মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সম্পাদকের নিবেদন

সম্পাদকের নিবেদন

‘The Generation of Animals’ গ্রন্থে অ্যারিস্টোটল (384 BC — 322 BC) বলেন যে বুদ্ধিহীনতাই নারীত্বের লক্ষণ। অসামর্থ্যই নারীত্বের পরিচায়ক। তাই নারী পুরুষের সমকক্ষ নয়, পুরুষের তুলনায় হীন। প্লেটোর (427 BC — 348 BC) দর্শনেও নারী  জড় দ্রব্যের অন্তর্গত। 

‘Emile’ গ্রন্থে রুশো (1712 — 1778) লেখেন, “To be pleasing in his sight, to win his respect and love, to train him in childhood, to tend him in manhood, to counsel and console, to make his life pleasant and happy, these are the duties of woman for all time and this is what she should be taught while she is young” — রুশোর এই মন্তব্য মেরী ওয়ালস্টোনক্রাফটকে (1759 — 1797) কতো তীব্রভাবে আঘাত করে। ‘A Vindication of the Rights of Women’ (1792) গ্রন্থে তিনি দ্বিধাহীনভাবে উগরে দিয়েছেন তাঁর যাবতীয় ক্ষোভ। 

যেমন আমরা দেখেছি, সিমন দ্য ব্যুভোয়ার 'The Second Sex' (1949) গ্রন্থের দুটি তাৎপর্যপূর্ণ উক্তি

. One is not born, but rather becomes, a woman.

. He is the subject, he is the absolute — she is the other.

এনলাইটেনমেন্ট যুগের ব্রিটিশ নারী, মননশীল চর্চায় নিষ্ক্রিয় বিষয়স্বরূপ নয়। এইরকম কয়েকজন মেরী ওয়ালস্টোনক্রাফট্, ক্যাথারিন ম্যাকলে প্রমুখ মননশীল চর্চার  কেন্দ্রে অধিষ্ঠিত। 

ফরাসিদেশে Francoise de Graffingy, Marie Jeanne Riccoboni, Isabella de Charriera জ্ঞানতাত্ত্বিক তথা লেখক হিসেবে গুরুত্ব সহকারে গৃহীত। 

যেমন বাংলাভাষার শক্তিশালী লেখক হিসেবে কবিতা সিংহ, নবনীতা দেবসেন, আশাপূর্ণা দেবী, মহাশ্বেতা দেবী প্রমুখ। 

নারীবাদী যে কোনোরকম মেরুকরণের বিরোধী। তাঁদের মতে বিভিন্ন বিষয় যদি নারীবাদী জ্ঞানতত্ত্বে উপস্থিত থাকে, তাহলে তা মূলস্রোতের জ্ঞানতত্ত্বেও উপস্থিত থাকবে। নারীবাদী চিন্তকেরা কখনোই পুরুষতান্ত্রিক মূলস্রোতের তত্ত্বকে নারীকেন্দ্রিক দর্শন দ্বারা প্রতিস্থাপিত করতে চাননি, তাঁরা জ্ঞানতত্ত্বকে কেবল পরিবর্তন করতে চান। নারীবাদী চিন্তন বস্তুত জীবনের সম্পূর্ণতাকে উপলব্ধি করতে চায়তাতে পুরুষের-জীবনও তাদের আগ্রহের বিষয় হয়ে ওঠে।

নারীবাদী-দর্শনের ব্যাপ্তি বিশাল। এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় শুধু ছুঁয়ে দেখা হচ্ছে মাত্র। 

এখন নারীর প্রতি হিংসাত্মক আচরণ বা তার অবদমনের বিষয়ে কিছু কথা বলা যেতে পারে। যেমন সমস্ত মানব জাতির মধ্যে নারীর উপরেই কেন হিংসার আস্ফালন বেশি ঘটে। আবার পারিবারিক হিংসা শিশু, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা সকলের মধ্যে পরিব্যাপ্ত হয়। এক্ষেত্রে যেহেতু নারীর কথা বলছি, নারীর যাপিত অভিজ্ঞতা থেকে যে সমস্যা বিশেষভাবে উঠে আসে তা হলকর্মক্ষেত্রে লিঙ্গসাম্যাবস্থা বিঘ্নিত হয়। সমাজে নারীর অমর্যাদা, অবদমন অবহেলার ঘটনা বারংবার ঘটেই চলেছে এবং চলছে।


মেয়েদের তাদের নিজেদের অবস্থান, জীবন অভিজ্ঞতা, ইচ্ছা, চাহিদা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। জ্ঞান প্রক্রিয়া থেকে যাতে তারা বঞ্চিত না হয়, সে বিষয়ে তাদের সজাগ হতে হবে। নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও, বিশ্বজুড়ে অসংখ্য নারী সেই অধিকার অর্জন করেছেন এবং করে চলেছেন। 


স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্র, পথঘাটসর্বত্র যথেষ্ট নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে হবে। সমস্ত সামাজিক পৈশাচিক ব্যাধির মূল থেকে অপসরণ ছাড়া, একটা সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবীর কল্পনা অবান্তর। অপরাধীর কোনো লিঙ্গ হয় না। তারা মানবজাতির কলঙ্ক। অর্থাৎমানবিকসিদ্ধান্তে সর্বোপরি বিশেষ জোর দিতে হবে। 


সম্প্রতি কলকাতা সহ বেশ কিছু জায়গায় খুন-ধর্ষণের ঘটনায় অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। বিপন্ন এই সময়। অপরাধীদের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তির আবেদনে পুরো দেশ তথা বিশ্বজুড়ে জনসাধারণ প্রতিবাদ-আন্দোলনে সামিল হয়েছে। We want Justice.


রঙিন ক্যানভাস’-এর উৎসব সংখ্যা প্রকাশিত হল। সকল লেখক এবং পাঠককে শারদ শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন রইল। ভালো থাকুন সকলে। 


রোশনি ইসলাম

সোনালি বেগম

1 টি মন্তব্য: