সম্পাদকের নিবেদন
প্রাচ্য তথা ভারতীয় চিত্রকলার বিশেষত্বই হচ্ছে রেখা, যার কাছে অনেক ক্ষেত্রে রঙ গৌণ। রেখার প্রধান্যই বেশি, তার কাছে মডলিং, শেডিং, পারস্পেক্টিভ, রঙ সবই গৌণ হয়ে যায় কখনও কখনও। আমাদের মতো গরমের দেশে প্রখর সূর্যের আলো ছবির উপর পড়লে রঙ খুব নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। তখন পড়ে থাকে শুধু বাউন্ডারি অর্থাৎ সীমারেখা। যেমন মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গবাদ জেলায় ‘ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ অজন্তার গুহার ছবি ও ভাস্কর্যের কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে। অজন্তার ছবির প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে তার রেখার দক্ষতা। ভারতীয় শিল্পী মডলিং, পারস্পেকটিভ খুব ভালোভাবে শিক্ষা করেছিলেন — তার প্রমাণ মেলে ভারতীয় ভাস্কর্যে, যার উপরে সূর্যের আলো পড়ে বিভিন্ন রঙের ইন্দ্রজাল সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় — অজন্তার গুহার ভেতরে ছবি দেখতে গেলে বাতির সাহায্যেই দেখতে হবে, সেখানেই শুধু অজন্তার চিত্রকর মডলিং বা পারস্পেকটিভ অর্থাৎ দূর-কাছের আভাস এনেছেন রঙ গাঢ়-ফিকে করে। কিন্তু গুহার বাইরে যেখানে সূর্যের আলোয় ছবি দেখতে হবে, সেখানে মডলিং বা পারস্পেকটিভ নেই, আছে শুধু রঙিন নকশা। অজন্তা-শিল্পীর কালজয়ী ছবির উৎকর্ষতা তাঁদের নিজস্ব প্রজ্ঞার উপর প্রতিষ্ঠিত। চারুশাস্ত্রের বহুমুখী দৃষ্টি তথা মাল্টিপ্ল্ ভিশন টেকনিকের সঙ্গে অজন্তা-শিল্পীর টেকনিকের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে। এ কথা অনায়াসে বলা যায়, অজন্তা-শিল্পীর সৃষ্টি হচ্ছে বস্তুকে নিজের মত করে দেখার অভিজ্ঞতার ফল।
অবশেষে এই নাতিদীর্ঘ আলোচনার ইতি টেনে বলা যায় — অজন্তাচিত্রে যে ধরণের কম্পোজিশন ও পারস্পেকটিভ আছে, সেটাই ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে মিশে গেছে।
প্রিয় লেখক এবং পাঠক ‘রঙিন ক্যানভাস’ ২৫শে বৈশাখ সংখ্যা প্রকাশিত হল। সকলকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই। ভালো থাকুন সবাই।
রোশনি ইসলাম
সোনালি বেগম
ভাল লাগলো
উত্তরমুছুনরঙিন ক্যানভাস পত্রিকার সম্পাদকীয় আমার কাছে খুব আকর্ষণীয়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রত্যেকবার নতুন কিছু জানা যায় খুব সহজ, সরল এবং স্বল্পদৈর্ঘ্যের বাক্যবন্ধে। এই পরিমিতিবোধ শিক্ষনীয়।
উত্তরমুছুন