শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

সুজিত কুসুম পাল-এর অনুবাদ কবিতা

মার্গারেট অ্যাটউড



কবিতা দেরিতে পৌঁছে 


আমি আজ কবিতার কথা বলতে এসেছি   

দেরিতে পৌঁছানো সেইসব কবিতার কথা;

অবশ্য বেশির ভাগ কবিতাই দেরিতে পৌঁছে,

ভীষণ দেরিতে। 


ফিরতি জাহাজ ডুবে গেলে

প্রেরক পৌঁছে যায় ডুবে যাওয়া ঠিকানায়;

তরঙ্গের সুরঙ্গ পেরিয়ে 

নাবিকের লেখা চিঠিটিও পৌঁছে যায় 

দেরিতে পৌঁছানো কবিতার মতো 

প্রাপকের দরজায়।  


কী কথা ছিলো চিঠিতে?

ভাসমান জাহাজে বসে লেখা 

অসমাপ্ত চিঠির অবারিত অন্তর্বাসে 

লড়াকু নাবিকের অনিষ্পন্ন যুদ্ধের কথা ছিলো হয়তো, 

ছিলো রোদেলা ঠোঁটের -বলা ছোঁয়ায় 

কামার্ত দিবসের মীমাংসিত বেদনার কথা; 

সঙ্গমশয্যায় জোছনার রাত্রিযাপন 

কিংবা

একটি সমাপ্ত কবিতার অসমাপ্ত সংলাপের কথা। 


বিভাজিত জাহাজের অবিভাজ্য অবশেষ 

অবশেষে ভিজে যায়, 

বার্তাবোঝাই অন্তর্বাস সৈকতের আমন্ত্রণে 

দেরিতে পৌঁছানো কবিতার মতো হয়ে যায়। 


নৈশটেবিলে দেরিতে পৌঁছলে 

ক্রমশ উবে যায় মেন্যুর উষ্ণতা, 

আরও দেরিতে পর্যাপ্ততা, 

বেশি দেরিতে ডাইনিং আওয়ার। 

সময়ের ক্রমোচ্চতায় নাবিকের কবিতা যেনো 

ডাইনিং টেবিলের নি:শেষিত নৈশখাবার। 


মরচেপড়া ক্ষতবিক্ষত বর্ণমালা 

জেগে ওঠে তবু রাতজাগা নেত্রকোণায় 

জীর্ণ কোরাসে পরিত্যক্ত আনন্দে 

অধ:কৃত বেদনায়। 


প্রতীক্ষার প্রভাতে বাজে না তাই প্রতিশ্রুত নূপুর;

বিলম্বিত দুপুরে জ্বলে শুধু আলো, বেজে ওঠে সুর। 



[পঞ্চান্ন বছরের রাইটিং ক্যারিয়ারে ঊনসত্তরটি গ্রন্থের লেখক মার্গারেট অ্যাটউড (জন্ম:১৯৩৯)  বাইশটি কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা হলেও, ২০০৭ সালে প্রকাশিতদ্য ডোরকাব্যগ্রন্থের পর, তেরো বছরের মধ্যেডিয়ারলি’(২০২০) হচ্ছে অ্যাটউডের প্রথম কাব্যগ্রন্থ, যার প্রার্থিত উদ্বোধন হয়েছে  লেইট পোয়েম্সকবিতা দিয়ে।লেইট পোইয়েম্সপূর্ণমাত্রার বিষাদ-পূর্ণ একটি কবিতা। এই বিষাদের ওজন আছে, ভারীতা নেই। কবিতাটি ভেসে যায়, ডুবে যাওয়া জাহাজের খুচরো অংশের মতো উপকূলে ভেসে যায়। ভাসতে ভাসতে শব্দের শরীরগুলো বিলম্বিত নৈশভোজের মতো শীতল হয়ে যায়। ভাসমান জাহাজে বসে নাবিকের লেখা চিঠির বিক্ষত বার্তাগুলো বিভ্রান্তির জাল ছড়ায়। বর্ধমান কালের থাবায় অনুচ্চারিত মন্ত্র কার্যকারিতা হারায়। তবে, কালের গমন জনিত অনুঘটন কবিকে অবরুদ্ধ করতে পারেনি। বিলম্বিত কালের সাথে অনুগমনকে তাই তিনি প্রলম্বিত করতে চাননি। বিলম্বে হলেও, তিনি হাত বাড়াতে চান গন্তব্যের দিকে, পা বাড়াতে চান মঙ্গলপদে। বিষাদপূর্ণ কবিতার সীমানায় দাঁড়িয়ে তাই তিনি পাঠককে অভিবাদন জানিয়েছেন আলোর ভুবনে আনন্দ-ভবনে।]  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন