সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২

এই সংখ্যার কবিঃ কবি সুবীর সরকার


 


কবি সুবীর সরকার
সুবীর সরকার নয়ের দশকের গুরুত্বপূর্ণ নাম। কবি উত্তরের লোকজীবনের সাথে জড়িয়ে আছেন তীব্র ভাবে। ত্রিশ বছরের বেশী সময় ধরে কবিতা গদ্য সহ বিভিন্ন ধারায় অনায়াস যাতায়াত  করছেন। পেশায় শিক্ষক। ভালোবাসেন রবিশস্যের খামার বাড়ি, সাদা ঘোড়া আর যৌথ যাপনে চাঁদের আলোয় কবিতার আড্ডা, অনন্ত লোকগান।
জন্ম জানুয়ারী ১৯৭০,কোচবিহার শহরে।
ইতিহাসে স্নাতকোত্তর।সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা।
পেশায় শিক্ষক।
১৯৮৭ থেকে লেখালেখি শুরু।পশ্চিমবঙ্গ,ত্রিপুরা,অসম ও বাংলাদেশের বহু পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন।
কবিতার পাশাপাশী ভুমিলগ্ন জনমানুষের যাপন নিয়ে নিয়মিত গদ্যও লেখেন।রয়েছে কয়েকটি গদ্যের বইও।
প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই 'যাপনচিত্র'।প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৬ এ।




উৎসব
ঘোড়সওয়ারদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই!
নদীমাতৃক এই দেশে পাড় ভাঙছে
                                            নদীর।
 পুরোনো রাস্তার বাঁকে পালকি।
 বিকেলের হাটে হাতপাখা কিনি।
 আমাকে অনুসরণ করে ছাইরঙের পুতুল।
 হাত তুললে দাড়িয়ে পরে এম্বুলেন্স
 চারপাশে হিমঘর।
 মর্গের সামনে সিগারেট খাই।
 রুমালে চোখ মুছছেন আত্মীয় স্বজন।
 গিটার বাজে।
 চালিয়ে দেওয়া হয় গজল।
 সবটাই রোমহর্ষক।
 অনেক বছর পরে দেখা হচ্ছে তোমার সাথে
 পাতলা হয়ে ওঠা ভুরু,কাজল হারানো 
                                                 চোখ!
 পা থেকে খসে পড়ছে হিল।
 শীতের স্টেশন থেকে ফিরি মুড়ি আর বাতাসার
                                                        কাছে
 মৃত্যু আসলে উৎসব,বরফের মত
 ঘোড়সওয়ারদের সাথে আমি মৃত্যুর সম্পর্ক
                                                        খুঁজি!



অপেরা

মৃত বেড়ালের জন্য শোকগাঁথা আমি লিখবো না
বাতাসে আঙুল চালিয়ে আমি দেশ লিখবো না
বরং মজনু ভাই আর তার ঘোড়াটির কথাই
                                                 লিখে ফেলবো
কালপানি একটি প্রাচীন গ্রাম।
সারাদিন দেখি জলের প্রহার।
ঘুমের ভেতর ঘুঙুর।নাচঘর।
মৃত বেড়ালের ছায়ায় পাখিরা তাঁবু 
                                               পাতে।



হেমন্ত

ধান নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ইঁদুর একা একা হেমন্তের
                                                              মাঠে
আয়না ভেঙে যায়।
নদীকূলে বসতবাড়ি।
সন্দেহপ্রবণ হাওয়ায় দেখি মথ,ফড়িং ও
                                               প্রজাপতি।
মায়াদৃশ্যে ম্যাজিক নেই!
উঠোনে ধলা মোরগ। আঙুল ফুলে গেলে হেমন্তের
                                           নিচে বসে থাকি




বাজনা

তুমি বাজনা বাজাবে বলে খুলে এনেছি মৃতের
                                                      হাড়
 ঘোড়া আছে,অশ্বমেধ নেই।
 ঘুঘুর ডানায় যখন রোদ
 আমরা তখন কোন না কোন কর্মসূচি বেছে
                                                        নিই
 বিশ্রাম সেরে একটা ঘরে ফিরবার দুপুর
 ঘামে ভেজা গামছা।
 ধানক্ষেতে জল জমলে উপচে ওঠে
                                                  অভিমান
 ডুব সাঁতারে আছি।অবসর ভেঙে 
                                               অবসাদ।


বাথান

বাথান হারানো মহিষের গল্পে কোন সূত্রধর থাকেন
                                                               না
 বোরলির ঝাঁক।
 পুঁটি মাছের বিস্তারিত হয়ে ওঠা।
 ভোরের আগুনের দিকে দু চারটি মহিষের এগিয়ে
                                                       আসা
 বাথান মৈশাল দোতরা ––– এক ফ্রেমে রাখি।
 এদিকে বাথান খুঁজে নিতে থাকেন গঞ্জদেশের
                                                    মাহুত


নখ ও নেলপালিশ

টেবিলে সাজিয়ে রাখছি মাছের কাঁটা, উলের বল
মাছের কাঁটা নিয়ে পালিয়ে যায় বেড়াল
উলের বল নিয়ে পালিয়ে যায় বেড়াল
নখ ও নেলপালিশ নিয়ে কথা শুরু করি আমরা


চাঁদ

চিবুকে চাঁদ, চাঁদের আলো
আমাদের তাঁবু পুড়ে যাচ্ছে
আমাদের গল্প পুড়ে যাচ্ছে
সিরিজ কবিতায় কুয়াশা জমলে
শিকারিদের ডেকে আনি
                                   আমরা

লাফ

দীর্ঘ লাফের আগে ইদানিং ক্লান্ত লাগে
আকাশে ভোর জাগলে একটু দারুচিনির 
                                                   গন্ধ
আমার তর্জনীতে কোন আক্রোশ নেই
বাড়ি ভেঙে যায়।
বাড়ি বদলে বদলে যায়।
এবং টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই দিন 
                                             কাটে



৪টি মন্তব্য:

  1. প্রত্যেকটাই অসাধারণ

    উত্তরমুছুন
  2. খুব সুন্দর কবিতা গুলি,সাথে ছবি গুলি অন‍্য মাত্রা দিয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  3. সুন্দর লেখা ও ছবি গুলি - সমিত মণ্ডল

    উত্তরমুছুন
  4. বহুদিন পরে সুবীরের কবিতা পড়লাম। আমার খুব পছন্দের কবি। অসাধারণ কবিতা প্রত্যেকটিই।

    উত্তরমুছুন