সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
মলয় রায়চৌধুরী
বুড়ি
এ-বুড়ি আমার দিদিমার বয়সী
চুল পেকে গেছে, কয়েকটা দাঁত
নেই, দিদিমার মতন শুয়ে থাকে
কবে শেষ হয়ে গেছে পুজো-পাঁজি
ক্যালেণ্ডারে ছবি-আঁকা তিথি
দিদিমার মতো এরও প্রতিরাতে
ঘুম পায় কিন্তু আসে না, স্বপ্নে
কাদের সঙ্গে কথা বলে, হাসে
চোখে ছানি তবু ইলিশের কাঁটা
বেছে ঘণ্টাখানেক মজে খায়
দিদিমার মতো, বলেছে মরবে
যখন, চুড়ি নাকছাবি খুলে নিয়ে
তারপর আলতা-সিঁদুর দিয়ে
পাঠাতে ইনসিনেটরে, এই বুড়ি
চল্লিশ বছর হল সিঁদুর পরে না
পঞ্চাশ বছর হল শাঁখাও পরেনি
দামি-দামি শাড়ি বিলিয়ে দিয়েছে
দিদিমা যেমন তপ্ত ইশারায়
দাদুকে টেনে নিয়ে যেতো রোজ
এও আমাকে বলে এবার ঘুমোও
আর রাত জাগা স্বাস্হ্যের পক্ষে
খারাপ, এই বুড়ি যে আমার বউ
বিছানায় শুয়ে বলে কাউকে নয়
কাউকে দিও না খবর কারুক্কে নয়–––
এ-কথাটা আমারই, কাউকে নয়
কারুক্কে বোলো না মরে গেছি
কাজল সেন
সম্ভাবনা ছিল
এতটা সম্ভাবনা ছিল এতটাই সম্ভাবনা
অনায়াসেই পেরোনো যেত সব সীমাবদ্ধতা
ঘোড়া হয়তো টাট্টু ছিল তবু সে তো ঘোড়াই ছিল
ছিল দ্রুততা ও সজীবতার সব উপাদান
নিরন্তর ছুটে যাবার বাহার
অথচ কোথাও যাওয়া হলো না কারও
গুহা থেকে নিয়ে আসা হলো না কোনো সীতাহার
যতটা এগিয়ে যাবার পর বলা যায় অগ্রসর হলাম
আরও অগ্রসর হলে পৌঁছে যেতে পারি বৃহস্পতির উদ্যান
যাওয়া হয়তো যেত সবারই তো টাট্টুঘোড়া ছিল
টাট্টু হলেও সে তো ঘোড়াই ছিল
কিন্তু যাওয়া হলো না কোথাও কারও কোনোদিন
যতটা সম্ভাবনা ছিল যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল
সবটুকু থেকেই গেল তার যাবতীয় সম্ভাবনার গভীরে
অথচ অনায়াসেই যাওয়া যেত সেই গুহায়
বৃহস্পতির উদ্যানের কথকতায়
পেরিয়ে যেতাম সব সীমাবদ্ধতার সীমারেখা
কামাল হোসেন
খেলা
অন্ধকার টানেলের ভিতরের
ক্ষতবিক্ষত আঙিনায়
সর্বনাশ ডুবসাঁতার দিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল
প্রাচীন ফসিলে আবৃত তিনমাত্রিক ডায়নোসর
অথবা নতজানু বিগ্রহের বিষণ্ণ প্রতিমূর্তি
অনেকটা রূপকথার মতো বিমুগ্ধ কালবেলায়
গ্যালাক্সির অন্য কোনো প্রান্তের
আরও কোনো নাজুক অতিথির অপুষ্ট প্রতিবিম্ব,
গ্লানিকর জীবনের অপূর্ণ অনভিপ্রেত দীর্ঘশ্বাস
সমস্ত স্বপ্নদীপ্ত পৃথিবী চোখের ওপর
নাচতে নাচতে খেলা করে যাচ্ছে,
অজস্র আলোর ঝলকানি –––
অসংখ্য রঙের মাধুর্যলোকের তলায়
চুপচাপ স্থির শুয়ে আছি, শবদেহের মতো,
অনড়, প্রাণহীন, অনিশ্চিত
ইন্দ্রাণী দত্ত পান্না
একা ও নির্জনতা
(কবি নাসের হোসেন-কে মনে রেখে)
যখন চলে যাবার প্রস্তুতি চলছে কবির ভেতরে
তখন আমার হাতা খুন্তি হাড়ি কড়াই কোন খবর সরবরাহ করল না।
আমি বাগানের মালিনী হয়ে ফুল থেকে পোকা ছাড়ালাম, মাটিতে মিশিয়ে দিলাম মমতা, আশ্বাস,পূর্ণতার স্বপ্ন
ভাবছি, না থাকলে কে দেবে এদের...
'ওম ত্র্যম্বকম যজামহে সুগন্ধিম পুষ্টিবর্ধনম...
পুষ্টি দিই সারাদিন মুখে চেয়ে আছে যারা তাদের, ব্যস্ত মন বুঝতে পারেনি
কখন চলে যাচ্ছে অনতিদূরের রোগশয্যায় পরম বন্ধু এক আকস্মিক- তার মাটিতেে মিশে যাবার প্রস্তুতি শেষ
যখন বেলা পড়ে যাচ্ছে খাদের ওধারে,
তখন একঘন্টা দূরের আরোগ্যালয় কয়েক যোজন সরে গেছে ঘুমন্ত শরীর নিয়ে।
জেগে উঠেছে ভুলে যাওয়া কথারা, কয়েকটা না ভোলা দৃশ্য, অনেক প্রিয় মুখ –––
চলে যাবার দল
না বলে যাবার দল
আমার নির্জনতায় আমাকে প্রকৃতই একা করে দিচ্ছে রোজ।