সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২

মলয় রায়চৌধুরী-র কবিতা

আমার শহর! তাই বুঝি?

অতীত মুছে ফেলার জন্য  তারা সমস্ত ক্ষত লুকিয়ে ফেলেছে

কঠোর আর ধূসর  আমলাতন্ত্রের কাজে মন্ত্রমুগ্ধ মহানগর  

যেভাবে সকলের জিভকে সংলাপের মাধ্যমে পরিচালনা করে

বেলেপাথরেও ফুল ফোটে , হেঁচকির মতো ফিরে-ফিরে আসে, 

এই মহানগর মানুষদের কাঠকয়লায় পরিণত করেছে

হাতে হাতকড়া আর কোমরে দড়িবাঁধা অবস্হায় রাজপথে 

হাঁটিয়েছিল এই মহানগর, শুনেছি শহরটা আমার বাপ-ঠাকুর্দার 

ফারসি ভাষায় লিখতো  তারকাদের প্রয়োজন দূর করার উপায় জানতো

এটা নিয়ে হাহাকার কেন, রাস্তার আলোয় নাচতে  শিখিয়েছে মহানগর 

এর ফুটপাত আমাকে বলেছে প্রতিরোধের আঙ্গিক হলো আলিঙ্গন-শিল্প 

ভিতরে ভিতরে শুনতে শিখেছি

রাতের বিরুদ্ধে নিজেকে সাজানোর ওর সময় নেই

কেননা অনুভব করি ওর উপস্থিতি আমার শিরাকে টাটিয়ে বয়ে চলেছে

রক্তাক্ত সূর্যোদয়কে আড়াল করার জন্য মৃদু কুয়াশা দিয়েছিল

হেঁটেছি চোর-ডাকাত-খুনিদের সঙ্গে — টের পেয়েছি একাকীত্ব–

সবাই বলে,  ‘ওসব ভাবেন কেন? দেখছেন তো যারা দেশোদ্ধারের কথা বলেছিল

কোটি-কোটি টাকা চুরি করে কারাগারে সিমেন্টের মেঝেতে শুচ্ছে’

আমিও রাতের পর রাত কলকাতায় মাথা গুঁজেছি নক্ষত্রের তলায়

গ্রীষ্মের তাপে  পিচ রাস্তায়  আলকাতরার বুদবুদ । উইলিয়াম ব্লেক লিখেছেন তো

আমি প্রতিটি  রাস্তায় ঘুরে বেড়াই, যেখানে পেঁকো গঙ্গা প্রবাহিত হয়

প্রতিটি মুখে আমি দুর্বলতার  দুর্ভোগের চিহ্নগুলো পূরণ করি

প্রতিটি মানুষের প্রতিটি কান্নায়, প্রতিটি শিশুর ভয়ের কান্নায়, 

প্রতিটি কণ্ঠে: প্রতিটি নিষেধাজ্ঞায়, কান্নায় কালো হয়ে যাওয়া  আতঙ্ক

ওহ—একসময়— ঝিঁঝিঁর ডাক আর বজ্রপাত, গর্জন, গঙ্গার ওপারে

বিয়ের হুল্লোড়ে ঢেউ ভেঙে পড়লে যে মাতালরা ধরে নিয়ে যায়

এই মহানগর  কি বহুদিন আগে অপবিত্র হয় নি? না, স্মৃতি: 

কিংবদন্তির ভাঁড়ার ফুরিয়ে গেছে অনেক আগেই  

জানে কোথায় প্রতিটা বাড়ি মানুষের ভয়ে লুকিয়ে

এঁদো গলি চোরেদের মহাহাকিম ঘরকন্না করছে

 

২টি মন্তব্য: