কবিদের বিবেচনার জন্য
প্রতিরোধের কবিতা কোথায়,
সম্মানজনক অগ্রাহ্য করার কবিতা
যা ভয় পায় না পেশাদার রাজনীতিকদের আর ব্যবসায়ীদের মিথ্যাকে,
সম্মান করে না সাংবাদিকদের যারা লেখে
আমলাদের পছন্দমতো আর কথা বলে শিক্ষিত চিন্তা ব্যতিরেকে
দ্বিতীয়বার খোঁজ না করে অথবা বহিঃপৃষ্ঠের নিচে প্রশ্ন না করে
যুদ্ধের আলাপ যা দাবি করে?
সংশয় আর সন্দেহের কবিতা কোথায়
যা রাষ্ট্র, ধর্মযাজক আর পুরোহিতদের কাজে লাগে না,
কাজে লাগে না সুন্দর মানুষদের আর গভীর রাতে দেওয়া কথার,
দায়বদ্ধ নয় প্রভাব, অক্ষমতা আর বিদ্যায়তনসম্মত বিদূষকবাণীর কাছে?
ভবিতব্য
আগ্নেয়গিরিদের আর সময়হারা বছরগুলির নিচে লক্ষ্যের মধ্যে আর
নিচুস্বরের আওতায়। কোণাগুলি ঘুরে, গভীর গুহাগুলিতে
ভুল বোঝা আর অনেকসময় অর্থহীন শব্দের মাঝখানে।
কাটাছেঁড়া ভিক্ষুক, বেআইনি বেশ্যাদালাল আর বেশ্যারা। নবজীবন দাও কাজকে।
নীল দাগে দাগিয়ে নাও তোমাদের দূরত্ব। এসো মাটি থেকে মাথাতোলা মানুষেরা
ঘনকালো আর প্রস্তুত, এসো রোদে পোড়া নারীরা চলমান শিকড়সংস্কৃতি।
করো যা তোমাদের করবার কথা, যা তোমরা করবে বলেছো
যা অসম্ভব তা নয়, নয় যা কল্পনাশূন্য,
আসল বলে নকল নয়, আর নিশ্চয়ই
ইউরোপের সুরে তেঁতো গান নয়। শক্ত করে ধরো,
করো যা প্রয়োজন, যা সম্ভব, করো যা ঠিক তাই সরল
বলো ব্রতের কথা আর নতুন অর্থ করো ভাগ্যের
দেশ আর আত্মবোধ প্রতিষ্ঠা করো আমাদের জাতির মনে
যা প্রত্যাশিত তাই করো, করো যা সব মানুষ করে।
মুখ ফিরিয়ে দাও ধ্বংসের। ধরো আগামীকালগুলিকে।
পালটে যাও
পালটে যাও,
চলো নিজেদের জন্য যাওয়া যাক
দুটো চোয়ালই এখন ভেঙ্গে গেছে।
পালটে যাও,
কোণার ডান্ডাটা পেরিয়ে যাও
তোমার ফাঁকটা তোমাকে সেই চট করে উঁচু যা তার উপরে ওঠাক।
পালটে যাও,
যে দাঁতখোঁচানোটা চুষছ সেটা
একদিন ছিল একটা গাছের গুঁড়ি।
পালটে যাও,
আর আমরা যেভাবে আমাদের বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়েছি তার থেকে
তোমার সন্তান তোমার দিকে অন্য চোখে তাকাবে
কালোনারী
কালোনারী নিজের সংজ্ঞা দেবে স্বাভাবিকভাবে। করবে
কথাবলা হাঁটা বাঁচা আর ভালবাসবে তার নিজের প্রতিকৃতিগুলিকে। তার
রূপ হবে। হয়ে ওঠাই একমাত্র উপায়
হয়ে ওঠার জন্য। কালোপুরুষ তাকে গ্রহণ করো। তোমার্ সঙ্গীতের প্রয়োজন নেই
দেহ সঞ্চালনের জন্য; তার দিকে তোমা্র এগিয়ে যাওয়াই
সঙ্গীত। আর সে শুধু নাচবে না, তার চেয়ে বেশি করবে।
[হাকি মধুবুটি (ডন লী)
যখন তিনি খুব ছোট তখনই বাবা তাঁর মাকে আর তাঁকে ফেলে চলে গেছিলেন। অগত্যা মা যৌনকর্মী। চোদ্দ বছর বয়সে সেই মা তাঁকে রিচার্ড রাইটের ‘দ্য নেটিভ সান’ (The Native Son) পড়তে বলেছিলেন। লাইব্রেরিতে গিয়ে বইটি পড়া শুরু করে সারারাত জেগে তিনি সেই বই শেষ করেন। এখান থেকেই তাঁর কৃষ্ণচেতনার শুরু। থাবিটি লুইসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে সারা পৃথিবী জুড়ে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য এক রাজনৈতিক পদ্ধতি। কিন্তু এই আধিপত্য এমনই স্বাভাবিক প্রকৃতির নিয়ম বলে মনে করা হয় যে এর রাজনৈতিক দিক সম্পর্কে কেউ ভাবেন না। হাকি মধুবুটি তাঁর কবিতা ও গদ্যরচনায় এই বিশ্বজোড়া শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের রাজনীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা আনবার চেষ্টা করেছেন।
১৯৪২ সালে আমেরিকার আরকানস-র লিটল রক-এ তাঁর জন্ম হয় কিন্তু এরপরই তাঁর মা তাঁকে মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরে নিয়ে যান। কিন্তু তাঁর অল্প বয়সেই মা হঠাৎ খুন হয়ে গেলে তিনি শিকাগোতে চলে যান। তাঁর আসল নাম ছিল ডন,এল,লী, কিন্তু নিজের জাতীয় শিকড় খুঁজতে ১৯৭৪ সালে আফ্রিকা গিয়ে তিনি তার নাম পালটে ‘হাকি মধুবুটি’ রাখেন। সোয়াহিলি ভাষায় এই নামের অর্থ ‘যথার্থ ন্যায়’। হাইস্কুল থেকে পাশ করে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং সেই দায়িত্ব শেষ হলে শিকাগোতে ফিরে এসে কৃষ্ণ সংস্কৃতির জগতে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন কবি।
কবি গোয়েন্ডোলিন ব্রুকস তাঁর জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিলেন। তাঁকে তিনি শিক্ষাগুরু বলেই মানতেন। ব্রুকসের উৎসাহেই তিনি ১৯৬৬ সালে তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘কালো ভাবো’ (Think Black) প্রকাশ করেন। প্রকাশক না পেয়ে তিনি নিজেই সে বই ছাপতে বাধ্য হন। পরের বছর একটি অ্যাপার্টমেন্টের বেসমেন্টে দুজন সহকর্মীর সঙ্গে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রকাশনা সংস্থা থার্ড ওয়র্ল্ড প্রেস গঠন করেন। আফ্রিকান-আমেরিকান সাহিত্যজগতে এ এক অসামান্য অবদান।
আপাতত তিনি শিকাগো স্টেট ইউনিভার্সিটির গোয়েন্ডোলিন ব্রুকস সেন্টারের পরিচালক। এখানেই প্রতিবছর জাতীয় কৃষ্ণাঙ্গ লেখক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অজস্র কবিতা ও গদ্যগ্রন্থের লেখক মধুবুটি অনেক সম্মান পেয়েছেন, কিন্তু তাঁর সম্বন্ধে একটা বড় কথা এই যে তিনি কখনও কোনো নামী প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁর বই বের করেননি।]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন