বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১

পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়-এর অণুগল্প

 


স্বপ্নে রঙ্গীন পাখি ওড়ে 

আমি স্বপ্নকে ভয় পেয়েছি, স্বপ্নে কুৎসিত সরীসৃপ ঘুরে বেড়াতে, আমি কুঁকড়ে থেকেছি। কালো মেঘ সব ভিড় করে আসত আমার ঘুমে। সেই চ্যাটচ্যাটে ঘুমে কোনো সুগন্ধি মাখামাখি হয়ে থাকত না। আমি একটার পর একটা বসন্ত পার করে এসেছি, মেদহীন, রঙ হীন..সেসব বসন্ত! আমার ভেতরে একটা পুরুষ, সুগন্ধ সন্ধানী এক পুরুষ, রঙ্গীন পাখির সন্ধানে থাকা একটা মানুষ সুগন্ধিত এক সমুদ্রের খোঁজে চোখ জ্বেলে বসে থেকেছে দিনের পর দিন। হঠাৎই কেন যে সেই সর্ব শক্তিমান জাদুকর সুগন্ধিত চামর দুলিয়ে ঝাঁকড়ে দেয় আমাকে, জানিনা। আমার অতৃপ্তির সাগরে একমুঠো রঙ্গীন গুলাল ছড়িয়ে দিলো, আহা,শেষ ঘন্টা শোনার আগে! এতেই আমি আবার দুলে উঠি। মনোরম এক উদ্যানে এসে পড়লাম। জানো, সেই বাগীচার একটা নাম আছে... বৃষ্টি। 

 অলক্ষ্যে কারো জাদুকাঠির ছোঁয়ায় আমার খরা বিজন প্রদেশে বৃষ্টি নেমে আসায় আমার আবার ঘুরে দাঁড়াতে ইচ্ছা করলো। আমার মাথার ওপর ঝুলে থাকা সেসব কালো মেঘ, দুহাতে সরিয়ে দিয়েছে বৃষ্টি।  আপাদমস্তক ভিজেছি প্রেমে, ভালবাসায়। সেই মহার্ঘ বস্তুর স্পর্শে নিজেকে বড় ধন্য মনেহয় প্রিয়ে, তুমি সেই অপার্থিব প্রেম দান করলে, আমি কৃতার্থ হলাম। সুগন্ধিত বৃষ্টির আঁচল জড়িয়ে নিজেকে বেশ তরতাজা যুবক ভাবতে ভালো লাগলো। এটাই তো বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র। তোমাকে আতরের মতো মেখে নিতেই ঘুমিয়ে থাকা রঙ্গীন সে পাখি আবার উড়ানে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সারাজীবন শুধু কাঁকর, পাথর জড়ো করে আসছিলাম, তুমি বসরা গোলাপ হয়ে সুগন্ধি কুড়োতে দিলে। আপ্লুত হলাম আমি। 

  তুমি খাঁচায় বন্দী রঙ্গীন পাখি, তুমি বলেছ। আমি মানিনি, ভাবতেও পারিনি। কেউ কি পারে, কেউ কি মজা পেতে পারে সে রঙ্গীন পাখিকে বেঁধে রেখে!

  আগল খুলে আমার স্বপ্নে যে ওড়ো তুমি, আমার সারাশরীরে শিহরণ বয়ে যায়, খেলে যায় বিদ্যুৎ।  আহা! সেই শীতের নির্জন দুপুরের ওম! তিরতির করে বয়ে যায় আমার প্রতিটি শিরা উপশিরায়। শিরিষ ফুলের মতো তোমার গোছা চুলে মুখ গুঁজে, তোমার টোল পড়া দুগালে ঠোঁট ঠেকিয়ে তৃপ্তি সাগরে ভেসে গেছিলাম। 

  সেই যে শুরু, এর সমাপ্তি রেখা যেন কখনো চোখে না পড়ে সখি। একটু আদর, একটু সোহাগ, কিছু কিছু খুনসুটিতে স্বপ্নের রঙ্গীন পাখি কি যে মিষ্টি সুরে গেয়ে ওঠে...দাও ,আরো দাও প্রাণ ...প্রাণ ভরিয়ে ... তুমি শীতল বাতাস, এক ঝলক আমার মুখে মাখিয়ে কি সরে যেতে চাও? কিন্তু আমি পারিনা, ধৈর্যের বাঁধ বেঁধে রাখতে। আমি শুধু জানি.. শুধু গানের দিন ... তুমি আমার স্বপ্নে রঙ্গীন পাখির গান হয়ে এলে! মুগ্ধতার সীমা ছাড়িয়ে আমি প্রতিনিয়ত প্রতীক্ষমান।  আমি বুঝি, উপলব্ধি করি তুমি আমার ঘুমের দেশে, স্বপ্ন জগতেই বিচরণ করে ,আমাকে কষ্ট দিতে ভালবাসো।  নাহলে কেন এই গানভরা দিনগুলো শুকিয়ে যেতে দিচ্ছোপৃথিবীর সব সুগন্ধ হয়তো একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে, কিন্তু তোমার মন, শরীরের সুগন্ধ কোনদিনই নিঃশেষিত হওয়ার নয়।  আমি আমোদিত হয়ে আছি প্রিয়, কাছে থেকেও কতো দুর..কতদুরে তুমি।  তোমার গোলাপ বাগান ভ্রমণে আর কি কোনো অধিকারের জায়গা ছেড়ে রেখেছো!



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন