মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সা'আদুল ইসলাম-এর প্রবন্ধ

বিদ্রোহী’ : 'হুইটম্যান রবীন্দ্রনাথ একসঙ্গে পাকড়াও হলেন'


বিনয় সরকার ১৯৪৩ এর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন

''বিদ্রোহী' দেখবামাত্র নজরুলের ভেতরে আমি হুইটম্যান আর রবীন্দ্রনাথ দুজনকে একসঙ্গেই পাকড়াও করেছিলাম। তবুও বুঝে নিলাম লেখক বাপকা বেটা বটে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম কুরুক্ষেত্রের পরবর্তী অন্যতম যুগ-প্রবর্তক বাঙ্গালীর বাচ্চা নজরুল।"


বিদ্রোহীকবিতা : রবীন্দ্র-কথিত প্রাণবেগ


বাংলা কাব্যকে নজরুল ইসলাম রবীন্দ্র-প্রত্যাশিত এক অপূর্ব প্রাণশক্তিতে প্রতিষ্ঠিত করেন। যৌবনের রক্তরাগে আগুনঝরা লাভাস্রোতের উদগীরণে নজরুল বাংলা কাব্যে অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এর আগে 'কামাল পাশা', 'আনোয়ার' প্রভৃতি কবিতায় তেজ রণহুঙ্কার থাকলেও তা ছিল ওইসব বীরদের বেনামিতে। তাদের স্তব করতে গিয়ে তাদাত্মক ভঙ্গিতে বলা। ওরা হলেন অবজেক্ট তারই কাব্যরূপ এইসব কবিতায়। পরিবেশ অঙ্কনে ভয়াবহতা ছন্দের দোলায় একটা অন্যরকম বোধের জন্ম দেয় কিন্তু বিদ্রোহ এখন আর অন্যের জবানিতে নয়। 'বিদ্রোহী' কবিতায় প্রাণের আবেগ আপন চিত্তগুহা থেকে অবিরল ধারায় বের হয়ে এলো।


নৈবেদ্য (১৩০৮) রচনার কালে রবীন্দ্রনাথ যে নির্ভীকচিত্ততার জাগরণ চেয়েছিলেন, যে উচ্চশির ভারতের কামনা করেছিলেন বিশ্ববিধাতার কাছে, ('চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শিরহে পিতঃ, ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত), তার পরে পরে অস্ত্রদীক্ষা চেয়েছিলেন, নজরুলের কবিতায় যেন তারই স্ফুরণ। 


'চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির' নাম্নী কবিতায় সাধারণভাবে উচ্চশির ভারতের কামনা করেছিলেন কিন্তু অস্ত্রভিক্ষা রুদ্রতা, এগুলি ওখানে ছিল না। অপরপক্ষে নৈবেদ্যের ৪৭, ৪৮, ৭০ সংখ্যক কবিতাগুলিতে দেখি:


. আঘাত সংঘাত মাঝে দাঁড়াইনু আসি।

অঙ্গদকুণ্ডল কণ্ঠী অলঙ্কাররাশি

খুলিয়া ফেলেছি দূরে। দাও হস্তে তুলি 

নিজ হাতে তোমার অমোঘ শর

তোমার অক্ষয় তূণ। অস্ত্রে দীক্ষা দেহো 

রণগুরু                              ( ৪৭ সংখ্যক কবিতা))


. ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা 

হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা 

তোমার আদেশে। যেন রসনায় মম 

সত্যবাক্য ঝলি উঠে খর খড়্গসম 

তোমার ইঙ্গিতে।                  (৭০ সংখ্যক কবিতা)


. দুর্ভাগা দেশ হতে, হে মঙ্গলময়

দূর করে দাও তুমি সর্ব তুচ্ছ ভয় – 

লোকভয়, রাজভয় মৃত্যুভয় আর। 

দীনপ্রাণ দুর্বলের পাষাণভার 

…    …    …

চূর্ণ করি দূর করো। মঙ্গল-প্রভাতে 

মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে 

উদার আলোক মাঝে উন্মুক্ত বাতাসে। (৪৮ সংখ্যক কবিতা


অস্ত্রদীক্ষা, দুর্বলতার বিপরীতে রুদ্র নিষ্ঠুরতা, সব ধরনের ভয় থেকে মুক্তি নির্ভীকচিত্তের জাগরণ।

পুনরায়, বলাকা-পর্বে সবুজদলকে আহ্বান করে বললেন, "ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা,/ ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ,/আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা" – প্রবল এক প্রাণবেগকে রবীন্দ্রনাথ আহ্বান করলেন, সেই সবুজ দলের প্রাণপুরুষ হতে পারলেন নজরুল।

কিংবা, বলাকা-য় সরাসরি রুদ্রের আহ্বানের কথা জানালেন, তার তূর্যবাদন শুনতে পাচ্ছেন কবি

রুদ্র মোদের হাঁক দিয়েছে বাজিয়ে আপন তূর্য

মাথার পরে ডাক দিয়েছে মধ্য দিনের সূর্য।

আবার অন্যত্র,

'উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই/

নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।


১৩০৮ সালে যখন নৈবেদ্য কাব্য প্রকাশিত হচ্ছে, যেখানে রবীন্দ্রনাথ রণগুরুর কাছে অস্ত্রদীক্ষা দেবার কথা বলছেন, তখন নজরুল তিন-চার বছরের শিশুমাত্র। যখন বলাকা-পর্বে (১৯১৬) রবীন্দ্রনাথ সবুজদলকে আহ্বান করছেন আধমরাদের ঘা মেরে বাঁচাবার জন্য, নজরুল তখন কিশোরবয়সের উপান্তে বয়ঃসন্ধিকালে ক্লাস নাইনের ছাত্র। মাঝখানে নজরুলের কেটেছে দরগা-মসজিদ-মক্তবের মোল্লাগিরি ইমামতিতে, কিংবা রুটির দোকানে বয়গিরির কাজে, অথবা লেটো গানের দলে গান লেখায় অভিনয়ে, দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ে। তখন থেকে রবীন্দ্রনাথ উজ্জীবিত করবার চেষ্টা করেছেন নবীন দলকে। সেই আহ্বান নজরুলের কানে পৌঁছল কলমে তার উজ্জীবন ঘটলো।


এই ক্ষয়হীন নির্ভয় উদয়পথের যাত্রীকে রবীন্দ্রনাথ যে 'মাভৈ:'- ঘোষণা করতে শুনেছিলেন, বাংলা কাব্যে নজরুল যথার্থভাবে সেই অগ্রযাত্রী। বাংলা কাব্যের যে নরম নিষ্ক্রিয়তা কর্মশক্তিহীন ভাবের বিমুগ্ধতায় এতকাল বাঙালি পাঠক মজে ছিল, নজরুল তার অপূর্ব প্রাণ-উন্মাদনায় পাঠকের সেই কাব্যরুচিকেই তীব্র আঘাত করলেন। এককথায়, বাংলা কাব্যের প্রাণসত্তাকেই জাগিয়ে তুললেন। আধমরাদের ঘা মেরে বাঁচিয়ে জাগিয়ে তুলতে চাইলেন। নজরুলের প্রায় সমগ্র সাহিত্যকর্মে যৌবনশক্তির এই উদ্দাম নৃত্যলীলা লক্ষ্য করা যায়। কাব্যে সাহিত্যে জীবনের এই ঐশ্বর্যরূপ, এই তেজোদীপ্তি নিঃসন্দেহে নজরুলের শ্রেষ্ঠ অবদান।


 মধুসূদন ভেঙেছেন পয়ারের বেড়ি, নজরুল ভাঙলেন জীবনের দুর্বলতার বাঁধ। মধুসূদন মৃত্যু-পাংশু পয়ারের শৃঙ্খল ভেঙে বাংলা কাব্যচ্ছন্দে প্রাণবেগ সঞ্চারিত করলেন, নজরুল কঙ্কালসার মানবজীবনে প্রাণের বন্যা বইয়ে দিলেন। যে প্রাণশক্তিকে অভিনন্দিত করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন– 'দুর্দিনের এই দূর্গশিরে /উড়িয়ে দে তোর বিজয়কেতন।' বললেন– 'জাগিয়ে দে রে চমক মেরে/ আছে যারা অর্ধচেতন।'


এজন্য বলতে চাই, রবীন্দ্র-প্রত্যাশিত প্রাণশক্তির কথা। নজরুল তা স্বীকারও করেন। তাই বলেছেন – 'তোমারি বিদ্যুৎ ছটা আমি ধুমকেতু।' কিন্তু জীবনদর্শনের জায়গায় রবীন্দ্রনাথ নজরুলে পার্থক্য আছে। বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি রবীন্দ্রনাথের শ্রদ্ধা ছিল না, জাতীয়তাবাদীদের প্রতিও তাঁর সমালোচনা-দৃষ্টি ছিল। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পরে ইংরেজদের দেওয়া 'নাইট' উপাধি ত্যাগ করলেও রবীন্দ্রনাথ ইংরেজদের তাড়াতে অস্ত্রধারণ করতে হবে মতে বিশ্বাসী ছিলেন না। অন্যদিকে নজরুলের বিশ্বাস এই ছিল যে, যে কোন রকম আপোষের মনোভাব অত্যাচারীর শাসনদণ্ডকে আরও মজবুত করবে। নজরুলের লেখনী ঝলে উঠলো

'শান্তি-কথায়! শান্তি কোথায়! কেউ জানিনা

মাগো তোমার দনুজ-দলন সংহারিণী মূর্তি বিনা।' (আনন্দময়ীর আগমনে)

শান্তির কথা বলে শান্তি আনা যায় না বাস্তবে। এটাই নজরুলের বলবার। তার জন্য চাই, 'দনুজ-দলন সংহারিণী মূর্তি'


রবীন্দ্রনাথের প্রতি অকপট শ্রদ্ধা রেখেও ১৯২২ এর 'ধূমকেতু' পত্রিকায় নজরুল লিখলেন

"ওগো করুণার দেবতা, প্রেমের বিধাতা, বাঁশির রাজা। তোমরা মুক্ত বিশ্বের, তোমরা ঘুমন্ত দাস-অলস ভারতের নও। এই অলস জাতিকে তোমাদের সুরের অশ্রুতে আরো অলস-উতল করে তুলো না। তোমাদের সুরের কান্নায় কান্নায় এদের অলস আর্ত আত্মা আরো কাতর, আরো ঘুম-আর্দ্র হয়ে উঠল যে, সুর তোমাদের থামাও। আঘাত আন, হিংসা আন, যুদ্ধ আন, এদেরে এবার জাগাও, কান্নাকাতর আত্মাকে আর কাঁদিয়ো না।'


আসলে, নজরুল আপন বিশ্বাসবোধ থেকেই স্বতন্ত্র পথের পথিক হয়েছিলেন। আপোষহীন এই সংহারমূর্তিধারণ তাঁর জীবনদর্শন বিশ্বাসবোধের জায়গা থেকে উঠে এসেছিল। বলেছেন তিনি

'আর্তের অশ্রুমোচন আমার নয়, আমার রণতূর্য।আমি সেবক নই, আমি সৈনিক।যুগে যুগে পশু আমার, সৈনিক আমার জয় হউক।' ('আমি সৈনিক'-প্রবন্ধ; দুর্দিনের যাত্রী ১৯২২ সালে লিখিত, বইপ্রকাশ ১৯২৬)

কবিতায় প্রবন্ধে এই প্রত্যক্ষ যুদ্ধের আদর্শ সত্যিই তাঁর জীবনদর্শনের জায়গা থেকে উঠে এলো। এই যে 'পশু আমার সৈনিক আমার জয় হউক'-- বাক্যে 'পশু' শব্দের ব্যবহারে শালীনতার অভাব স্পষ্ট হলেও বাক্যগঠনের এই দামাল তেজ স্মরণ করার মত। কিন্তু এর নিহিতার্থে মানুষের প্রতি যে ভালোবাসা রয়েছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। যে ভালোবাসা অত্যাচারীর প্রতি নির্মমতায় পাশব হতেও কুণ্ঠা করে না। 

বাংলা কাব্যে এই অমিত তেজ, অত্যাচার-নিরসনে মানুষের বিজয়ঘোষণায় কোনরকম আপোষের জায়গাকে নির্মমভাবে নস্যাৎ করার এই দৃঢ়তা এবং তার অকুণ্ঠিত প্রকাশভঙ্গি (পাশবতাকে বাদ দিয়ে), যেটিকে বলেছি, বাংলা কাব্যে প্রাণবেগ।


'বিদ্রোহী' কবিতা থেকে তার একরকম সূত্রপাত বলা চলে। সত্যিই তো 'দেশব্যাপী উত্তেজনার এই যেন বাণী' – যৌবনদৃপ্ত মানবশক্তির আত্মজাগরণের, বলা ভালো, আত্ম-উজ্জীবনের মন্ত্র হলো তাঁর 'বিদ্রোহী' কবিতা। 


নজরুলের মধ্যে রবীন্দ্র-কথিত প্রাণবেগ দেখে এলাম। 

এখন হুইটম্যান। কিন্তু সে-প্রশ্নে আসার আগে, নজরুলের কবিতায় রবীন্দ্রপ্রভাবের স্বীকৃতিস্বরূপ যে 'অশ্রুপুষ্পাঞ্জলি', যে সশ্রদ্ধ নিবেদন, তা দেখে নিই। এর আগে, নজরুলের বিখ্যাত 'দারিদ্র্য' কবিতায় দেখা গিয়েছিল, রবীন্দ্রনাথের 'চিত্রা' কাব্যের 'প্রেমের অভিষেক' কবিতার ভাষাছাঁদ। একই অন্ত্যমিলযুক্ত সমিল প্রবহমান ছন্দ।


 প্রেমের অভিষেক (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)


তুমি মোরে করেছ সম্রাট্‌! তুমি মোরে

পরায়েছ গৌরব-মুকুট! পুষ্পডোরে

সাজায়েছ কণ্ঠ মোর; তব রাজটীকা

দীপিছে ললাটমাঝে মহিমার শিখা

অহর্নিশি! আমার সকল দৈন্য লাজ,

আমার ক্ষুদ্রতা যত, ঢাকিয়াছ আজ

তব রাজ-আস্তরণে! … 


দারিদ্র্য (কাজী নজরুল ইসলাম)


হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান 

তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিস্টের সম্মান 

কন্টক-মুকুট-শোভাদিয়াছো তাপস

অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;

উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি, বাণী ক্ষুরধার,

বীণা মোর শাপে তব ' তরবার!

দুঃসহ দাহনে তব হে দর্পী তাপস,

অম্লান স্বর্ণেরে মোর করিলে বিরস

অকালে শুকালে মোর রূপ রস প্রাণ!

শীর্ণ করপুট ভরি' সুন্দরের দান,

যতবার নিতে যাই, হে বুভুক্ষু তুমি

অগ্রে আসি কর প্রাণ। শূন্য মরুভূমি

হেরি মম কল্পলোক। আমার নয়ন 

আমারি সুন্দরে করে অগ্নি বরিষণ!


এক জায়গায় প্রেমের স্নিগ্ধ রূপের মুগ্ধতা, আর এক জায়গায় দারিদ্র্যের কষাঘাতে যন্ত্রণা। সম্পূর্ণ বিপরীত ভাবনার দুটি কবিতা। এক জায়গায় গৌরব-মুকুট, নজরুলে কণ্টক-মুকুট। নজরুল রবীন্দ্রনাথকে অনুসরণ করে লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথের যে কবিতাটি নজরুলের জন্মেরও আগে লেখা। মাঘ ১৩০০ সালের নজরুলের জন্ম ১৩০৬ সালে।


আর, 'বিদ্রোহী' কবিতা নজরুলের উদ্দীপনামূলক কাব্যগুলিতে এত দ্রোহভাবনা ধ্বংসাত্মক মনোভঙ্গি, বিপ্লবী চিন্তাধারার প্রতি নজরুলের আসক্তি সত্ত্বেও নজরুল যে নৈরাজ্যবাদী ছিলেন না, বরং রবীন্দ্রনাথের মতোই রোম্যান্টিক মানসতার অধিকারী। 


রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নজরুলের 'টি কবিতা দু'টি গানের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। এখন একটি কবিতা : 'অশ্রুপুষ্পাঞ্জলি' আলোচনায় বোঝা যাবে নজরুল-মানসে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব কতখানি। নজরুল-মানসে দ্রোহের সঙ্গে প্রেমের, বীর্যের সঙ্গে রসের, যে অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক ছিলই, যা তাঁর 'বিদ্রোহী' কবিতাতেও স্বয়ম্প্রকাশ। কিন্তু 'অশ্রুপুষ্পাঞ্জলি' কবিতার সাক্ষ্যে জানা যাবে বীর্যসাধনাকে ছেড়ে চিরকালীন প্রেমের রসের সাধনায়, যা শাশ্বত তার সাধনায়, নজরুলের একান্ত আত্মনিয়োগের পশ্চাতে রবীন্দ্রনাথের পরামর্শ কম গুরুত্বের ছিল না। 'নতুন চাঁদ' প্রকাশিত হয়েছে ২৩ মার্চ ১৯৪৫। নজরুল প্রতিভার ওটা শেষ পর্ব। ১৯৪২- নজরুল অসুস্থ হয়ে পড়েন। 'অশ্রুপুষ্পাঞ্জলি'তে তাঁর লেখা জীবনের সেই শেষ পর্বে নজরুল রবীন্দ্রনাথের পরামর্শ রসসাহিত্যের প্রেরণাবাণীর কথা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেন এইভাবে

"ধ্যান শান্ত মৌন তব কাব্য রবিলোকে

 সহসা আসিনু আমি ধূমকেতু সম

 রুদ্রের দুরন্ত দূত ছিন্ন হরজটা 

কক্ষ চ্যুত উপগ্রহ! বক্ষে ধরি তুমি 

ললাট চুমিয়া মোর দানিলে আশিস।

দেখেছিল যারা শুধু মোর উগ্র রূপ,

 অশান্ত রোদন সেথা দেখেছিলে তুমি।"


বীর রৌদ্ররসে ভরা 'বিদ্রোহী' কবিতাতেও যে করুণ ক্রন্দনধ্বনি বিদ্যমান; শুধু দ্রোহ নয়, সেখানেও যে প্রেমের করুণ রাগিণী বেজে উঠেছে তা রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টি এড়ায়নি। নজরুল 'অশান্ত রোদন' বলতে এই রবীন্দ্রভাবনার কথা বলতে চেয়েছেন। স্বীকৃতি- স্নেহ-বশে নজরুলকে তিনি তাঁর নাটক উৎসর্গ করেছিলেন।

হে সুন্দর, বহ্নিদগ্ধ মোর বুকে তাই 

দিয়াছিলে বসন্তের পুষ্পিত মালিকা।

একা তুমি জানিতে হে মহাঋষি,

তোমারি বিদ্যুৎছটা আমি ধূমকেতু।'

কিন্তু কবিগুরু পরামর্শ দিয়েছেন শাশ্বত রসের সাধনা করার এবং সেটিকে নজরুল 'নবজন্ম' বলে মনে করেছেন। আর সেই নবজন্ম-কথা বর্ণনা করলেন এইভাবে

'হে রসশেখর কবি, তব জন্মদিনে

আমি কয়ে যাব মোর নবজন্ম কথা। 

আনন্দ-সুন্দর তব মধুর পরশে 

অগ্নিগিরি গিরিমল্লিকার ফুলে ফুলে 

ছেয়ে গেছে। জুড়ায়েছে সব দাহজ্বালা।

আমার হাতের সেই খর তরবারি 

হইয়াছে খরতর যমুনার বারি। 

দ্রষ্টা তুমি দেখেছিলে আমাতে যে জ্যোতি:

সে জ্যোতি: হয়েছে লীন কৃষ্ণ-ঘন রূপে

অভিনন্দনের মদচন্দনিত মধু

হইয়াছে হে সুন্দর, তব আশীর্বাদে।'


নজরুলের কাব্য সাধনায় বীর রৌদ্ররসের সঙ্গে মধুর রসেরও যে যৌগপত্য ছিল তা রবীন্দ্রনাথের পরামর্শ আশিসে হয়ে উঠল শাশ্বত প্রেমরসের বারিধি।


'আগুনের ফুলকি হল ফাগুনের ফুল 

অগ্নিবীণা হল ব্রজকিশোরের বেণু।

শিব-শিরে শশীলেখা হলো ধূমকেতু 

দাহ তার ঝরিল গো অশ্রু-গঙ্গা হয়ে।'

এই অশ্রুগঙ্গা আসলে কবির সঙ্গীতের রাগিণীর মধ্যে নির্বাসন-কথাই ব্যক্ত করছে। রবীন্দ্রনাথের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে নজরুল নিজের কাব্য-চেতনার প্রকাশ ঘটালেন। তবু বলা যায়, নজরুল-মানসের নিহিত প্রেমাকুলতা রবীন্দ্রপ্রভাবে বিশেষ মাত্রা পেয়েছিল হয়তো। নইলে এই প্রেমধর্ম প্রকৃতই নজরুলের স্বধর্ম। প্রেমধর্ম নজরুলের অন্যতম স্থায়ী মনোবীজ।


উদ্দীপনা আত্মজাগরণ, যাকে রবীন্দ্রনাথ একদিন বরণ করে নিয়েছিলেন, স্বাগত সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন। নজরুলের এই আমিত্বের জয়গান প্রসঙ্গে উঠে আসে আমেরিকান কবি ওয়াল্ট হুইটম্যানের কথা।


আমেরিকান কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২) আত্মন-এর জয়গান গেয়েছিলেন, তাঁর 'আমিত্বের গান' কবিতায় – Song of Myself. এটি প্রথমে ছিল ১২টি কবিতার একটা বই। নিজেই প্রকাশ করেন। পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন Leaves of Grass নামে, ১৮৫৫ সালে। কবি হুইটম্যান ছুতোরের কাজ করেছেন, কখনো ছাপাখানার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ছাপাখানায় নিজ প্রথম বইটির অক্ষরবিন্যাসও কিছুটা করেছেন নিজে। তখন কবির বয়স ৩৭ বছর। প্রথম কবিতাটি সবচেয়ে বড়ো, ৪৩ পৃষ্ঠার, সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত নামহীন কবিতা, তখন বইটি মোট ৯৬ পৃষ্ঠার। পরে চার দশক ধরে আমৃত্যু বইটির সংস্করণ চলে 'টি, নানা ব্যক্তিক পরিসরে। ১২টি কবিতা দিয়ে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত কবিতার সংখ্যা দাঁড়ায়  ৪০০- ওপর। বারবার তিনি লিখেছেন, নানান অভিজ্ঞতা আর অনুভবকে তখনকার আমেরিকার বিশেষ উদীয়মান গণতান্ত্রিক চেতনায় স্মরণ করেছেন তাঁর আমিত্বের উদযাপনে। মুক্তপ্রাণের উদ্গাতা-মন্ত্র রচনা করেছেন আমেরিকার সিভিল ওয়ার যন্ত্রণার অনুষঙ্গে। নারীর কামনায়, প্রেম কামের আসঙ্গলিপ্সায়, ক্ষরণক্লিষ্ট যন্ত্রণার মধ্যেও আত্মপ্রাণের সঙ্গে বিশ্বপ্রাণের জাগরণ চেয়েছেন কবি। ঘাসের প্রাণের মধ্যেও, ঘাসের ছুঁচলো ডগার মধ্যেও জীবনের বহমানতা খুঁজেছেন। শরীরের চৌকাঠে বিদ্যুতের শিহরণ খুঁজেছেন। Song of Myself থেকে Song of One's Self হয়ে আব্রাহাম লিঙ্কনের আততায়ী হস্তে নিহত হবার কল্পদৃশ্যটি ঘোর বিষণ্ণতায় অতিক্রম করে পৌঁছেছেন আত্মনের শেষ বিদায়লগ্নে।  ‘I Sing the Body Electric’ থেকে ‘Out of the Cradle Endlessly Rocking’, ‘When Lilacs Last  in the Dooryard Bloom'd’, বিখ্যাত সব রচনা তাঁর।


আর বিতর্ক? পিছু ছাড়েনি কখনও। নারীর আসঙ্গ লিপ্সা এবং কাম যৌনতা তাঁকে সমালোচনার প্রধান কারণ। অথচ, প্রেম কামনার ক্ষেত্রে তিনি আধ্যাত্মিকতার পবিত্রতা খুঁজেছেন। 


হুইটম্যান আজীবন তাঁর একটি কাব্যই বারংবার প্রকাশিত, পরিমার্জিত, পরিবর্ধিত, পুনর্লিখিত করে গেছেন; মৃত্যুর আগে কবি যে তাঁর শেষের কবিতার প্রিয় কাব্যলক্ষ্মীকে বিদায় জানিয়ে গেছেন তা স্বতন্ত্র কবিতার বইয়ে ঠাঁই পেলেও তা ছিল আসলে তাঁর জীবনাধিক 'তৃণপত্র' (Leaves of Grass) নামক কাব্যগ্রন্থের উপসংহার-সমাপতন।


Good bye, my Fancy 

Farewell, dear mate dear,

I'm going away I know not where.

আমরা এখানে স্মরণ করি, নজরুলের অভিভাষণ –  ‘যদি বাঁশি আর না বাজে!’

কিংবা,

যেদিন আমি হারিয়ে যাব / বুঝবে সেদিন বুঝবে

অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় / আমার খবর পুছবে / বুঝবে সেদিন বুঝবে।’ (অভিশাপ)


নজরুলের 'অগ্নি-বীণা' কবিতা সংখ্যাও ১২ এবং প্রকাশকও তিনি নিজে। হুইটম্যানের মতো নানা কায়িক পরিশ্রম ছিল জীবিকার তাগিদে, হোটেলে বয়গিরি রুটির দোকানে কাজ, নজরুলের শৈশব কৈশোরে। হুইটম্যান কাঠের কাজ করতেন, নিজ বইয়ের কিছু অংশ নিজেও কম্পোজ করেছিলেন। প্রকাশ করেছিলেন নিজে। হুইটম্যানের মতো বিতর্ক পিছু ছাড়েনি নজরুলের 'বিদ্রোহী' প্রকাশের পর থেকে। বরং একই সময়ে, 'চৈতী হাওয়া', 'মাধবী প্রলাপ' থেকে বিতর্কের সূত্রপাত হয়ে গিয়েছিল। সজনীকান্ত দাসের নালিশ দেখলাম এই দুই কবিতায় যৌনতার বিষয়ে। 'বিদ্রোহী' প্রকাশের পরে আগুনে ঘি পড়লো। 


হুইটম্যান-এর একটি বই আজীবন ধরে যেমন বেড়ে চলেছে, Song of Myself-এর ছাঁচের মধ্যেই পাখা মেলেছে বাহুবিস্তার করে, ক্রমে ছাঁচ হয়ে উঠেছে আকাশ। তেমনি নজরুলের আজীবনের লেখা সংগুপ্ত হয়ে আছে 'বিদ্রোহী' কবিতায়। 'বিদ্রোহী' ভাবের অ্যালবাট্রস যেন বহুপাখনার কাব্যডানায় ভর করে উড়েছে দূরবর্তী কাব্যসমুদ্রের দিকে। 'বিদ্রোহী' একটি মৌলিক কবিতা, একটি মহাকবিতা। কবিবন্ধু মুজফ্ফর আহমদ বলেছিলেন, "নজরুলের আপন প্রেরণায় রচিত 'বিদ্রোহী' কবিতা বাংলা সাহিত্যে একক কবিতা। সব দোষ-ত্রুটি সত্বেও এই কবিতা বাংলা সাহিত্যে স্থায়িত্ব লাভ করবে।" (স্মৃতিকথা, পৃষ্ঠা ২৫১) ‘বিদ্রোহীনজরুল-কাব্যের অণুবিশ্ব। আব্দুল মান্নান সৈয়দের এই বোধ অযৌক্তিক নয়। আবার, মঞ্জুভাষ মিত্র বললেন, "বিদ্রোহী কবিতাটিকে সমগ্র নজরুল-কাব্যের কেন্দ্রীয় কবিতা বলা যায়। নজরুলের কাব্যদর্শন জীবনদর্শন এইখানে তীব্র লিরিকধর্মী কবিতার ঘনসারে প্রকাশিত হয়েছে।"


এমন সামগ্রিক বোধের কবিতা বাংলা সাহিত্যে দ্বিতীয়টি নেই। দ্রোহ প্রেম যে এই আত্ম-উজ্জীবনী কবিতায় এক সূত্রে বাঁধা পড়লো, রৌদ্র বীর করুণ মধুর অশান্ত প্রশান্ত নানা রসের অনুষঙ্গে নিজেকে জানান দিলো, বিশ্বজনের কল্যাণপ্রতিষ্ঠায় তা শুধু ব্যক্তি-আত্মন-এর উজ্জীবনে সীমাবদ্ধ থাকলো না, বিশ্বের যৌবনশক্তিকে জাগিয়ে তুলতে চাইলো, পরাধীন ভারতবর্ষের প্রেক্ষিত সামনে রেখে রচিত হলেও বিশ্ববোধের পরিচয় তুলে ধরলো, নিপীড়িতের ব্যথার ব্যথী হয়ে উঠলো, সেই সঙ্গে যৌবনের আর এক দিক যে প্রেম, সেটিকেও ললিত ভাববৃত্তে ধরে রাখলো, পরবর্তী কালের কাব্যমঞ্জুষা সুবিশাল সঙ্গীত-সাম্রাজ্যের অঙ্গনে বিগলিত হয়ে ঝরে পড়লো, এগুলোই দেখিয়ে দেয় – 'বিদ্রোহী' কবিতাটি নজরুল সাহিত্যের অণুবিশ্ব।

তাঁর 'দোলনচাঁপা', 'ছায়ানট', 'সিন্ধু হিন্দোল', 'চক্রবাক' প্রভৃতি কাব্যের নির্যাস এবং 'সর্বহারা'-'সাম্যবাদী' কাব্যধারাও 'বিদ্রোহী' কবিতার মধ্যে সংগুপ্ত হয়ে আছে। যেমন রয়েছে, 'অগ্নিবীণা' 'বিষের বাঁশী' 'ভাঙ্গার গান' 'প্রলয়-শিখা' 'ফণিমনসা'- রুদ্রমাতন। এমনকি, 'বুলবুল', 'চোখের চাতক', 'চন্দ্রবিন্দু', 'জুলফিকার', 'সুরসাকী', 'গুলবাগিচা', 'গানের মালা' প্রভৃতি গানবইয়ের সঙ্গীতের দীপক রাগিণীভরা ময়ূরপঙ্খীও।


রবীন্দ্রনাথ যেমন আজীবন অরূপের সাধনায় মগ্ন ছিলেনতাঁর কাব্যের মধ্যে 'মানসী-সোনার তরী'- প্রেম প্রকৃতি পর্ব, 'চিত্রা' থেকে বৃহত্তর জনতার সংশ্লেষ-কামনা পর্ব, 'নৈবেদ্য'- অস্ত্রদীক্ষা পর্ব অতিক্রম করে 'শেষের খেয়া' থেকে জীবনদেবতা অধ্যায়, 'গীতাঞ্জলি-গীতিমাল্য-গীতালি'- গানগুলোতে বিগলিত চিত্ত-সমর্পণ অধ্যায়, 'বলাকা' গতিধর্ম থেকে বিশ্বাত্মবোধে উত্তরণ পর্ব, তারপরে শেষদিকে 'পূরবী' থেকে সাধারণ জনজীবনের সামিল হওয়াসবটাই তো বিশ্বকবির অরূপের সন্ধানে যাত্রা। প্রেম, প্রকৃতি, গতিরাগ বিশ্বাত্মবোধসবের দৃষ্টি তাঁর স্ব-আবিষ্কৃত আধ্যাত্ম-রূপটির প্রতি, যাকে তিনি অরূপ বলে অভিহিত করবেন। চিহ্নিত করেছেন রবীন্দ্র কাব্য-সাহিত্যের প্রথম ডি-লিট . ক্ষুদিরাম দাশ, তাঁর 'রবীন্দ্র প্রতিভার পরিচয়' গ্রন্থে।


হুইটম্যান সারা জীবন ধরে তাঁর 'আত্মসঙ্গীত'টি রচনা করে গেছেন; নজরুল শুধু তাঁর 'বিদ্রোহী' কবিতায় ১৫৬ বার 'আমি' উচ্চারণ করেছেন। তাই নিয়ে নানা ব্যঙ্গ, সমালোচনা হয়েছে আরো কিছু বিষয় নিয়েও, 'প্রতিক্রিয়া বিদূষণচলেছে দিনের পর দিন।


হুইটম্যান নিজেরই উদযাপন করেছেন – I celebrate myself, and sing myself, 'আমি নিজেই নিজের উদযাপন করি, নিজেরই গান গাই।'

যে স্বদেশে জন্ম তাঁর, তাঁর পিতামাতা বা পূর্ব পুরুষদের, তার বিপদে তিনি সোচ্চার থাকবেন আমৃত্যু। উচ্চারণ করেন

My tongue, every atom of my blood, form'd from the soil, this air,

Born here of parents born here from parents the same, and their parents the same,

I, now thirty-seven years old, in perfect health begin

Hoping to cease not till death.


Creeds and schools in abeyance,

Retiring back a while sufficed at what they are, but never forgotten,

I harbor for good or bad, I permit to speak at every hazard,

Nature without check with original energy.


"আমার ভাষা, রক্তের প্রতিটি অণুকণা, এই মাটি, এই বাতাস থেকে

জন্মেছে, জন্মেছে আমার পিতামাতা, একই ভাবে তাদের পিতামাতা থেকে, একই রূপে তাদেরও পিতামাতা থেকে,

আমি এখন সাঁইত্রিশ বছরের সুঠামদেহী যুবক

মৃত্যুর আগে পর্যন্ত না থামার আশায় থাকছি।


ধর্মাচার আর ইস্কুল এখন স্থগিত,

নাহয় কিছুক্ষণ পিছিয়ে গিয়ে থামি, সেগুলো যে কী! কক্ষনো ভোলা যায় না,

ভালো মন্দ যাই হোক, সকল ঝঞ্ঝাটে কথা বলবো,

প্রতিরোধহীন স্বভাবের আসল শক্তির জোরে।

(অনুবাদ আমার)


মনে পড়ছে না কি, 'বিদ্রোহী' কবিতার শেষ পংক্তিগুলি

'আমি সেই দিন হব শান্ত

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না।

অত্যাচারীর খড়গকৃপাণ ভীম রণভূমি রণিবে না'?

প্রতিরোধহীন স্বভাবের মৌল শক্তির জোর, Nature without check with original energy – দুই কবির এখানে মিল। এখানেই বেপরোয়া বিদ্রোহীর কবি, স্বদেশের জন্য, ব্রিটিশশক্তির হাত থেকে স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য, তার থেকে তাবৎ শোষিত নিপীড়িতের জন্য; যেমন হুইটম্যান স্বভাবের মৌল শক্তির জোরে অপ্রতিরোধ্য হয়েছেন সিভিল ওয়ার বিধ্বস্ত আমেরিকার দাসমুক্তি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য।


আর, যে যৌনতা নিয়ে সমকালে দুই কবিই সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন, সেখানে হয়তো মাত্রাগত পার্থক্য আছে। দুটি কবিতা (অংশ) পাঠ করি :


) ONE'S-SELF I SING.


ONE'S-SELF I sing, a simple separate person,

Yet utter the word Democratic, the word En-Masse.


Of physiology from top to toe I sing,

Not physiognomy alone nor brain alone is worthy for

the Muse, I say the Form complete is worthier far,

The Female equally with the Male I sing.


Of Life immense in passion, pulse, and power,

Cheerful, for freest action form'd under the laws divine,

The Modern Man I sing.


"কারও আমিত্বের গান গাই আমি


আমি জনৈকের আমিত্বের গান গাই, এক সরল আলাদা মানুষ,

তবু, সম্মিলিত চিৎকার ওঠে গণতান্ত্রিক শব্দটির


আপাদমস্তক শারীরবিদ্যার গান গাই আমি

এই জাদুপ্রাসাদটির যোগ্যই নয় শুধু দেহতত্ত্ব বা শুধুই মস্তিষ্ক

আমি বলি, সম্পূর্ণ রূপটি অনে- দূরে

নারী তো পুরুষের সঙ্গে সমানইএই গান গাই


আবেগে, স্পন্দনে, শক্তিতে বিশাল যে জীবন

প্রফুল্ল, স্বর্গীয় বিধানের ছায়ায় যে মুক্ততম সক্রিয়তার জন্ম হয়,

আধুনিক মানুষ আমি সেই গান গাই।"


) This is the female form,

A divine nimbus exhales from it from head to foot,

It attracts with fierce undeniable attraction,

I am drawn by its breath as if I were no more than a helpless vapor, all falls aside but myself and it,

Books, art, religion, time, the visible and solid earth, and what was expected of heaven or fear’d of hell, are now consumed, 

(I Sing the Body Electric, 5th phase of the poem)


"এই হচ্ছে নারী-শরীর,

একটি স্বর্গীয় জ্যোতিশ্চক্র-ছটা নির্গত করছে এর আপাদমস্তক

এর উগ্র অনস্বীকার্য আকর্ষণ টান দিচ্ছে,

এর নিঃশ্বাস আমাকে টেনে নিচ্ছে যেন অসহায় বাষ্প ছাড়া আমি আর  কিছু নই,

সব পড়ে রইলো একটেরে; রইলাম শুধু আমি আর সে!


বইপত্র, শিল্পকলা, ধর্ম, সময়, দৃশ্যমান নিরেট পৃথিবী এবং প্রত্যাশার স্বর্গ বা 

নরকের ভয়, সবটাই নশ্বর এখন!"

[আমি বিদ্যুল্লতা শরীরের গান গাই, কবিতার ৫ম পর্ব]


কবিতার নাম - 'আমি বিদ্যুল্লতা শরীরের গান গাই'; বিদ্যুতের মতো তীব্র আকর্ষণী শরীর, টান যেমন, আবার ঝটকাও যার অন্তর্লীন বৈশিষ্ট্য! আকর্ষণে নিলীন করে দেবার মতো অবশ-সঞ্চারী, যেন চরিতার্থতায় আত্মলোপ মৃত্যুর মতন!

কী অপরূপ আকর্ষণ! অথচ কী নির্মল এই আবেশ-মাখানো দুর্বার উত্তেজনা! সমকালে কিছু সমালোচনা হলেও আধুনিক পৃথিবী এই মদির আকর্ষণ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেনি। নারী-শরীরের জ্যোতির্বলয়ে কামনামদির এই প্রেম। 


পতিতা-সংসর্গেও হুইটম্যান পবিত্রতা সন্ধান করেন যখন, কবির সঙ্গে সাক্ষাতের যোগ্য হয়ে উপস্থিত হবার জন্য উপযুক্ত প্রস্তুতির সময় দেন তাকে এবং আপন মনোবাঞ্ছার অনুকূলে তার প্রস্তুতি মনোমতো হয়ে ওঠে যখন – 'be patient and perfect’ – 'ধৈর্যশীলা উৎকর্ষতায় সম্পূর্ণ' হয় যখন, তখন কবি তাকে তাৎপর্যবাহী ভঙ্গিমায় salute জানান। বলেন – ‘I salute you with a significant look, that you do not forget me.’-- 'এমন দিব্য ভঙ্গিমায় কুর্নিশ জানাই তোমাকে, যাতে তুমি আমাকে ভুলতে না পারো।'


কী অপরূপ গরিমাময় এই আসঙ্গ-আশ্লেষ! নির্মেদ গদ্যের চালেও বিচ্ছুরিত হচ্ছে কী নান্দনিক উদ্ভাস


কবিতাটি এই


''এক সাধারণ পতিতার প্রতি!'

.

শান্ত থাকো প্রতিভাময়ী, আমার সঙ্গে স্বচ্ছন্দ হওআমি ওয়াল্ট

হুইটম্যান, প্রকৃতির মতোই উদার এবং তৃষ্ণার্ত।

যতক্ষণ না সূর্য তোমাকে ছেড়ে দেয়, আমি তা কি পারি

যতক্ষণ না জল তোমাকে উদ্ভাসিত করতে অস্বীকার করে, আর

পাতাগুলি মর্মর ধ্বনি তুলতে তোমার জন্য, আমার কথার উদ্ভাস আর মর্মর তান  

তা কি অস্বীকার করতে পারে!

.

মেয়ে! তোমার সঙ্গে কথা আছে, একটি কাজআর আমি

তোমাকে কাজ দিই, তুমি আমার সঙ্গে মিলিত হবার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠো

আর আমার আসা পর্যন্ত ধৈর্য্যশীলা সম্পূর্ণা হয়ে থাকো।

.

ঠিক তখনই, এমন দিব্য ভঙ্গিমায় আমি তোমাকে কুর্নিশ জানাই,

যাতে তুমি আমাকে ভুলতে না পারো।"


To a Common Prostitute.


1.

BE composed—be at ease with me—I am Walt

Whitman, liberal and lusty as Nature,

Not till the sun excludes you, do I exclude you,

Not till the waters refuse to glisten for you, and the

leaves to rustle for you, do my words refuse to

glisten and rustle for you.


2.

My girl, I appoint with you an appointment—and I

charge you that you make preparation to be

worthy to meet me,

And I charge you that you be patient and perfect till

I come.


3.

Till then, I salute you with a significant look, that

you do not forget me.


নজরুলের 'অনামিকা' (সিন্ধু-হিন্দোল) কবিতায় দেখা যাবে দুঃসাহসী দেহ-সম্ভোগী প্রেমিকের কামনা-মদিরতার ছবি। অস্থির দুরন্ত সম্ভোগের চিত্র। নীতি-নৈতিকতার আবডালটুকু রাখার সচেতন চেষ্টাটাও সেখানে থাকেনি। নিন্দা-প্রশংসার ধার-না-ধারা প্রেমমদিরতার কবিতা '-নামিকা' প্রেমিকা কবির মানসসঙ্গিনী, যে প্রেয়সী কবির জীবনে কখনো আসেইনি, নামহীনা '-নামিকা' সেই স্বপ্ন-সহচরীরই বন্দনাগান কবিতা। তবে, এই প্রেমভাবনায়  বিভিন্ন কবির অনুভবে তার প্রকাশে পার্থক্য আছে। এখানে রবীন্দ্রনাথের শরীর-অতিক্রমী 'নিকষিত হেম' রোমান্টিকতা নয়, দেহবাদের কবি বলে কথিত মোহিতলালের প্রৌঢ়-প্রজ্ঞার গাঢ়-গম্ভীর উপভোগের কাম-প্রেমের দার্শনিক প্রতীতি নয়, বুদ্ধদেব বসুর তারুণ্যদীপ্ত উতলা কাম-নির্যাসের রোমান্টিকতা নয়; নজরুলের কবিতায় একেবারে বিপরীতে-চলা সুদূরকে কাছে টেনে আনা, যাতে কামনার জগৎটি আরো তীব্র লেলিহান হয়ে ওঠে। শিল্পের দোহাই পেড়ে কাম থেকে চুঁয়ে-পড়া স্বাদটুকু ছেঁকে নেওয়া নয়, মোহিতলালের প্রৌঢ় প্রজ্ঞাকে যেন অট্টহাস্যে বিদীর্ণ করে তাত্ত্বিকতাকে বিসর্জন দিয়ে নীতি-নৈতিকতার সব রকম সংস্কার উলটপালট করা বলিষ্ঠ দেহভোগের কবিতা এটি।  প্রেমে বহুচারিতা-বিরোধী একনিষ্ঠতা এখানে নেই; বহুচারিতার গ্লানি-ভাবনাকে এমন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া দম্ভোক্তি সত্যিই অভিনব। কারণ

'প্রেম এক প্রেমিকা সে বহু,

বহু পাত্রে ঢেলে পিব সেই প্রেম – 

সে শরাব লোহু

তোমারে করিব পান, অনামিকা, শত কামনায় 

ভৃঙ্গারে, গেলাসে কভু, কভু পেয়ালায়।'


কখনও ভৃঙ্গারে বা ঝারি-স্নানের ঝিরিঝিরি শ্যাম্পেনের আলতো ছোঁয়ায়, কখনও গেলাসে পান ঢকঢকিয়ে, কখনও পেয়ালায় তারিয়ে চুমুক দিয়ে দিয়েএইভাবে শত কামনায় কবি প্রেমের শরাব-লোহু পান করবেন। পান করবার নানা রূপ ভঙ্গিমার ছায়াদৃশ্য দেখা গেল। অভিনীত হয়ে গেল!


আমেরিকার সাহিত্যধারায় হুইটম্যান সে অর্থে আধুনিক না হওয়া সত্ত্বেও শ্রদ্ধার আসন পেয়েছেন তাঁর স্পষ্ট অকপট নির্মেদ 'আমি'-ভাবনার উচ্চারণে। তেমনি, রবীন্দ্রনাথের ভাবনাধারাকে পুরোপুরি বিসর্জন না দিলেও নজরুলও আধুনিক কাব্যধারার কল্লোল গোষ্ঠীর একজন হতে পেরেছেন। 'মুক্ততম সক্রিয়তা' আর 'আবেগে, স্পন্দনে, শক্তিতে বিশাল যে জীবন প্রফুল্ল,'–সেই বিশাল বলিষ্ঠ চূড়ান্ত স্বাধীন জীবনবোধের দুই কবিকে, হুইটম্যান নজরুলকে, বিশেষ আসনে বসিয়েছে। আবেগ, স্পন্দন শক্তির আধারে আধারিত মহাজীবনের কবি।

Of Life immense in passion, pulse, and power,

Cheerful, for freest action form'd under the laws divine,

নজরুলও উদ্দাম প্রেমের কথা বলেছেন

আমি    বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি,

আমি   ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম-উদ্দাম আমি ধন্যি!--


আর, বাংলা কবিতার রাজ্যে দীন সাধারণ, কঠোর বাস্তবের ছবি নগণ্যের অভিষেক-প্রশ্নে নজরুল প্রসঙ্গের দায় আমরা না নিয়েও বলতে পারি, কল্লোল গোষ্ঠীর বা বিশ শতকের তিরিশের দশকের বাংলা কাব্য-আন্দোলনের যুগ-জিজ্ঞাসার নীতিমালায় নজরুলের অবদান কোন অংশে কম নয়। কী কাম যৌনতা, কী সর্বহারা কৃষাণ শ্রমিক, কী চিরবঞ্চিতা নারীর স্বাধিকার, এমনকি, চোর-ডাকাত, পাপী বারাঙ্গনাকিছুই তাঁর প্রেমবৃত্তের বাইরে যায় না। এককথায় মানুষ মাত্রেই তাঁর মনোযোগের ক্ষেত্র। 


রবীন্দ্রনাথের 'পুনশ্চ'(১৯৩২)-পরবর্তী কবিতায় উজ্জ্বলকুমার মজুমদার তাঁর 'বাংলা কাব্যে পাশ্চাত্য প্রভাব' গ্রন্থে হুইটম্যানীয় প্রভাবের ইঙ্গিত দিয়েছেন:

…" প্রকাশিত হলো পুনশ্চ (১৯৩২) এই কাব্যে কবি বিষয়ের দিক থেকে যেমন নির্বিচার, বাঁধাধরা ছন্দের প্রতি কবির অপক্ষপাতের পিছনে কবির হুইটম্যানীয় বিষয়ের ব্যাপারে একাধারে remarkable international. কাব্যের পক্ষে কিছুই অবহেলার বস্তু ছিল না তাঁর কাছে। Felon, slave, prostitute, diseased, healthy, beautiful সমস্তই তাঁর কাব্যের বিষয়।হুইটম্যান সাধারণ মানুষের cruel, hoggish, beastly স্বভাবের মধ্যেও তাঁর আধ্যাত্মিকতাকে স্বীকার করেছিলেন। তাঁর বৃদ্ধ বয়সের এক শিষ্য হোরেস্ট্রবেলকে হুইটম্যান লিখেছিলেন : 'Everything comes out of the dirt – everything comes out of the people – not university people just people.'' (তদেব, প্রবন্ধরবীন্দ্রনাথ)


হুইটম্যানের এই গণমানস সংযোগের আদর্শ রবীন্দ্রনাথকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছিল হয়তো। কিন্তু মনে রাখতে হবে, 'এই গণমানবিক চেতনা থেকে নজরুলের নিপীড়িত বিশ্বমানবচেতনা রবীন্দ্রনাথকে আকুল করে তোলে।' (রবীন্দ্রনাথ নজরুল ইসলাম, প্রবন্ধশাহাবুদ্দীন আহমদ) রবীন্দ্রনাথের 'শিশুতীর্থ' কবিতা ইউরোপের ফ্যাশন প্লে নাটক দেখে The Child নামের ইংরেজি কবিতা লেখেন রবীন্দ্রনাথ। পরে তারই অনুবাদ -কবিতাটি, ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তরিত হলেও ক্লাসিক মহিমায় কবিতাটি মহিমান্বিত। শিশুতীর্থের কয়েকটি চরণে মানবের জয় উচ্চারিত হয়েছে। এবং ভাষারূপেও হুইটম্যানের সুন্দর-অসুন্দরের একাকার রূপ – 'রাজা এবং ভিক্ষু,/ সাধু এবং পাপী, জ্ঞানী এবং মুঢ়', এমনই প্রয়োগ। হুইটম্যানেরই মতো – felon, slave, prostitute, diseased, fealthy, beautiful.


"জয় হোক মানুষের ওই নবজাতকের ওই চিরজীবিতের।

সকলে জানু পেতে বসলো, রাজা এবং ভিক্ষু,

সাধু এবং পাপী, জ্ঞানী এবং মূঢ় ;

উচ্চস্বরে ঘোষণা করলে : জয় হোক মানুষের।

ওই নবজাতকের ওই চিরজীবিতের।"


১৯৩৫- রবীন্দ্রনাথ -কবিতা লেখার অনেক আগেই নজরুল 'মানব-বিজয় কেতন' উড়িয়ে দিয়েছেন, দেড় দশক আগে, ১৯২১- ডিসেম্বরে লেখা 'বিদ্রোহী' কবিতাতেযার 'ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর', যে উড়িয়ে দিয়েছে 'বিশ্ব-তোরণে বৈজয়ন্তী, মানব-বিজয় কেতন।' কিংবা 'মানুষ' (সাম্যবাদী, ১৯২৫) কবিতায়চণ্ডাল, চাষা, রাখাল, ভিখারী, সম্রাট।


' কে? চণ্ডাল? চমকাও কেন নহে ঘৃণ্যজীব!

ওই হতে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব।

 …

চাষা বলে কর ঘৃণা

দে'খো, চাষারূপে লুকায়ে জনক বলরাম এলো কিনা!

যত নবী ছিল মেষের রাখাল, তারাও ধরিল হাল।

তারাই আনিল অমর বাণীযা আছে, রবে চিরকাল।'


আসলে, মানুষের মহিমা বর্ণনা করছেন তিনি। 


'হেসো না বন্ধু! আমার আমি সে কত অতল অসীম

আমিই কি জানি, কে জানে, কে আছে আমাতে মহামহিম!’

কিংবা

'কে তোমায় বলে বারাঙ্গনা, মা, কে দেয় থুতু -গায়ে?/

হয়তো তোমায় স্তন্য দিয়াছে সীতা-সম সতী মায়ে।'

অথবা,

নারীর বিরহে, নারীর মিলনে, নর পেল কবি-প্রাণ,

যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।

নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে 

জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে!’ (নারী)


এই 'মহামানবের মহাশিশু', আসলেই যে 'আমাতে মহামহিম,' সেই নির্বিশেষ মানুষকেই বরণ করেছেন কবি। বিদ্রোহী সেই মহাজীবনের মহাকবিতা। আত্মনের অবিসংবাদিত জয়বার্তা। আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল যে বলেছিলেন – 

'খুদী কো কর বুলন্দ ইতনা কে 

হর তকদীর সে পহলে 

খুদ খুদা বন্দে সে পুছে

বতা তেরে রেজা কেয়া হ্যায়!' 

– 'আত্মনকে এমন বলিষ্ঠ করে তোল, যেন প্রতিটি সংঘটনের (এখানে ভাগ্যনির্মাণ বা পুরস্কার প্রদান) আগে স্বয়ং বিধাতাই তোকে জিজ্ঞেস করেন, বল, তুই কিসে সন্তুষ্ট!' 

এমনই আত্মনের জাগরণ 'বিদ্রোহী' কবিতায়। 


এর ভাব যে-গভীরতা উত্তুঙ্গতায় ধরা পড়েছে, তাতে নানা আপাত-বৈপরীত্যএক সুতোয় বাঁধা পড়লো।   দ্রোহভাবনা  বা রুদ্ররূপের কেন্দ্রে রইলো প্রেম সুর, একাধারে দুরন্ত দুর্বার ললিত কোমল, দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ায় আগুন জল, প্রভু দাস, দেব অসুর, রুদ্রতা কোমলতা, রোষ প্রেম, শব্দনির্মাণের অভিনবত্ব, সাহস ধ্বনি-গাম্ভীর্যপুরাণ কথার প্রয়োগ নৈপুণ্য, কবিতা-রূপের বিন্যাসে স্তবকবন্ধ, ছন্দ-সৌন্দর্যের অভিনবত্ব আর, কাব্যভাষার স্পষ্টতা : স্পষ্টতার কাব্যরূপএখানেও অভিনবত্ব ; ধারাগত ভাষা প্রয়োগের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। 


 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন