সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২

সুধাংশুরঞ্জন সাহা-র দীর্ঘ কবিতা

কুয়াশাবলয় : তিন

অন্ধকার খুঁড়ে পাই গাঢ় অন্ধকার,
পাণ্ডুলিপি লিখে ফেলি নতুন আবার।
দর্শক দাঁড়িয়ে দেখে নাটকের শেষ,
সমাজ ঘাঁটতে গিয়ে পেয়ে যাই দেশ!
সমাজে ছড়িয়ে আছে নানা প্ররোচনা,
সুযোগ পেলেই রাষ্ট্র তোলে বিষ-ফণা।
আমিও দাঁড়াই এসে সংসার সীমান্তে,
খেয়াঘাট তুলে আনি জীবন জানতে।
জলে জলে নদী ভাসে ঋতুঘনবাণী,
সারা জীবন আমরা এইসব মানি।

জলে জলে প্রবাহিত বহুত্ববাদ কি?
দিনরাত উলু শঙ্খে প্রবল বিপত্তি।
গোধূলিও সেজে ওঠে নানাবিধ সাজে,
অবশেষে মায়াটান খুঁজে পাই কাজে।
স্বপ্নকে ধাওয়া করে মনের বিলাস,
যেদিকে তাকাই শুধু বসন্তবিলাপ।
করমর্দন ছেড়েছি মানুষের সাথে,
পাখি নিয়ে ঘুরি শুধু হাট থেকে হাটে।
কবিতা লিখতে এসে পড়েছি বিপদে,
আলাপে তুমুল ঢেউ অবরুদ্ধ পথে।


মেঘের মনখারাপে বৃষ্টি ঝরে পড়ে,
ঘর গৃহস্থালি নিয়ে ভুগি নানা জ্বরে।
ধানখেতে মাঝে মাঝে পাখি গান ধরে,
পড়ন্ত বিকেলে তবু সূর্য ঢলে পড়ে।
অবয়ব আর রূপে ছিল যত দ্বন্দ্ব,
অভাবের দিন ছিল ততোধিক অন্ধ!
ভালোবাসার জন্যও বিজ্ঞাপন লাগে,
বিশ্বাস আর আবেগ গাঢ় ছিল আগে।
ডায়েরিতে লিখে রাখি আমার হতাশা,
তাই বলে হারাইনি এখনও আশা।

একটি সুর বাজছে পাতার সেতারে,
এখনও কাক এসে বসে কালো তারে।
রাতভর লিখে দেখি অসমাপ্ত চিঠি,
নিজের সাথে নিজের লাগে খিটিমিটি।
আয়নায় চেনামুখ ভীষণ ঝাপসা,
ভেসে ওঠে বলিরেখা অভাবিত দশা।
সব মুখ চুপ ছিল অলস দুপুরে,
বসন্ত আসেনি সেই অসহায়পুরে।
ঘোলাটে আকাশ ঘিরে বিপন্ন ভুবন,
নদী থেকে শুরু করে পাশে ছিল বন।

ফাঁকা মাঠের ভিতর ঘন ছিল রাত,
শীতের কুয়াশা সব করেছিল মাত।
তবু, নানান কৌশলে বোনা হয় বীজ,
ব্যবধান গড়ে ওঠে মেশে যদি বিষ।
পাথর প্রতিমা হয় মানুষের ভুলে,
ইতিহাস লেখা হয় দুঃখ কষ্ট তুলে।
ছায়ার ভিতরে ছায়া দেখে দেখে হাঁটি,
বুকের ভেতর নদী ভাসে পরিপাটি।
বিশ্বাস আর ভরসা গড়ে ভালোবাসা,
অভিমানী বাংলাভাষা আমাদের আশা।

বিপরীতমুখী হয় না নদীর স্রোত,
নদীর মতো জীবন যদি পেতো বোধ।
ইচ্ছে ভাঙে ইচ্ছে গড়ে ইচ্ছে শক্তিধর,
ইচ্ছে এক মস্ত জেদ, বেড়ে ওঠা জ্বর।
ইচ্ছেরা ওড়ে আকাশে পাখির মতোই।
মনকে দেয় চাড়িয়ে অকপট বই।
অগ্নিপথ বেছে নেয় কঠিন ইচ্ছেরা, 
ষড়যন্ত্র মুছে দেয় সুভাষিত জেরা।
পায়ে পায়ে বাজে ভালোবাসার ঘুঙুর,
ইচ্ছে একা ছুটে চলে দূরবর্তী পুর।

ইচ্ছে আমার অনেক দূরদ্বীপমালা,
কী নামে ডাকব তাকে মেঘে মেঘে ঢাকা।
মনের ভিতর তবু হাজার গোলাপ,
নিজের সাথে নিজের অশেষ আলাপ।
বুকের নিভৃতে থাকে তমসার আলো,
ভ্রমণ শেষেই বলি জ্বালো মোম জ্বালো।
প্রশ্নপর্ব শেষে দেখি নিজের হৃদয়,
আমি তো অন্ধ বাউল গানে বিশ্ব জয়।
প্রবল জোয়ারে দেখি শূন্য পারাপার,
মায়াবী আকাশ গায় ভৈরবী আবার।

জানি না কবে ফুরবে জীবনের পালা,
কারা এসে খুলে দেবে হৃদয়ের তালা!
কার্তিকের ভোরে ছিল ভিজে ঘাসগুলি,
অরণ্যে খুঁজে পেলাম রঙ রূপ তুলি।
রডোডেনড্রন ফুটে আছে আশেপাশে,
দিনগুলি রাতগুলি মিটিমিটি হাসে।
ভয়ঙ্কর আলো খেলে জটিল চলনে,
সেই রঙ ছড়িয়েছে শিল্পিত মননে।
তারপর থেমে যাবে সব কোলাহল,
নেমে যাবে সব নদী-উপচানো জল।

একা একা ভাবি ভুল সরণি ধরেছি,
যৌনতাকে কোনোভাবে পোড়ানো যায় কি?
আগুন, আগুন আর আগুনের দিন,
হাত ধরে আছে শুধু জীবনের ঋণ।
সহসা ভোলে না দিক উপেক্ষিত নদী,
সব নদী ফিরে পায় না হারানো গতি।
অবাক দুচোখ ঘিরে খেলা করে আলো,
চোখের আলোয় ভাসে যত আছে কালো।
অচেনা সরণি আছে মানুষের মনে,
মানুষ খুঁজতে গিয়ে ফিরে যায় বনে।

পথে নামলে পথই নিয়ে যায় টেনে,
এপথ সেপথ ঘুরে জীবনকে চেনে।
কুয়াশায় ঢাকা থাকে কিছু জাদুপথ,
অবাধ নদীর মতো জলে যায় মত।
কুয়াশা মানেই শিরশিরে অনুভূতি,
ভিজে মনে করে ফেলি প্রকৃতির স্তুতি।
ঢিমেতালে বয়ে চলে জীবনের স্রোত
উপেক্ষিত মুখে কিছু ছায়া কিছু রোদ।
কোথায় অপেক্ষমান গোপন আগুন,
মেঘকিশোরীকে কিছু না-লেখা ফাগুন।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন