মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২

দীর্ঘ কবিতা : সুধাংশুরঞ্জন সাহা

কুয়াশাবলয় : এক 

কুয়াশা আমার কাছে শুধু এক নারী,
শীতের শিশির ছাড়া নিঃসঙ্গ বেচারি।
কিছু তার মেঘে থাকে কিছু ধারাপাতে,
কিছু মনে বাসা বাঁধে দিবস ও রাতে।
পাখিঠোঁটে ওড়ে কিছু, কিছু জলে মেশে,
কিছুটা বাতাসে ভাসে বাকিটা আবেশে।
সে অতি বিষম কথা তাকে বলা যায়,
অকপট কথা যত অবাধ্য শোনায়।
ঝড়ের স্বরলিপি কি লিখে রাখা যায়!
সে এক অনন্য ভাষা কুরে কুরে খায়।

ঘাটে নৌকো বাঁধা আছে মানা নেই যেতে,
ইশারায় ডাকে নদী মন খুঁজে পেতে।
হৃদয়ের কাছাকাছি যারা এসেছিল,
ফিরবার পথ তারা কেউ ভেবেছিল?
এ-কথার জবাব কি কেউ ঠিক জানে!
আমিও একা খুঁজেছি সে-কথার মানে।
মেঘের ভেলায় চেপে ঋতু আসে যায়,
অন্য পথ বন্ধ ছিল কপট ছায়ায়।
ছায়া নিয়ে এতো কথা, ভাষা চেনা দায়,
ভাষা নিয়ে ভাসা কথা কে জানতে চায়?

নেমেছে তুমুল বর্ষা রাস্তা ভেসে যায়,
জলে জলে লেখা হবে জনশূন্য রায়!
জল নিয়ে এতো কথা জানে নাকি জল,
জীবনের সবটুকু জল আর জল।
সৃষ্টি জুড়ে যত কথা সব জলময়,
মানুষের মনে তবু জল নিয়ে ভয়!
নদী খায় থতমত দিন যায় ভেসে,
ঢেউয়ের পর ঢেউ ওঠে হেসে হেসে।
নদীও জানে এসব একাকী গোপনে,
কথা নাকি জলে ভাসে গাঢ় ইচ্ছে মনে।

মানুষ জানে না তার নিজের ক্ষমতা,
ইচ্ছেপাখি উড়ে যায় ভুলে সব কথা।
ব্যথা যত কথা বলে সারা দিনরাত,
পাখিরাই গান গেয়ে দিয়েছিল সাথ।
মাঝে মাঝে প্রশ্ন তুলে নির্বাক তাকানো
এতোবড় পৃথিবীর কতটুকু জানো?
আমিও একাকী ভাবি কবিতাযাপন,
পৃথিবীতে কেউ কেউ স্বজন আপন।
চিঠি কিছু এসেছিল প্রিয়জনদের,
তাঁরা সব নাগরিক মেঘের দেশের।

তবুও সেসব চিঠি বুনে দেয় গল্প,
তাঁদের কথাই কানে বাজে অল্প কল্প।
এসব কথা সেভাবে কে আর বুঝবে?
দূর থেকে তোমাকেই নীরবে খুঁজবে।
কফিশপে,ডাকঘরে, কলেজের মোড়ে
ছেলেমেয়েরা ঘুরছে সব জোড়ে জোড়ে।
গল্পকথায় মাপছে মন, আচরণ, 
কারা কোথায় ঘুরছে মনে নিয়ে দ্রোণ!
জল ছুঁতে মন চায় নদী খুঁজে খুঁজে,
বুক জুড়ে তৃষ্ণা কত নিতে চায় বুঝে।

নদীতে সাঁতার কাটি চুপিচুপি একা,
অপেক্ষায় ছিল মন যদি হয় দেখা।
তারপর কী যে হ'লো নদীর ওপারে,
নদী নিয়ে লোককথা শুনি বারে বারে।
তাইতো নদীতে গান আছে, প্রাণ আছে,
দেহমন ছুঁয়ে আছে জলের আভাসে।
আমদের দুঃখ থাকে নদীর সকাশে,
জীবনের গল্প ভাসে শরতের কাশে।
যদিও শরৎ আসে সঙ্গে নিয়ে আলো,
এবার মুছতে হবে আছে যত কালো।

যে আগুন বুনেছিল অনন্ত প্রত্যাশা,
আমাদের ঘিরে আছে ছায়াদের ভাষা।
যে আগুন দাউদাউ পুড়ে যায় একা,
সে-আগুনে পুড়ে পুড়ে আমাদের দেখা।
বাতাসে আগুন ছিল, আগুন মননে,
দাবানলের আগুন ছিল বনে বনে।
আগুন যত পোড়ায়, বেড়ে যায় ক্ষত,
শাসন বসায় দাঁত, ত্বক,মেদে তত।
বিশ্বসংসার ভাবছে, জ্বলুক আগুন,
মনের মাটিতে তবু ফুটুক ফাগুন। 

আমাদের চারিদিকে বিষাদের রঙ,
অপমানে,অভিমানে মুখ ঢাকি বরং।
সাদা পায়রার রঙ তুলিতে উড়ান,
ক্যানভাস জুড়ে খুঁজি শান্তির পুরাণ।
এইভাবে কতদূর যেতে হবে আর?
পায়রার ওড়াউড়ি মাখি বারবার।
এ-যুগের ধর্মকথা মুলতুবি থাক,
ব্রহ্মচর্য,ত্যাগ,সত্য শুনেই অবাক।
নদীর স্রোতের মতো ভাঙছে সংসার,
সহিষ্ণুতা, ধৈর্য, স্থৈর্য হয়েছে অসার।

এ-শহর বেসামাল, নিদ্রা, তন্দ্রা ঘোর,
আত্মবোধ,আত্মস্মৃতি অনুভূতি জোর।
অন্ধকারে ভেসে থাকে মনের অসুখ,
আলো এসে তুলে ধরে সময়ের মুখ।
কখনো দেখিনি যাকে তার ফোন পাই,
মিথ্যে বলে তাকে আমি কীভাবে ফেরাই!
সময় বলাই ছিল বিকেলের দিকে,
হৃদয়ে শূন্যতা বাড়ে, দিন হলে ফিকে।
যাব বলেও ভেবেছি এক এক বার,
দ্বিধা দ্বন্দ্বে নাজেহাল হয়েছি আবার।

বিষাদে মূর্তির মতো চুপচাপ থাকি,
ভালোবাসা ছাড়া আর বাকি সব ফাঁকি।
ছানার জলের মতো ভোর ভোর আলো,
সব কিছু ভুলে আমি খুঁজি শুধু কালো।
কালোর ভিতর আছে আলো রাশি রাশি,
দিনরাত এক করে খুঁজে মরি চাষি।
মানব জমিন চাষ কত যে কঠিন!
সেই কথা ভেবে ভেবে কেটে যায় দিন।
মানুষ জানে না তার অফুরন্ত শক্তি,
না জানার ফলে তার পদে পদে ক্ষতি।

 

৪টি মন্তব্য:

  1. খুব ভালো হয়েছে

    উত্তরমুছুন
  2. ছন্দ দিয়ে কবিতাটাকে সুন্দর বোনা হয়েছে। ভালো লাগলো। - সমরেন্দ্র

    উত্তরমুছুন
  3. খুব সুন্দর লেখা। খুব ভালো লাগলো।

    উত্তরমুছুন
  4. বেশ ভালো। মনোমত।

    উত্তরমুছুন