মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২

এই সংখ্যার কবিঃ কবি ফাল্গুনী ঘোষ

 


কবি ফাল্গুনী ঘোষ

একুশ শতকের শক্তিশালী  দৃপ্ত যে কণ্ঠগুলি সাহিত্যের জন্য অবিরাম জেগে আছেফাল্গুনী ঘোষ তাদের  অন্যতম। জন্ম  মার্চ১৯৭৮ হুগলির কামারপুকুর। কোলকাতায় ২০০৫ থেকে। ২৪ ঘণ্টার লেখক। বিভিন্ন কলেজে ইংরেজি সাহিত্য পড়িয়েছেন বেশ কয়েকটি বছর। বাংলা  ইংরেজি দুটি ভাষাতে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৫টি। প্রধানত লিটল ম্যাগাজিনে লেখেন। পেয়েছেন কবিপত্র হীরক জয়ন্তী সম্মাননা ২০১৮তে। সাহিত্যশিল্পশিক্ষা নিয়ে বক্তৃতা করেন বিভিন্ন সেমিনারে কোলকাতা  কোলকাতার বাইরে। মহাকবিতার অন্যতম লেখক। কবিতা  অন্যান্য লেখার জন্য পেয়েছেন স্বীকৃতি। অনুবাদক হিসেবে পেয়েছেন পরিচিতি। সম্পাদনা করেন ‘চিন্তক’ নামের একটি বাংলা লিটল ম্যাগাজিন। 



আমার কলেজ
আমার প্রিয় কলেজ
প্রতিটি গাছের পাতায় লেখা আমাদের নাম
ফিকে হতে হতে একদিন হারিয়ে ফেলে অস্তিত্বের অনুভব

তার প্রতিটি সবুজ ঘাসে,
শিশিরে লেখা আমারই নাম বিবর্ণ জোছনাসুরেলা
একদিন সেই সব দিনের পান্ডুলিপি
ঘাড়ে করে বয়ে নিয়ে চলি
পাতা উল্টাই​ –––

সেই সব মসীলিপ্ত মানুষগুলি আজ
আমার চেতনার বাইরে পৃথিবীর অন্য কোথাও
নিঃশব্দ নিঃশ্বাসে লীন

আমি আর আমার কলেজ বসে থাকি
উপান্তের শস্য ক্ষেতের মত লাইব্রেরীর বই-এর মত নিশ্চুপ।

অথচ অনেক কাল
সাগরের প্রথিত বালির মতো নিমজ্জিত নিঃসঙ্গ বাঙ্ময়
ঢেউ ওঠে কাল কেটে যায়
প্রিয় কলেজ আমার হৃদয়ে থাকো
এক মায়াবী মাছের মতো



প্রাচীন ভোরের মতো
কখনও কখনও থাকতে হয় একা
একটি ম্রিয়মাণ কাছিমের মতো

আহ্লাদিত আবেগ বুকের মুঠোয় চেপে ধরে
রক্তের গভীর সঞ্চালনে মেপে নিতে হয় ক্ষণ

তারপর দেখে নিতে হয় পরিণতি
স্নিগ্ধ অনলের মতো চোখ জ্বেলে
এই স্বার্থমগ্ন পৃথিবীতে সভ্যতার হারেমে

হে প্রাজ্ঞ বোধিবিন্দু
জ্বালাও আগুন চেতনার চরাচরে
মননের দ্বীপে একটি প্রাচীন ভোরের মতো



একটি অকবিতা

কে আর একা হতে চায়?

কে আর একা হতে চায়?
গভীর মনের দৃপ্ত বিশ্বাসকে
হরিশচন্দ্রের মতো আগলে রেখে
এই ভাঙনের যুগে
কে বা সত্যনিষ্ঠ হতে চায়!

সত্যনিষ্ঠা এক কঠিন বিষয়
তার থেকে ভালো শুধু ক্যামেরা হৈ হুল্লোড়
তথাকথিত বিখ্যাত মুখগুলির সাথে ছবি তুলে বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা!

কিন্তু মায়াবী যাদুকর তিনি
তোমায় আকর্ষণ করেন মোহজালে বন্দী করেন
তুমি সত্যি বোকা
কলসপত্রীর পতঙ্গ!!


সূর্যগুলি

রাতের ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁতে যায়....
আমাদের শুরু হল কাউন্ট ডাউন
রাতটা গভীর গভীরতর হতে হতে কাঁপতে থাকে ঘড়ির কাঁটা
সাগরের ঢেউ যেমন করে দোলাতে থাকে জাহাজের মাস্তুল .... ঢং ঢং ঢং!

আমরা জাহাজ যাত্রীরা সন্ত্রস্ত
প্যালপিটিশন!
ডেকে উঠছে.. কোকিল - না কাক!
সূর্য উঠতে দেরী
তবু আলো ফুটছে ধীরে
সবুজ পাতার নিচে অন্ধকারে

নতুন দিন আসছে
সে সূর্যগুলি ফুটতে
আর বেশী দিন নেই!!


মনে পড়ে

মাঝে মাঝে মনে পড়ে তোমাকে
তোমাকে খুব খুব মনে পড়ে ,
জীবন্ত এক রমণীর অবয়বে
তরুণ ঘাসের উন্মাদ উৎসবে।

স্নিগ্ধ মনের বালিয়াড়ি তৃষিত যৌবনের ফেনা
বিষাদের বল্মীক মেখে মনে পড়ে,
মনে পড়ে যায় নিবিড় চোখের
মগ্ন মৃদঙ্গএকা থাকি যখন হৃদয়ের হরফগুলো কাঁপতে থাকে বাতাসের মর্মরে।

অস্তিত্বের কথা ভাবতে বসলে
মনে হয়  জীবন ক্ষুদ্র এক শলাকা
সাফল্য বা ব্যর্থতা কিছুই প্রকট নয়
সমুদ্রের বিশাল মহাকাল স্রোতে
ভেসে যায় হাত ধরাধরি করে
অবশেষে বিলীন
একটি ছোট্ট বুদবুদের
মতো।







 


৫টি মন্তব্য:

  1. জীবন থেকে চয়ন করা ব্যস্তব অনুধাবনের পঙ্ক্তির সমন্বয়ে সুন্দর কবিতাগুলো ...

    উত্তরমুছুন
  2. প্রতিটি কবিতা পড়ে তৃপ্তি পেলাম কবিতা পাঠের

    উত্তরমুছুন
  3. ভালো থাকুন সবাই। ধন্যবাদ

    উত্তরমুছুন
  4. খুব সুন্দর স্যার।।

    উত্তরমুছুন
  5. ভালো লাগল কবিতাগুলো।

    উত্তরমুছুন