা। আমাদের দল নির্ঘাত হেরে যাবে। এদিকে সিধুদা বলছেন, দলের স্বার্থেই আমাকে নাকি গোলকিপিং করতে হবে! আশ্চর্য!

 

তখনও খেলা শুরু হয়নি। আমরা সাইড লাইনের ধারে গা ঘামিয়ে নিচ্ছি। আমি গত বছর অন্য দলে ছিলাম। এবছর অনেক আশা স্বপ্ন নিয়ে এই দলে এসেছি। যে টা লিগের ম্যাচ খেলেছি, তা দেখে সবাই আমার খেলার প্রশংসা করেছে। আমাকে ট্যাকল করে বিপক্ষ দলের কোনো প্লেয়ারের গোল করা সত্যিই খুব মুশকিল। বিশেষত খেলায় আমি কোনো ফাউল করি না, বরং বিপক্ষ প্লেয়ারদের অফসাইড ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করি।

 

আমার পাশেই ছিল আমাদের দলের আক্রমণ ভাগের তুখোড় খেলোয়াড় প্রশান্ত। মনের কষ্টটা প্রশান্তর কাছেই শান্ত করতে চাইলাম। চুপিচুপি বললাম, তুই বল প্রশান্ত, কোনো মানে হয়, এভাবে আমাকে গোলকিপারের দায়িত্ব দেওয়ার?  

প্রশান্ত বল নিয়ে নাচানাচি করতে করতে আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, তাতে তোর অসুবিধেটা কী?

আমি বললাম, বা রে! আমি যে পজিশনে কখনও খেলিনি, সেই পজিশনে খেলব কী করে?

প্রশান্ত বলল, কোনো পজিশনই কোনো প্লেয়ারের বাপের সম্পত্তি নয়। সব প্লেয়ারকে সব পজিশনেই প্রয়োজনে খেলতে হয়। কোচ ক্যাপ্টেন যা নির্দেশ দেয়, সেটাই মেনে নিতে হয়।

আমি তর্ক করলাম, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের দলে যখন ভালো গোলকিপার আছে, মদনদার মতো নামকরা গোলকিপার, তখন মদনদাকে সরিয়ে আমাকে তার জায়গায় খেলানো হচ্ছে কেন? এটা আবার কেমন দলের স্বার্থ?

 

প্রশান্ত বল ছেড়ে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। তারপর আমার হাতটা ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, বদনামের ভয়েই মদনদা আজ গোলকিপিং করবে না।

-সে কী! মদনদার বদনাম হবে কেন?

-কেননা, আজকের ম্যাচে প্রথমে আমরা একটা গোল করব ফার্স্টহাফে। সেকেন্ডহাফে অপোনেন্ট দল গোল করবে গুনে গুনে তিনটে। বুঝতেই পারছিস মানু, পরপর তিনগোল খেলে মদনদার প্রেস্টিজ কি আর থাকবে?

-কিন্তু তিনগোল খাবে কেন?

-খেতে হবে। তাই চুক্তি হয়েছে।

 

ফার্স্টহাফে আমাদের দল চুক্তিমতো একগোলে এগিয়ে গেল। বিপক্ষ দল গোল করতে গোলপোস্টের কাছাকাছিও এলো না। এবার সেকেন্ডহাফের খেলা। বিপক্ষ   দল মরিয়া হয়ে আক্রমণ শুরু করল। কিন্তু কী যে হলো আমার! আমি এমন তেড়েফুড়ে উঠলাম, একবারও বল জালে ঢোকার কোনো ফাঁকই খুঁজে পেল না! ওদিকে সিধুদা পাগলের মতো চেঁচিয়ে যাচ্ছে, ওরে গাঁড়ল মানু, বল ধরিস না... ধরিস না... ছেড়ে দে... ছেড়ে দে...

  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন