অনুগত কুত্তাটা যা দেখেছিল
(শীতের একটা দৃশ্য
মিসেস পার্সি জ্যাকসনকে উৎসর্গীকৃত)
(১)
ধবধবে সাদা সাতটি ময়ূর কেল্লার দেওয়াল-ঘেঁষা
উঁচু গাছগুলোর ডালে বসা, পর্দা হয়েছে গোধূলির আধেক আঁধার;
কমলা-রঙা আকাশ, উঁচু দেওয়ালের বেগুনি-রঙা অন্তরাল,
এই গোধূলিতে নালা ভরে আছে মৃত্যুর রুপোলি রঙে:
তুমি শুধু দূরে, অনেক দূরে।
তবুও আমি দেখি পর্বতের অনন্ত সারি,
ছোটো ছোটো আলোর কণা অন্ধকার ভেদ করে জ্বলে,
দপদপ, দপদপ — মাইলের পর মাইল বিস্তৃত ওই জলাভূমি;
কুয়াশার এক ফিনফিনে আস্তরণ নীল হয়ে ঝিলমিল করে
অন্ধকারের মাথার উপর।
আমি দেখি সাগরতটের বাঁক, শামুকের ধূসর খোলা
গোধূলি, আঁধার আর ছোট্ট সেই গ্রাম
আর আগুনের পাশে একা বসে থাকা—তুমি।
(২)
আমার চারপাশে বি-কোম্পানির দুশো চল্লিশ সেনা,
মাটি-রঙা;
নিজেদের কাজে মগ্ন,
মানুষ মারার কৌশলের ক্লান্ত অনুশীলনের ফাঁকে
মাঝে মাঝে বিশ্রাম নেয় তারা;
যেমন আমিও বিশ্রাম নিই,
মানুষ মারার কৌশলের অনুশীলনের ফাঁকে।
মাটি আর মাটি-রঙা ওই সৈন্যদের ওপর ঝলসে ওঠে রাইফেলের নলগুলো,
যেন গাছের নীচে জোনাকির উজ্জ্বল চলন,
আমিও মাটি-রঙা —
গাছ আর ময়ূরের নীচে।
ওরা যখন গোধূলির আলোয় আমার মুখোমুখি হয়,
চমকে যায়, শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে স্যালুট ঠোকে, অদৃশ্য যেন।
গার্ডরুমে আটকে থাকা বেয়াল্লিশটি বন্দী
হামাগুড়ি দিতে থাকে দেওয়ালের ছায়ার আড়ালে।
ময়ূরগুলোর নীচে রুটির টুকরো চকচক করতে থাকে—
আর তুমি থাকো দূরে, বহু দূরে।
(৩)
এর পর আমি ভিতরে যাব
একটা পরিষ্কার, সাদা ফুলস্ক্যাপ কাগজে লিখব
গার্ডরুমে আটকে থাকা ওই বেয়াল্লিশটি বন্দীর নাম,
শুধু নাম নয়, তাদের পদমর্যাদা, বাহিনীর নাম্বার;
কোন কর্প্স, কোন কোম্পানি, কী অপরাধ তাদের, কীই-বা শাস্তি,
কারা তাদের বন্দী করেছিল প্রথমে, মন্তব্যের ঘরে ঠিক কী লেখা।
কিন্তু এত কিছুর পরেও আমি দেখি সেই বিস্তৃত কালো পর্বতরাশি,
মাইলের পর মাইল বিস্তৃত আঁধার-মাখা জলাভূমি,
সাগরতটের বাঁক, শামুকের ধূসর খোলা,
সেই ছোট্ট গ্রাম
আর তুমি
একাকিনী বসে আছো আগুনের পাশে।
[ফোর্ড ম্যাডক্স ফোর্ড/Ford Madox Ford (১৮৭৩-১৯৩৯): মর্ডানিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ফোর্ড হারমান ম্যাডক্স হেফার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর নিজের জার্মান পদবীকে ছেঁটে ফেলে নিজেকে ফোর্ড ম্যাডক্স ফোর্ড হিসেবে অভিহিত করা শুরু করেন। ঔপন্যাসিক হিসেবে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করলেও ম্যাডক্স ফোর্ডের বিশিষ্টতা তাঁর সমালোচনা ও সম্পাদকীয় দক্ষতায়। ‘দি ইংলিশ রিভিউ’ আর ‘দ্য ট্রান্সআটলান্টিক রিভিউ’ এই দু’টি বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা তিনি সম্পাদনা করেছেন অত্যন্ত সাফল্যের সাথে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকায় লিখেছেন গুরুত্বপূর্ণ সব উপন্যাস যাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল ‘দ্য গুড সোলজার’। লিখেছেন অসংখ্য কবিতাও যেগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী হলেও আলোচিত হয়েছে কিছুটা দায়সারা ভাবেই। অনেক কবিতাতেই ঘুরে ফিরে এসেছে সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকা, যেমন সেই বিখ্যাত কবিতা ‘অ্যান্টওয়ার্প’। এখানে যুদ্ধের পটভূমিকাতে লেখা “What the Orderly Dog Saw” কবিতাটি অনুবাদ করা হল। হ্যারিয়েট মনরো সম্পাদিত ‘পোয়েট্রি’ পত্রিকার মার্চ, ১৯১৭ সংখ্যায় কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। কবির নাম এখানে দেওয়া ছিল — ফোর্ড ম্যাডক্স হেফার। স্মরণ করা ভালো যে এই বছর-ই কবির জন্মের সার্ধ-শতবর্ষ।]
চমৎকার
উত্তরমুছুন